মানসিক কষ্টে সেদিন বলেছি তাকে
‘রাজা মশাই!যদিও বলতে কষ্ট হয়  
তবুও না-বললেই নয়।তাই আমার
এই কথাগুলো বুকে বিঁধলেও,তাকে
দেখবেন ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে।
বলছি,আপনি খুবই প্রতাপশালী।সে
কথাটি চায়ের আসরে বসে সকলে
করছিল বলাবলি।আপনাকে করতে
হবে বিশ্ব জয়।তথাপি আপনার এই
অনুকূল সময় আপনি অযথা নাকি
করছেন সময় অপচয়।সেসব শুনে
আমার মনে খুবই কষ্ট হলো।
বলছি আপনার এই অনুগত প্রজা,
'রাজা মশাই!চারদিকে চেয়ে দেখুন
আপনার চারপাশে কত বিবর্ণ মুখ।
সকলেই আপনার দুঃস্থ প্রজা।তারা
এসেছে আপনার কাছে তাদের দুঃখ
দুর্দশার কথা গুলি জানাতে।নিরাশ্রয়  
এই মানুষেরা তাদের পূর্ব পুরুষের
ভিটেমাটি হারা হয়ে এখানে এসেছে
আপনার আশ্রয়ের প্রত্যাশায়।
রাজা মশাই!আপনার এই সুবিশাল
সাম্রাজ্যের একাংশে গ্রাম ও শহরের
মাটির তলদেশে খনি খননের বহু  
নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই
কতিপয় মাফিয়া সুড়ঙ্গ পথে খনির
বিস্তার ঘটিয়েছে বহুদূর।
রাজা মশাই!হয়তো আপনার বিশ্বস্ত
পেয়াদায়েরা আপনাকে দিয়েছে সেই
খবর।এখন সেখানে হাঙরের মুখের
মতো হা-করা কিছু খনি-মুখ দিয়ে
রাতদিন অবৈধ ভাবে চলছে কয়লা
পাচার।মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের
মতো পাচারকারীরা সেসব পাচার
করতে ব্যস্ত।
রাজা মশাই!সেই সুবিশাল শূন্যগর্ভ
নিয়ে এখন ভাববার হয়েছে সময়।
যদিও খনি থেকে কয়লা উত্তোলন
কালে ভূ-ত্বকে যেন ধস না-নামে
তার বন্দোবস্ত করা অতি প্রয়োজন
তবু সেসব যথাযথ ভাবে দেখভাল
হয় না এখন।সেখানে বহু বাড়িতে,
রাস্তায়,মাঠে ঘাটে ধরেছে ফাটল।
যে কোন সময় সেখানে ভূমি ধস
নেমে আবারও একটা মহেঞ্জোদারো
হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।এখনি যেন
উন্মুক্ত হচ্ছে ক্রমশ জানকী দেবীর
পাতালে প্রবেশ পথ।
সেই অঞ্চলের মানুষের মনে এখন
জাগছে ভয়,কখন যে কী হয়।তারা
সকলে বুঝে নিয়েছে সেটি বসবাসের
জন্য মোটেই নিরাপদ নয়।ভূমিধ্বসে
অন্ধকূপে সলিল সমাধির ভয়ে তারা
প্রাণে বাঁচার তাগিদে পূর্ব-পুরুষদের
ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে
যেতে ব্যস্ত এখন।রোজ খুঁজছে তারা
নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
এই দুঃস্থ মানুষেরা তাই তাদের এই
দুঃসময়ে পুনর্বাসনের লাগি’ আকুতি
মিনতি করেছিল বহু বার আপনার
মন্ত্রী-মশাই এর কাছে।কিন্তু এখনও
হয়নি তার কোনও সুরাহা।শুনেছি
এই ব্যাপারে তারা তাকিয়ে আছে
আপনার মুখের দিকে।
বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলো।
রাবণের সেতু বন্ধনের মতো দশা।
আজও হয়নি প্রাথমিক যেটুকু কাজ
করা দরকার।
প্রজাদের ভাবনাও ভুল।তারাও মনে
রাখেনি হিমালয়কে যতই ঠেলুক না
কেন,সে সরবে না একচুল।
সমস্যার সুরাহার আশায় তারা নাকি
আপনার কাছে আগে এসে আপনাকে
নিদ্রিত অবস্থায় দেখে ঘুমের ব্যাঘাত
হবে ভেবে বারংবার ফিরে গেছে।
আজ কথোপকথনের সময় পেয়াদার
মুখ থেকে শুনেছি,জাগ্রত অবস্থায়
এখন আপনি নাকি মুনিদের মতো
নিজের ইষ্ট সাধনে সদা মগ্ন।তাই
তারা ভুগছে হতাশায়।
রাজা মশাই!অচিরে হয়তো ঘটবে
কোনও এক বড় বিপর্যয়।তারপর
কী পরিস্থিতি দাঁড়াতে পারে সেটি
একটিবার ভেবে দেখুন।
সে সময় বিপর্যস্তদের উদ্ধার কাজে
ময়দানে নেমে পড়বে সমাজ সেবক।
পাশাপাশি বাতাসে ভাসবে কতিপয়
প্রতিবাদীদের কণ্ঠস্বর।
তখন শব্দ দূষণ এতোই প্রকট হবে
ধারে কাছে যাওয়া হবে দুষ্কর।দক্ষ
মন্ত্রী মশাই তখন সেখানে ছুটে গিয়ে
নিশ্চয় ঘোষণা করবেন,‘দেশে ঘটে
গেছে এক মর্মান্তিক বিপর্যয়’।
প্রতিবাদীদের তর্জনী দেখিয়ে তিনি
বলবেন,‘এটা প্রতিবাদের সময় নয়।
এখন আমাদের করতে হবে বিপর্যয়
মোকাবিলা।কেউ করবেন না এখন
কোন বিশৃঙ্খলা’।
সাথে সাথে সব প্রতিবাদকে রুখতে
তখন নেমে পড়বেই আপনার সব
সিপাহীরা,প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হলে
প্রতি ক্ষেত্রে যেমন হয়।ক্ষতিগ্রস্তরা
তখন দুর্বিষহ জীবন যন্ত্রণায় পথে
প্রতিবাদ করতে নামলে সিপাহীদের
গুলিতে মরবে।
সেই সময় খনি-গর্ভ থেকে ভেসে
আসবে মাটি চাপা পড়া মানুষের
আর্তনাদ।তদন্ত কমিটি বসবে বটে।
কিন্তু তাদের রিপোর্ট আলোর মুখ
দেখবে কিনা সন্দেহ আছে তাতে।
কিছু দিন যেতে না যেতেই বহু
ইতিহাসবিদ লিখবেন ইতিহাসের
পাতায় এটা ছিল এ দেশের একটা
‘দুঃসময়’।