আজ সকালে দিনমণি বেশ হাসিখুশি, রাজার মতো মুঠো মুঠো রোদ্দুর ছড়িয়ে দিয়ে চরাচরে, অসীম শূন্যে তিনি যেন খোশমেজাজে।


দুপুর বেলায় লুকিয়ে মেঘের আড়ালে, চৈত্রে যেন ভাদ্রের বৃষ্টি, খেপে খেপে থোকা থোকা বৃষ্টি।


সাদা কালো মেঘ আকাশে,
সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণ আকাশে রং ছড়াচ্ছে,
ঈশ্বর যেন আজ তুলি হাতে মগ্ন চিত্রপটে।


মেঘের সাথে সূর্যের লুকোচুরি খেলা। বেশ চমকপ্রদ। ঈশ্বর যেন নিজের লীলা উপভোগ করছেন।


ঈশ্বর বিশ্বব্রহ্মান্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। ঈশ্বর কবিতা আঁকছেন, কবিতা লিখছেন, কবিতা পাঠ করছেন।
ঈশ্বরের নিত্যদিনের কর্ম। আজ কবিতা দিবস।


গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলার দিকে একডালিয়া-বিবাদীবাগ মিনি। ঈশ্বরের সন্তানরা যাচ্ছেন। বেশ কোলাহল ভেতরে বাইরে। আমিও আছি সাথে।
উষ্ণতা আর্দ্রতা বাতাসে, ঘামের গন্ধের মৌতাতে  কবিতা রচিত হচ্ছে কবির মনে।


ফুটপাতে সুদৃশ্য কাঁচের বাক্সে ফল সাজানো আছে, মাছিরা বাইরে থেকে দেখছে, পাশে কাঁচের নীচে রকমারি মিষ্টি রসগোল্লা পান্তুয়া সন্দেশ। মাছিদের প্রবেশ নিষেধ।


কলকাতার ফুটপাত বিশাল এক ফেরিওয়ালা।


ঈশ্বরের সন্তানরা ঘুরে বেড়াচ্ছে ফুটপাতে। কেউ কেউ ফল খাচ্ছে, কেউ কেউ মিষ্টি, কেউ বা চা বিস্কুট, কেউ বা কচি ডাবের জল। কবিতা দিবসে যেন একটি উৎসব উৎসব ভাব।


কবি হেঁটে বেড়াচ্ছেন এক ফুটপাত থেকে আরেক ফুটপাতে। ঈশ্বরের সন্তানদের দেখছেন। কবির নির্লিপ্ত নিরাসক্ত ভাব। কবি মনের খাতায় কবিতা লিখছেন।


কবি মেট্রোরেলে এসপ্লানেড থেকে কালীঘাট যাচ্ছেন। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ঝা চকচকে পরিবেশ। কবি ভাবছেন একবার যদি ঈশ্বরকে নিয়ে আসা যেত পাতাল রেল ভ্রমণে, নিজের সন্তানদের সৃষ্টি দেখে ঈশ্বর হয়ত খুশি হতেন।


তারপর কবি অটোরিকশা করে বালিগঞ্জের দিকে পাড়ি দিলেন। মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে ঝরে পড়ছে। কবিতা দিবসে কবি বৃষ্টিস্নাত হলেন। কবির খুব ভালো লাগছে, হঠাৎ করে যেন অতীন্দ্রিয় অনুভূতির পরশ।


আজ কবির খুব ইচ্ছে ছিল ট্রাম চড়বেন। কলকাতার ট্রামের দেড়শো বছর হয়েছে। জীবনানন্দ দাশ নাকি ট্রামে চাপা পড়েছিলেন, কবির হঠাৎ মনে পড়ল। কিন্তু না কবি আজ ট্রামের দর্শন পেলেন না।


বিকেল চারটা বেজে ত্রিশ মিনিট। কবি আকাশের দিকে তাকিয়ে বিমুগ্ধ, সাদা মেঘ থেকে সোনালী আভা ঠিকরে বেরুচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন কাঞ্চনজঙ্ঘা, কবি যেন দার্জিলিং-এর টাইগার হিলে দাঁড়িয়ে।


কবিতা দিবসে কবি আজ কোনো কবিতা পাঠের আসরে যান নি। কোনো কবিতা পাঠ করেন নি বা কোনো বক্তৃতা দেন নি।


কবি সারাদিন ঘুরে ঘুরে ঈশ্বরকে খুঁজেছেন। প্রাণভরে ঈশ্বরের সৃষ্টি দেখেছেন, উপভোগ করেছেন। ঈশ্বরের সন্তানদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন, ওদের সাথে মিশেছেন, গল্পগুজব হাসিমস্করা করেছেন।


আজ কবিতা দিবস। কবি আজ কোনো কবিতা পাঠের আসরে যান নি।