বলবো কী আর যথাসময়ে রোগের
চিকিৎসা থেকে বিচার ব্যবস্থাও মুক্ত
রইলো না। সে কারণে সেও এখন
রোগ শয্যায় শুয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে
কষ্ট লাঘবের চেষ্টায়।
বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রীতার কারণে
ও আইনি জটিলতায় কত না ঘটনা
ঘটে। বহু ঘটনা।মহাভারত ও যেন
হার মানে।এ কারণে যে কত দুর্দশায়
ভুগতে হয় ভুক্তভোগী রাই এ বিষয়
ভালো জানে।
এইতো সেদিন কাকাতুয়া ডালিম গাছে
বসে শোনালো তেমনি এক কাহিনী।
ঘটনাটি শুনলে বুঝবে হৃদয়বিদারক
কতখানি।
যে সময় স্বাভাবিক জীবন-নদীতে
উচ্ছ্বাসে গড়ায় জল সে সময় এক
শিশুর জীবনে ডেকে উঠলো মেঘ
গুরুগুরু। সেই শুরু।
মাতৃহারা,বয়স তার বড়োজোর এক
বছর।বলবো কী আর সেও এ দুর্দশা
থেকে পায়নি নিস্তার।অথৈ জলে পড়ে
খেলো হাবুডুবু। তার জীবননদী আর
কলকল করে বইলো কৈ?
দুর্ভাগ্য একেই বলে।এ বয়সে খুন হলো
তার শিক্ষিকা মা! অভিযোগ,খুনি এই
মহিলার স্বামী। তারপরও এ অভিযুক্ত
তার শিশুসন্তানের দায় নিতে করলো
অস্বীকার।
শুধু কী তাই? এখানে থেমে থাকেনি
সেই কাহিনী।
সমাজঅঙ্গন,বিচিত্র এ রঙ্গশালায় কত
কী ঘটে!অভিযুক্ত আবার বিয়ে করে
চলে গেল অন্য কোথাও।পাতলো তার
নতুন সংসার। নেয়নি অসহায় তার
শিশু সন্তানের দায়ভার।  
শুনেছি আগে স্রষ্টা বাড়ালে হাত,তিনি
প্রতিহত করেন নাকি ছোবল দিতেই
শঙ্খচিলের মতো উড়ে আসা সব ঘাত
প্রতিঘাত।তখন কে,কাকে আর ডোবাতে
পারে বিপত্তির সলিলে?
এক্ষেত্রে যা ঘটলো সেটুকু জানা ভালো।
জানি না, পরে সে দিকে জল গড়াবে
কিনা।
শুনেছি এ অবস্থায় নাবালক শিশুটির
ঠাঁই হলো মাতুলালয়ে। তবে সমস্যার
শেষ হতে এখনও বহু বাকি। সমাজে
মানুষের মতো বাঁচতে হলে এই শিশুর
আইনি বৈধ অভিভাবক লাগবে নাকি?
নয়তো তার মায়ের কর্মকালীন আর্থিক
সুযোগ সুবিধা জুটবে কি?
বললো কাকাতুয়া, তার বৈধ অভিভাবক
হতে যদিও দাদু সম্মত হলেন,তাকে সে
অধিকারের আইনি বৈধতার জন্য যেতে
হলো আদালতে,নইলে নাবালকের মায়ের
কর্মকালীন আর্থিক সুযোগ সুবিধা ঝুলে
থাকবে শিকেয়, সে অধিকারের আইনি
বৈধতার নিষ্পত্তি না-হওয়া অবধি।
বৃদ্ধ নিরুপায়।সংসারে দারিদ্রের সাথে
দু’বেলা চলছে যে তার লড়াই,এ ছাড়া
আর গত্যন্তর কি?
বলবো কী, সেখানে সমাধা সহজে হয়
নাকি?বললো পাখি, এ বিষয়ে গড়ালো
জল উচ্চ-আদালত অবধি।
ভাবছো, তারপর হলো কী?তবে বলি,
এর নিষ্পত্তি করে দেওয়ার নির্দেশাবলী
সেখান থেকে গেলো নিম্ন আদালতে।
উচ্চ-আদালত সে কাজে সময়ও বরাদ্দ
করে দিলো।
তাতে কী? বিচারব্যবস্থা রোগশয্যায়।
দীর্ঘশ্বাস ফেলছে কষ্ট লাঘবের চেষ্টায়।
বরাদ্দ সময় উত্তীর্ণ হলেও সহজে বন্ধ
হয় কি তার গড়িমসি?
এ অবধি সময় এতো গড়ালো,বলবো
কী,নাবালকের বয়স এক থেকে বেড়ে
গিয়ে ঠেকলো তেরোয়।তবু এর সমাধা
হতে বাকি।এই অবকাশে দাদুও পৌঁছে
গেলেন না-ফেরার দেশে।
তার অভিভাবকত্বের বিষয়টি তখনও
ঝুলছে শিকেয়।অথৈ জলে হাবুডুবু খাচ্ছে
সে পরিবার।অর্থাভাব কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।
নাবালকের মায়ের কর্মজীবনের বকেয়া
মিললে হয়তো হতো কিছু সুরাহা।
কিন্তু সেসব মিলবে কি করে আইনত:
অভিভাবকত্বের প্রশ্নের সুরাহা না-হলে?
সে প্রশ্নে এবার যদিও তার দিদা আইনি
দাবীদার হতে করলেন স্বীকার,বাধা হয়ে
দাঁড়ালো অর্থাভাব। প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক,বিচার
চাইতে আদালতের ওকালতির খরচ বহন
করবে কে,নুন আনতে পান্তা ফুরায় যে
সংসারে?
অগত্যা যা হওয়ার হলো তাই।সমস্যার
সমাধান ঝুললো শিকেয়।
কাকাতুয়া জানালো, ভাগ্যিস সে খবর
উচ্চ-আদালতের মহামান্য বিচারকের
কাছে পৌঁছলো।
জানো,বহুরূপে যিশু অবতীর্ণ হন এই
বিশ্ব সংসারে। বললো পাখি,বিচার কে
নিভৃতে কাঁদতে দেননি তিনি। এগিয়ে
এলেন সে খরচ বহন করতে।সেই সাথে
নিম্ন আদালতের মহামান্য বিচারককে
নির্দেশ দিলেন অভিভাবকত্বের বিষয়সহ
নাবালকের মায়ের কর্মজীবনের সমস্ত
বকেয়ার বিষয়েরও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করতে।
এখন দেখার তার জীবননদীর বয়ে
যাওয়ার পথে বাধা কাটলো কিনা!