গহন স্বপনে দেখা তার।আলাপচারীতায়    
সারা রাত সব শুনে মনে হলো আমি
তার শৈশব থেকে ভরা যৌবনে উত্তরণ
দেখেছি খুব কাছে থেকে।শীর্ণ-কায় এই
ছেলেটার প্রায়শ দুই বেলা জুটত ও না
আহার।
কুষ্ঠ রোগীদের দেহের মতো চারিদিকে
পলল খসা কুঁড়েঘরে বসতি তার।ঘরের
দরজা জানালা ছিল বৃদ্ধদের নড়বড়ে
দাঁতের মতো।একটু ঘাতে যেন সেসব
মাটিতে লুটিয়ে পড়ত।কতগুলি পুরানো
হেলানো বাঁশের খুঁটিই ছিল বাসগৃহের
রক্ষাকর্তা।রাতে ঘন ঘোর অন্ধকারে
সেই ঘরে বসে জীর্ণ চালের শত ছিদ্র
দিয়ে দেখা যেত শত সহস্র উল্কাদের
বিদেশ যাত্রা।
শুনেছি তার মুখ থেকে সে রাত ন’টা
অবধি চায়ের দোকানে বসে বন্ধুদের
সাথে তর্কবাগীশের মতো তর্ক জুড়ত।
বিশ্বকোষ মগজে পুড়ে যেন সবজান্তা
গুগলের মতো নানাবিধ বিষয় নিয়ে
আলোচনায় বা জমাটি আড্ডায় বসে
প্রতিদ্বন্ধীদের ঘায়েল করত।
বয়ঃসন্ধি কালে এসে প্রায়শ সে ইস্কুল
কলেজ ও হাসপাতালের চৌহদ্দির মধ্যে
অবাধে প্রবেশ করত।মানসিক বিকার
গ্রস্তের মতো পূজাপার্বণে ও সামাজিক
উৎসবে সমাজের প্রতিভূ সেজে ঠায়    
বসে উচ্চগ্রামে ডিজে বাজিয়ে সবার  
কান ঝালাপালা করে ছাড়ত।
যৌবনে তার হৃষ্টপুষ্ট শরীর।খুব তীক্ষ্ণ
তার নাকের বাহার।গন্ধ শুঁকে বিষয়  
চিনতে সারমেয় তার কাছে যেন হার
মেনেছে বারবার।অর্থকড়ির গন্ধ পেলে
তৎক্ষণাৎ সে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পৌঁছত
সেথায় সকাল সন্ধ্যায়।
স্বঘোষিত একজন সমাজ সেবক সেজে
কারণে-অকারণে সকল বিষয়ে ঝাঁপিয়ে
পড়ে পায়ে-পা বাঁধিয়ে ঝগড়া ঝাটিতে
মেতে জনগণের অর্থ পকেটস্থ করতে সে
আফিং খোরের মতো নেশা-তুর।
শুনেছি সে’জন সমাজবন্ধু সেজে নিয়ত
শহরের যান চলাচল স্তব্ধ করে রাজপথে
মিটিং মিছিলে প্রতিবাদের ঝড় তুলত।
মৃত্যু পথযাত্রীদের বাঁচানোর শেষ চেষ্টায়
হাসপাতাল গামী মানুষদের থামিয়ে দিয়ে
পথে ঘাটে বক্তৃতা জুড়ত।
হাসি উৎফুল্লে শিল্প-তালুকে সিন্ডিকেট রাজ
কায়েম করে রক্ত-ঘাম ঝরানো শ্রমিকদের
জীবন জীবিকা স্তব্ধ করে মালিকদের অর্থ
সাইফনের মতো সরিয়ে নিজের পকেটস্থ
করে শিল্পকে চিতায় তুলত।
বেকারদের নিয়ে ও তামাসায় তার জুড়ি
মেলা ভার।চাকুরীর মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে
তাদের সর্বস্ব সম্পদকে পকেটস্থ করা ছিল
নেশা তার।সে প্রোমোটিং ও মাফিয়া রাজ
কায়েম করে সরকারী বেসরকারি নানান
কাজ থেকে জীবিকা নির্বাহে কাটমানি ও
করত রোজগার।
আজও কষ্টিপাথরের মতো শক্তপোক্ত তার
বিবেকের এক রতিও হয়নি ক্ষয়।সমাজের
বুকে তার দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি দেখে জাগে ভয়।