দেখেছি তাকে সন্তানের মধ্য দিয়ে
নিজের স্বপ্ন পূরণের অদম্য স্পৃহায়
ছাঁটলেন নিজের সন্তানের রোজকার
খেলাধুলার অভ্যাস নির্দ্বিধায়।বিশ্বের
নানান প্রান্তে রোজ এরকম কত কী
ঘটে যায়।
স্রষ্টা,বলি তোমায়, ‘এখনি জানতে
ইচ্ছা করে কিসের মোড়কে তুমি
ঘিরে রেখেছো এই পিতামাতাদের
ইচ্ছা পূরণের অদ্ভুত গুপ্ত রহস্য?
একি জীনতত্ত্ব যার মধ্যে রয়েছে
তার সব কিছু লুক্কায়িত’?
দেখেছি সে সময় বট বৃক্ষের মতো
সুদূর প্রসারিত সমাজের গভীরে
ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন জননী
তার বাসনার জটাজাল।একান্তে
ভেবেছি,স্রষ্টার একি কীর্তিকলাপ?
কেন যে ছড়ালেন অদ্ভুত এই
মায়াজাল?
অঘোরে নিজ স্বপ্ন পূরণের নেশায়
জননী রোজ ভোরে সন্তানকে ঘুম
থেকে তুলে বিদ্ধ করতেন কঠোর
শাসনে।সেসব দেখে প্রকৃতি লজ্জায়
মুখটি লুকিয়ে চুপ করে থাকতো
সেই ক্ষণে।
জিজ্ঞেস করেছি প্রকৃতিকে, ‘বলো,
তুমি নীরব থাকবে আর কতকাল?
উত্তর পাইনি।সে কুয়াসার চাদরে
তার মুখ ঢেকে নিরুত্তর থেকেছে
এ যাবত কাল।
প্রাতে সন্তানের প্রাতঃ কর্মের শেষে
ক্রন্দনরত শিশুকে স্কুলের পোষাক
মোজা ও জুতা পরিয়ে ভারবাহী
বাহকের মতো তার পিঠ-ব্যাগে
রোজ বই খাতা ও জলের বোতল
সহ শিশুর টিফিন বাক্স দিতেন
জননী তারি সাথে।
শিক্ষায় সু পণ্ডিত ও দক্ষ করার
স্পৃহায় দেখেছি নিজের সন্তানকে
কলুর বলদের মতো অত্যাচারের
শৃঙ্খল পরিয়ে বজ্র-মুষ্টি তে ধরে
বড় সড়কের পাশে এসে দাঁড়াতেন
প্রত্যহ ভোরে।
কী অদ্ভুত ঠেকতো সেই দৃশ্য।
জননীর সেসব কর্মকাণ্ড দেখে
লজ্জায় নিভে যেত বাতি স্তম্ভের
আলো।যখনি সময়-সরণী ধরে
শিশিরে স্নাত স্কুল-বাস আসতো
ছুটে,জননী সন্তানকে হাত ধরে
তুলে দিতেন স্কুল বাসে।সে সময়
তাকে প্রতিদিন বলতে শুনেছি,
‘খোকা,খেয়ে নিস টিফিন টা’।
শিশুটি মায়ের সেই নির্দেশ কে
পালন করতো রোজ ই অক্ষরে
অক্ষরে।
দিনান্তে স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে
তাকে পোশাক খানি বদল করে
বসতে হতো গৃহশিক্ষকের পাশে।
খেলাধুলা এবং বিশ্রাম টুকু বাদ
যেতো সময় দুর্লভ বলে।
খেলাধুলা র সময়ের কাটা ছেঁড়া
বৈসাদৃশ্য লাগতো তার।ভাবতো
চলছে যেন তার উপর নির্মম
অত্যাচার।তবু মায়ের রক্তচক্ষু
দেখে প্রতিবাদ করার ছিল না
উপায়।
দেখেছি রোজ শিশুটি র মগজ
শান দিতেই কাল যেতো ফাল
হয়ে।অবশেষে খোকার মেজাজ
যেন নিয়ত শাণিত তরবারি।
সন্তানের আচরণ দেখে হতবাক
জননী বালিশ কে নিজের বুকে
চেপে ধরে রোজ ই কাঁদতেন  
বিছানায় শুয়ে।
তবুও যথা নিয়মেই কাটালেন
বছর দশ টা।খোকা ও বাড়লো
গায়ে গতরে কিন্তু প্রাণে তার
জমলো বিষ্ঠা।
দেখেছি জননী কখনও চাননি
তার খোকাকে বুঝতে।ভাবেননি
কখনও কী চায় তার প্রদীপের
সলতে।
তরুমূল কে ছেঁটে দিয়ে জননী
দিয়েছেন জল ও সার সবটাই।
বিনিময়ে পেলেন তিনি একটি
গৃহ-শোভা বর্ধক বনসাই।