বহু সহস্র বছর অবিরাম জয়ন্তের
মতো পথে ও প্রান্তরে চলতে গিয়ে
দেখেছি কালের স্রোতে বিশ্বের বহু
দেশে কত কী ঘটে।
প্রাকৃতিক সম্পদের হচ্ছে না সুষম
ভাগ বাটোয়ারা।দেখেছি রকমারি
ঘটনা প্রবাহে কতিপয় মানুষ শৈশব
থেকেই খলনায়কের ভূমিকায় যেন
সিদ্ধহস্ত হয়ে কুড়িয়ে নিয়েছে প্রভূত
অর্থ কড়ি।দরিদ্রদের অর্থ লুট করে
তারা হয়েছে আজ বিপুল সম্পদের
অধিকারি।
জানতে ইচ্ছা করে তাদের মৃত্যুর
পরে তাদের বিদেহী আত্মা করবে
কি সেই সম্পদের তদারকি?কিংবা
পরলোকে নিয়ে যেতে পারবে কি
কানাকড়ি?
দেখেছি লালসার জটা জালে তারা
বন্দী দশায় শকুনের দৃষ্টিতে দেখেছে
বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের চূড়ান্ত
ভাগ বাটোয়ারার কাজটি এখনও
হয়নি সাড়া।জীব জগতের অস্তিত্ব
থাকবে যতদিন হয়ত সেই পর্যন্ত
চলবে এই বিশাল সম্পদের ভাগ
বাটোয়ারা।
লোভে মত্ত সেসব মানুষেরা আরও
বিত্তশালী হওয়ার নেশায় সমাজে
ক্ষমতাশালী দের সাথে গোপন কক্ষে
শলাপরামর্শ করে নিয়মিত খেলছে
পাশাখেলা রোজ বেলা অবেলা।
মনুষ্যত্বের অন্তর্জলি একেই বলে।
জেনেছি অন্তঃসলিলা নদীর মতো
সমাজের বুক চিড়ে নিয়ত বইছে
অর্থের চোরা স্রোত।ক্ষমতাশালী দের
সাথে যোগসাজশে বিত্তশালী দের
সম্পদ বাড়ছে নিয়ত মৌচাকের
থেকে মধু সংগ্রহের মতো।বাড়ছে
দ্রুত ধনী ও দরিদ্রের অর্থনৈতিক
বৈষম্য।ফলে নাকে সুড়সুড়ি খেয়ে
যেন জাগছে এক ঘুমন্ত সিংহ।
কালের স্রোতে এই আর্থিক বৈষম্য
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে দীনদরিদ্র
মানুষদের।প্রতিদিন বাড়ছে তাদের
জীবন যন্ত্রণা।ভাবি,এই ধারা বহাল
থাকলে শেষে সেসব কোথায় পৌঁছে
যাবে এখনও কারো নেই জানা।
দেখেছি জেগে আছে ক্ষমতাশালীরা।
তারা রাত জেগে নিজেদের গদির
পাকাপাকি বন্দোবস্ত করতে যেন
সেজেছে খুবই গরীব দরদী।তারা
যেন গরীব দের দুর্দশা ঘোচাতেই
অতিশয় ব্যস্ত।
সূর্যাস্ত ঘনিয়ে আসছে দেখে তারা
এখন চারিদিকে নিয়ত ধোঁয়াশার
বেড়াজাল ছড়িয়ে সাইফনের মতো
জনগণের অর্থ-সম্পদ সরিয়ে দিচ্ছে
লুটেদের ডেরায়।দেখেছি মুখের গ্রাস  
কেড়ে নেওয়ায় দুঃস্থরা এখন বড়
অসহায়।
এই এক বিংশ শতাব্দীতে বিশ্ববাসীকে
জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে,তারা আর
কবে হবে সচেতন?তারা কি শুনতে
পাচ্ছে প্রকৃতির ক্রন্দন।
জেনেছি শৈশব থেকে দুর্বৃত্ত দের ছল
ও চাতুরীর কখনও অভাব হয় না।
গরীব দরদী ভাব বজায় রাখতেই
তারা লুটেদের সাথে গুপ্ত ধনের খোঁজে
কানামাছি খেলছে দুবেলা।
ভাবি,হয়তো ঘনিয়ে আসছে তাদের
কালবেলা। ধনী-দরিদ্রে অর্থনৈতিক
বৈষম্য বাড়ছে যত,রোজ জীবিকার
সন্ধান না-পেয়ে দিশাহীন আশাহত
দুঃস্থ মানুষেরা প্রলোভনের মাদকতায়
সিক্ত হয়ে ছুটছে পিপীলিকার মতো
লুটেদের পিছে পিছে এই ভেবে যদি
তাদের দুর্দশার কিছুটা ঘোচে।কারো
কারো ভাগ্যে কিছু জুটছে বটে,তবে
অনেকেই হতাশার যাঁতা কলে পিষে  
জঞ্জালে মরছেন বেলা শেষে।
প্রকৃতি,আর ঘুমিও না।এবার একটু
তাকাও পাশ ফিরে।চেয়ে দেখো আজ
দুর্দশার বেড়াজালে বন্দী দশায় বহু
লোক থাকছেন সেই বৃত্তের বাইরে।  
ক্ষুধার তাড়নায় তারা কখনও সেই
লুটেদের পিছে পিছে ভিক্ষার ঝুলিটি
নিয়ে না-ঘুরে কর্মের বিনিময়ে অর্থ
রোজগারের প্রয়াসে ঘুরছেন নানান
দেশে বিদেশে।
দেখেছি পথে-প্রান্তরে,ফুটপাথে কিংবা
রেল স্টেশনে অনাহারে বা অর্ধাহারে
থেকে রাত জেগে সেসব মানুষেরা
পাঠ করছেন তাদের জীবনের ধূসর
পাণ্ডুলিপি।
আঁধার ঘনিয়ে আসছে।অসাম্যের
প্রতিবাদে বইছে উত্তাল তরঙ্গ স্রোত,
বাড়ছে ক্ষোভের পারা।সেই নিঃস্ব
মানুষেরা যারা সারা জীবন লড়াই
সংগ্রাম করছে নিয়ত তারা এখন
এক একজন যেন বোমারু বিমান।
সমস্যার স্থায়ী সমাধানে তারা যেন
নিজেদের জান বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত
হয়ে আছে।
দেখেছি,প্রকৃতি নির্বাক।সেও হয়তো
সুষ্ঠু সমাধানের দিকে তাকিয়ে আছে।