দিবসের ক্ষণে জন্ম নেয় এক নূতন শৈশব।
পাখিদের কলরবে ভূমিষ্ঠ হয় প্রকৃতির চাতালে।


নাড়ির বাঁধন ছিন্ন করে ,
     সুস্থ শিশু বার্তা আনে।
বার্তা আনে শৈশবের,
   বার্তা আনে সুপ্ত ভোরের নিকট বিকশিত কৈশোরের।


অজ্ঞাত খেচরের ন্যায় ডানা মেলে দিতে চায় ,
    তার প্রস্ফুটিত শৈশব।
যেন উড়ে যেতে চায় সে দিগন্তের নীলিমায়।


শৈশবের চিত্র সে বড়ো বিচিত্র কারুশিল্পের ভাঁজে দিনলিপির ইঙ্গিত গড়ে।


ফুটন্ত গরম জলের বাষ্প সদৃশ শৈশবের ইচ্ছেগুলো বাতাসে মিশতে চায়।


শৈশব মাটির ধুলোয় লুটোপুটি খায়,
আবার রবিবারের ছুটিতে রবির সাথে খেলতে যায়।


শৈশব কাঁচের গুলি,লাটাই ঘুড়ি ,
                   আর আঁকিবুকির আস্তাবল,
খেলনা বাটি, কান্নাকাটি
                  নেই যেথা কোনো কর্মফল।


শৈশব এক মস্ত বড় স্বাধীনতা ,
  যেখানে মৃত মনের সকল দীনতা।


যেখানে নেই কোনো সমাজের কোলাহল,
       নেই অফিসের তাড়াহুড়ো
  নিরাশাগুলো যেখানে অস্তাচল
        স্বার্থ যেখানে নব্বই এর বৃদ্ধ বুড়ো।


শৈশবে ওই খেলনাপুতুলে
          অস্ত্রোপচার নিরন্তর ,
  খিদের বালাই নিমেষে পালায়
           দুধের গ্লাসে শিশুর জ্বর।


ধানের শিসে পাল তুলে দেয় ,
         দুরন্ত পায়ে দৌড়ে বেড়ায়
ডুবটি দিয়ে পুকুরজলে
       ক্লান্ত চরণ সাঁতরে চলে।


কাদামাখা অবাধ্য দিনগুলি
          যখন মায়ের বকুনি খায়,
  লাজুক মিথ্যে ঝুলছে তখন
           রান্না ঘরের আটচালায়।


লুকিয়ে লুকিয়ে আম পাড়া
        আর হাতের তালুতে ক্রিকেট বল।
   নতুন নতুন গেঞ্জির ফাঁকে
         আটকে থাকে ঘামের জল।


সেই জলেতেই তৃপ্ত জীবন ,
       মিঠেল বাতাসে তুলছে ঝড়।
হাত দুখানি উদার করে
       মায়ের আঁচলেই শিশুর ঘর।


আজও মনে পড়ে শৈশবের দিনগুলো।
মনে পড়ে বসন্তের স্তব্ধ দুপুরে লুকিয়ে মাঠে খেলতে যাবার কথা।


অসংযত কর্মব্যস্ততার মাঝে জ্বলন্ত বার্ধক্যের প্রথম স্পর্শ যেন শৈশবের শীতল বাতাসের সাথে আলিঙ্গন করে সুধীর হতে চায়।


ফিরে পেতে চায় অতীতের নিমজ্জিত আকাঙ্খাগুলো,
  যা ঐ পথের ধারে ধুলোয় ,কিম্বা নষ্টপ্রায় জীর্ন ঘুড়ির লেজে আটকে আছে আজও।


ফিরে পেতে চায় সেই কাদামাখা বিকেল, যা সূর্যাস্তের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পুকুর পাড়ে প্রাণবন্ত ছিল।


আজ পঞ্চাশে বসন্তের দোরগোড়ায়,
  মন আনচান হাত নাড়ায়।


হাত নাড়ায় অতীতে স্মৃতির টুকরো কাগজগুলো আলগোছে,
     বহু বছর ধরে চাপা পড়ে থাকা ময়লা এবং ধুলো কার্নিশে।


মনে পড়ে সেই ডায়েরিখানা ,
        প্রকৃতির পাতায় যার জাল বোনা।
   নরম নরম ইচ্ছেগুলো,
        যখন উড়িয়ে দিত পথের ধুলো।


বৃষ্টি মুখর ঝিরঝিরে দিন,
     চোখের কিনারে আবেগের ঋন।
হাত দুখানি শূন্যে তুলে ভেজা মেঘের পরশ নিতে চায়।


নিরস বার্ধক্যের নিকট আবদারে
  বলছি বারেবার ,
ফিরিয়ে দাও সেই মুহূর্ত গুলি
   নিয়ে নাও আছে যত শত সিকি ও মাদুলি।


দাও ফিরিয়ে সেই গ্রাম্য
  নীড় অতিদূর সাম্য।
যেথা নিঃশ্বাসে ওড়ে ধুলো,
     শৈশবের দিনগুলো।
    
           *****