মহামান্য হুজুর,
সবিনয় নিবেদন
জানেন তো হারাতে বসেছি জীবনধন।
আমাদের সামর্থ্য খুবই সীমিত
তবু জীবননদীর বাধাবিপত্তি সরাতে
সকলে মিলে মস্ত-বড়ো পাথর ঠেলছি নিয়ত।
যদিও এ আমাদের ন্যায্য অধিকার,
দরকার ছিল না কারো কাছে অনুনয় বিনয় করার
তবু সহ্য করতে না-পেরে জীবন-যন্ত্রণা
সাহেবদের সদয় অনুভূতি পেতে
তাদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে
তাদের কাছে করেছি অনুনয় বিনয়।
দুর্ভাগ্য!অ-প্রবেশ্য শিলাস্তর ভেদ করে
তাদের মরমে পৌঁছায়নি আমাদের সেকথা
বৃথা হলো সেই প্রচেষ্টা,
গলেনি তাদের কঠিন হৃদয়।
তারপর?
আবারও তাদেরকে অবগত করতে
দেখা করতে চেয়েছি তাদের সাথে
কেননা কে আর সহজে নামতে চায় পথে?
হুজুর,আমাদের গ্রহ-বৈকল্য কিনা জানি না
সে যাত্রায় ও ফিরতে হলো ব্যর্থ মনোরথে।
অগত্যা কী করার?
চারদিকে যেন রুদ্ধদ্বার।
যদি সাহেবদের নজরে আসে,
জীবননদী যদি খুঁজে পায় দিশে
সেই ভেবে অহিংস পথে মিছিল করেছি রাজপথে
তবুও সুরাহা হলো না তাতে।
বরং সাহেবদের নজরদার নুন ছড়ালো ক্ষতে,
নির্বিচারে চালালো আমাদের উপর লাঠিচার্জ,
মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে
চালিয়ে দিলো জল-কামান।
আমাদের কপালে পড়লো চিন্তার ভাঁজ।
অগত্যা আমাদের ঠাঁই নিতে হলো
রাজপথের ফুটপাথে ও গান্ধীমুর্ত্তির পাদদেশে
হুজুর,এভাবে মাসের পর মাস গেল
ঝড়-জল,বর্ষায় ও গ্রীষ্মের খরতাপ সহ্য করে
সুদীর্ঘকাল সেথায় কাটালাম ঠায় বসে,
বুঝে উঠতে পারিনি এ সমস্যার সুরাহা হবে কিসে।
হয়ে পড়েছি একেবারে দিশেহারা।
আমাদের এ জীবননদীকে জীবনরথও ভাবতে পারেন।
এখন সে রথ চলতে চায় না আর
জানি না, সেটি মহাসড়কে পৌঁছবে কিনা!
এখনি এ রথ জব্দ হওয়ার যোগাড়
বলবো কী আর
এ সমাজ ও যেন নির্বিকার।
হুজুর,শুনতে পাচ্ছেন কি বাতাসে
ভেসে আসা কড়কড় শব্দ?
সে আমাদের জীবনরথের চাকার
শোনাবো আর কত কথা,আমাদের দুর্দশার?
জীবন সাহারা!
দীর্ঘদিন অনশন করে আজও হয়নি সুরাহা।
হা-ভাতেদের দিকে সমাজও তাকায়নি ফিরে।
বঞ্চিতদের ক’জন ভেসে গেল জীবন-জোয়ারে।
জানি,তারা আর কখনও আসবে না ফিরে।
বাদবাকিরা আজও বঞ্চিত ন্যায্য অধিকার থেকে।
বলবো কী আর দু’চোখে দেখছি অন্ধকার!
ভাবি,জীবনটা হলো কি ছারখার?
জানেন মহামান্য হুজুর,
দেখেছি দূর থেকে
এ জীবন-নদীপথ যারা পাথরে রুদ্ধ করলো
তারা-ই অন্তঃসলিলা ফল্গুতে জল গড়াতে দিলো!
বলবো কী আর
বাধ্য হয়ে সুবিচারের আশায়
আমরা এসেছি আপনার কাছে ।
এখানেও পিচ্ছিল পথ,জমে আছে শ্যাওলা।
এখানে চলছে কালো পোশাকে
কতিপয় বাবুদের ছলাকলা।
বুঝেছি এখন জীবননদী সাগরে পৌঁছনো দুষ্কর।
শত চেষ্টা করেও সরানো যাচ্ছে না পাথর।
মহামান্য হুজুর!
বলছি আপনাকে,
শুনতে পাচ্ছেন কি ধপাস ধপাস করে
নদীর পাড় ভাঙার শব্দ?  
দোহাই! আপনিও বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না এবার।
ভাবুন একবার, প্রশ্নটা কি সঙ্গত
‘পাথর ঠেলতে পারি আর কত?’