মেরেছে মেরেছে.... আবার একটা ছয়,
পরের বলটা নিশ্চয়ই চার হবে,
না দেখিস পরেরটা আবার স্টেপ আউট করে বাপি বাড়ি যা।
ছেলেটাই পারবে হেরে যাওয়া ম্যাচটাকে ছিনিয়ে আনতে।
আজকে ভারত ম্যাচ জিতবেই।


পাড়ায় পাড়ায়,ক্লাবে ক্লাবে, সারা ভারতের প্রতিটা অলিতে গলিতে কি উৎসাহ! কি উন্মাদনা।
পথে হেঁটে যাওয়া ফেরিওয়ালাটাও দাঁড়িয়ে পড়েছে ।
আজ দিনের খাবার জোগাড় হয়েছে কিনা সেদিকে হুঁশ নেই পথচলতি মানুষগুলোর।
তারা আজ মুগ্ধ হয়ে এক বাঙালির ব্যাটিং দেখছে।


ইট ভাটায় কাজ করা ছেলেটা রেডিওতে ধারাভাষ্য শুনতে শুনতে কখন যে বেখেয়াল হয়ে পড়েছে তা বোঝার উপায় নেই।কাজে সামান্য ভুল করলে যে মালিক রেগে যায় ,সেই মালিকও তার ওপর আজ রেগে নেই।
একটার পর একটা ছয় চারের বন্যা হচ্ছে যে।


একদিন যখন ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসকে ঐতিহ্যকে গ্রাস করেছিলো কালো ছায়া
তখন এই বেহালার ছেলেটা উঠে এসেছিল।
বিদেশের মাটিতে অভিষেকেই লর্ডসের বুক ঝলসে উঠেছিল তার বিধ্বংসী ব্যটিংয়।


ছেলেটা দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করা জানতো।
জানতো কিভাবে প্রত্যুত্তর দিতে হয়।
মাথা উঁচু করে ভারতকে লড়াই করা তারই শেখানো।


শুধু ব্যাটিং নয় দরকারে নিজের হাতে বল তুলে নিত। পাশে দাঁড়াতো অফ ফর্মে থাকা সহযোদ্ধার। নিখুঁত জহুরির মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের  তুলে আনার দক্ষ কারিগর সে।
বিদেশের মাটিতে ভারতকে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখানো সহজ কথা নয়।
শুধু স্বপ্ন নয়-- মাত্র একটা ম্যাচ..তাহলেই সৃষ্টি হতো ইতিহাস।


সব গল্পেরই শেষে একটা ক্লাইমেক্স থাকে। তাই খেলোয়াড় জীবনের শেষ অধ্যায়ে তাকে সহ্য করতে হয়েছিল চূড়ান্ত অবহেলা অপমান।


কিন্তু, প্রতিভাকে আটকে রাখার সাধ্য কার আছে?
কার সাধ্য, একজন প্রকৃত যোদ্ধাকে তার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে রাখে।
কার সাধ্য অমৃতদীপিত সূর্যের আলোকে আজীবন ঢেকে রাখে?
নদীর উত্তাল স্রোতকে বাঁধ দিয়ে কি আটকে রাখবে?
তাইতো বারবার সে ফিরে এসেছিল লড়াইয়ের মাধ্যমে। চিনিয়েছিল তার জাত। ভেঙে দিয়েছিল তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত আঙুল।


এখানেই থেমে থাকেনি তার জীবন। খেলোয়াড়কে কখনোই মাঠের বাইরে রাখা যায়না। তাইতো আজ আরও একবার তাকে আমরা পেয়েছি নতুন ভূমিকায় ভারতের ক্রিকেটের প্রশাসক রূপে। আরো একটা নতুন ইতিহাসের সৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছে সকল ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমী তথা বিশ্ববাসী ।