মন্দিরে ও পূজামণ্ডপে দেবী দশভুজার আরাধনা
চলছে বেশ। এখন টিভি চ্যানেলগুলোতে এটাই
মুখ্য সন্দেশ।
দেখবে এসো,অধিকাংশ পূজা-প্যাণ্ডেলে দমবন্ধ
করা পরিবেশ। করোনার বিধিকে শিকেয় তুলে
সর্বত্র ব্যাপক জনসমাগম?
বানভাসির মতো সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আজ
নিরালায় বসে ভাবি, কেন চারদিকে এই ব্যাপক
বন্যা কবলিত মানুষদের অন্ধকার দশার মাঝে
সমাজের অতি ক্ষুদ্র অংশে আলোর এতো ব্যাপক
ঝলকানি ?
ভাবনাগুলো মগজের দরজায় ঠক ঠক করে কড়া
নাড়ে? আগন্তুক দরজার ও পাড় থেকে কী বলে
জানো? বলে,‘এখন বন্যা বিধ্বস্ত অঞ্চলের খবর
রাখে ক’জন? বলে, তাতে জনগণের আর দোষ
কিসে সংবাদমাধ্যম যখন সেদিক থেকে মুখ
ফিরিয়ে নিয়ে তাদেরকে পুজার খবর পরিবেশনে
এতো ব্যাপক ঘাম ঝরাচ্ছে’ ?
ভাবি,সংবাদিকদের এ কাজে জনগণের কী যায়  
আসে ? কেন জনগণ পুজাপ্যাণ্ডেলে এতো ভিড়
করে বসে আছে ?
ভাবনার সলতে একটু উস্‌কে দিতে ক্ষতি কি?
সে কাজ করে দেখি এখন যা দিনকাল,অনেকে
নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করা ছাড়া অপরের ঘরের
চৌকাঠ ও মাড়ায় না, সে যে-কাজই হোক,বিনা
স্বার্থে কারো কোনও কাজেই আজকাল ঝাঁপিয়ে
পড়তে চায় না!
তবে নিঃস্বার্থে কেউ সমাজের কোনও কাজ করে
না, সেকথা কখনও বলবো না,কেননা সে দশায়
পৌঁছনোর আগে,সমাজ আঘাতে আরশির মতো
ভেঙ্গে চুরে চুরমার হতো ।
কিন্তু মহাষ্টমী তে দেবী দশভুজার পূজামণ্ডপে
দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেবার মানুষের ভিড় দেখে
ভাবি প্রতিবেশীদের আপদে ও বিপদে, যেমন
করোনার মতো অতি-মারীতে কিংবা খরা,বন্যা
নয়তো অন্য কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন
ঝাঁপিয়ে পড়ে মুষ্টিমেয় ক’জন,তখন কোথায়
থাকে এদের বাদবাকি লোকজন ?
করোনার অতিমারীর বহু ঘটনা জানা থাকায়
মনটা করলো কাঁচুমাচু। জানতে ইচ্ছা হলো
‘দেবীর আরাধনায় মানুষের ব্যক্তিস্বার্থ জড়িয়ে
আছে কিনা’ ?
অন্তর্যামী নই, জানি না, কার মনে কী আছে!
অর্থ,সোনা-গয়না ও সম্পদের মতো আছে কী
বৈষয়িক কোনও সামগ্রী প্রাপ্তির ভাবনা?কিংবা  
মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুখ-শান্তির বিষয়ে
কোনও চাহিদা ?
তবে একথা বুঝি অসুরের দাপট বেড়েছে খুব,
অনেকের মনে যেভাবে ওরা রাতদিন দাপিয়ে
বেড়াচ্ছে তাতে কারোর মানসিক ও আধ্যাত্মিক
সুখ ও শান্তি আদৌ জুটতে পারে না।
সব ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণে এই অসুরদের
নিধন করা খুব দরকার আর সে জন্য মনে হয়
সবার মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুখ শান্তির জন্য
মন্দিরে বা পুজোমণ্ডপে নয়, দেবীকে স্থান করে
দেওয়া দরকার সবার মনোমন্দিরে।


(আসরের প্রিয় কবি-বন্ধু মাহমুদ রেজা
মহাশয় গতকালের কবিতায় মন্তব্যে
এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেন।আজ এই কাব্য
তার সম্মানে আসরে উৎসর্গ করছি।)