ঘটনাটা শুনেও ভিন্ন এক পরিযায়ীর মুখে
তার সত্যতা যাচাই এর অবকাশ ছিল না
মোটে।তথ্য তালাশ করতে গিয়েই শুনেছি,  
জনৈক পরিযায়ী নাকি বিচারালয়ে বিচার
পতির সামনে বললো সাক্ষ্য দানের সময়,
হুজুর,‘পাশে থেকে বাবুকে হাতজোড় করে
বলেছি তখন,‘বাবু,একটু শুনুন’।
কোনও কথা শোনায় বাবুর অনীহা দেখে
আবারও বলেছি তাকে,‘বাবু-আপনার পা
দুটিকে ধরি,আমার কথাটি একটু শুনুন’।
--তবুও শোনেননি’।
বেগবান স্রোতের সামনে লঘু প্রতিবন্ধক
এসে পড়লে ঠিক যেমন ঘটে,সেই ভাবে
তাকে নাকি বেদম মেরে টেনে হিঁচড়েই
তখন পৌঁছে দিয়েছে অপেক্ষারত বাসের
ভিতর।সমূহ ঘটনা নাকি ঘটলো ট্রেনটি
গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছনোর পর।
জেনেছি,সে নাকি অতি সংক্ষেপে বলতে
চেয়েছিল তার দুর্দশার কথা।
পরে জেনেছি,তার বাবার ছিল অতিশয়
জটিল দুরারোগ্য ব্যাধি।সে পিতাকে সাথে
নিয়ে চেন্নাই গেল চিকিৎসা করাতে।
চেয়েছিল সে বাবাকে সুস্থ করিয়ে ফিরিয়ে
আনবে ঘরে।দুর্ভাগ্য তার।হাসপাতালে বাবা
মারা গেলো ক্যানসারে।
তখন লকডাউন,দেশ জুড়ে।
মৃতদেহটি বাড়ি আনতে চেয়েও ব্যর্থ হলো।
কেহ তাকায় নি ফিরে।
অচিরে তার অর্থ সম্বল টুকু গেলো ফুরিয়ে।
কতগুলি দিন কাটালো সে অর্ধাহারে কিংবা
অনাহারে।
ছাপ্পান্ন দিন পরে সে একাই ফিরেছে শ্রমিক
স্পেশালে।
সে নাকি বলতে চেয়েছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা
করে করোনা মুক্ত বিবেচিত হলে বিলম্ব না
করে তাকে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিতে।
জঘন্য অপরাধ!কাজে কর্মে দায়িত্ব সচেতন
জনসংযোগে দায়িত্ববান বাবুটি তখন তাকে
বেদম মেরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে পৌঁছে দিলো
বাসের ভিতর।
সংসারে একমাত্র রোজগেরে পিতার অভাবে
এই লক ডাউনে কী যে হতে পারে তাদের
অভাবী সংসারে সেসব ভেবে সে চেয়েছিল
উল্কার মতো দ্রুত বাড়ি পৌঁছে যেতে।
বিচার কক্ষে ফোয়ারার মতো তার মনের
অব্যক্ত কথাগুলি উদ্গিরণ করে বিচারককে
বললো সে,‘হুজুর,ঘোর দুর্দিন,এই ঘটনাটি
ঘটলো ট্রেন গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছলে।তখন
পরিযায়ী দের সাথে আমাকে নির্দয় ভাবে
গলা ধাক্কা দিয়ে তোলা হলো বাসে।
বাস যাত্রার শুরুর ঠিক আধ ঘন্টা পরে
বুঝেছি নির্জনতায় অন্ধকারে পৌঁছে গেছি
কোয়ারেন্টীন সেন্টারে।ডাক্তার বাবুর সব
নির্দেশ মেনে ছিলাম সেখানে।
হুজুর,সারা দিন ভর কর্তব্যে রত সবার
কাছেই বারংবার অনুরোধ করে কোনও
খাবার না-পেয়ে অবশেষে ক্ষোভ জানিয়ে
যে অন্যায় করেছি সেটাই বুঝিনি মোটে।
বুঝেছি শেষে,এই নির্বুদ্ধিতার জন্যই কত
কী যে ঘটে!তার ফল স্বরূপ,জুটলো গুটি
কতক লাঠির ঘা।হুজুর,এই দুর্বল শরীর,
সইতে পারে কতটা?
হয়েছি জ্ঞান হারা।কেটেছে সুদীর্ঘ সময়।
অবশেষে এক গ্লাস দুধ ও দুটি বিস্কুট
জুটলো জ্ঞান ফেরার পরে।ব্ল্যাক হোল
যেমন আলো কে গোগ্রাসে গিলে খায়,
খিদে ও জল তেষ্টার অতীব তাড়নায়
সেই সময় আমারও একই দশা।সেসব
খাবার পর আমাকে আনা হলো এই
বিচারালয়ের কাঠঘরায়।
সময় সংক্ষেপে শোনা হয়নি কী ঘটলো
শেষে।