বেশ কিছুদিন থেকেই এক অন্তর্লীন ইচ্ছে
জেগে উঠছে মনে। মন যেতে চায় তীর্থে তীর্থস্থানে।


নেতাজির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী এগিয়ে আসছে
সময়ের সিঁড়ি বেয়ে।
চারিদিকে বেশ হৈচৈ হচ্ছে।
বাংলা-দিল্লী রণংদেহী।
ট্যাবলো তরজা চলছে জোরকদমে নিয়ম মেনে।
ইন্ডিয়া গেটে বসবে নেতাজীর মূর্তি।


জয় জওয়ান।
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি। আজাদ হিন্দ ফৌজ।
সিঙ্গাপুরে জন্মেছিল আজাদ হিন্দ সরকার।
ভারতের প্রথম স্বাধীন সরকার।


যাব তীর্থে, তীর্থস্থান দর্শনে
তবে বারাণসী বা পুষ্করে নয় বা অযোধ্যার
রামমন্দিরে নয় বা কলকাতার কালীঘাট বা দক্ষিণেশ্বরেও নয়।


তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে
গতকাল ২২ জানুয়ারি বালিগঞ্জ প্লেস থেকে হাজরা রোড শরৎবোস রোড হয়ে হেঁটে হেঁটে পৌঁছে গেলাম ভবানীপুরের এলগিন রোডে।


দেখলাম নেতাজিভবন নামক হলুদ বাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে। আমার কাঙ্ক্ষিত তীর্থস্থান।
বাড়িটির সম্মুখের ফুটপাতে নেতাজীর আবক্ষ মূর্তি,
তারপাশে শুয়ে আছে ময়লাকাপড়ে এক জননী অভুক্ত শিশুকে কোলে নিয়ে। হায় ভারতবর্ষ!
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে হচ্ছে উৎসব চারিদিকে।


নেতাজির স্বপ্নের স্বাধীনতা,
এখনও নয় কি দূর অস্ত?


পথচলতি এক সদাশয় পান্থজন আবক্ষমূর্তির পাশে দাঁড়ানো আমার একটি ছবি তুলে দিলেন।
এক অমূল্য স্মৃতি স্থায়ী হয়ে গেল মনে।


গেট দিয়ে নেতাজীর বাড়িতে ঢুকলাম।
মনে হল এক অতীন্দ্রিয় নিষ্কলুষ অনুভূতি ধীরে ধীরে দেহমনে ছড়িয়ে পড়ছে।
নেতাজী যেন সামনে দাঁড়িয়ে!


দোতলা থেকে যে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যে গাড়ি
চড়ে নেতাজী বেরিয়ে পড়েছিলেন অজানার উদ্দেশ্যে ভারতের স্বাধীনতা মুঠোয় ভরে নিয়ে আসতে,
দেখলাম সবকিছু। শ্রদ্ধায় ভরে উঠল মনপ্রাণ।


তারপর নতমস্তকে প্রণাম করলাম দেশনায়ক ও তাঁর বীর সৈনিকদের, এক হিন্দু প্রেম কুমার সহগল এক মুসলিম শাহনওয়াজ খান এবং এক শিখ গুরবক্স সিংহ ধিলোঁ যাঁদের বিচার হয়েছিল লালকেল্লায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়ায়।


অশ্রুসিক্ত আঁখি। সুভাষ ঘরে ফিরে নাই। মনে কত প্রশ্ন। সুভাষের আদর্শের পতাকা কি আমরা বহন করছি? নানা প্রশ্ন নিয়ে মনে ধীরে ধীরে নেতাজী ভবন থেকে বেরিয়ে আসি।