মা,তোমার কি মনে পড়ে শৈশবে
আমাকে একটি ছাতা হাতে দিয়ে
বলেছিলে,‘খুকি,রাখিস তাকে খুব
যত্ন করে।রোদ,বৃষ্টি, ঝড়ে সেটি
আত্মরক্ষার কাজে লাগতে পারে’?
ভেবে দেখো,তুমি আরও বলেছিলে,
‘অন্ধের যষ্টির মতো জীবনে চড়াই
উতরাই করে চলার পথে ছাতা টি
হতে পারে অবলম্বন।বিপদে আপদে
কাজেও লাগতে পারে যখন তখন।
তাকে করিস না জীবনে কখনও
হাত ছাড়া’।
তোমার কথাগুলোর উপর বিশ্বাসে
ভর করে আত্মার আত্মীয়ের মতো
তাকে নিয়ে চলেছি এতকাল।জানো,
তোমার সেকথা শুনে আমার মনের
গহিনে ছড়িয়ে পড়েছিল বট বৃক্ষের
মতো বিশ্বাসের জটাজাল।এতকাল
আমি কখনো খুলেও দেখিনি তাকে।
সেটি সাথে আছে ভেবে সাহসে ভর
করে চলেছি আঠারো বছর কাল।
আজ কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার
পথে ক’জন পাষণ্ড যেন আমাকে
একা পেয়ে জোর জবরদস্তি করে
তুলে নিয়ে গেল অজানা অচেনা
এক নির্জন প্রান্তরে।
ওদের নির্মম অত্যাচারে আমাকে
হতে হলো অকারণে দ্রৌপদীর মতো
বস্ত্র হরণের মুখোমুখি।আপ্রাণ চেষ্টা
করেও সম্ভ্রম বাঁচাতে না পেরে শেষে
বাধ্য হয়ে ওদের কাছেই বাঁচানোর
আকুতি জানিয়েও দেখেছি পাষণ্ড রা
কর্ণপাত করেনি সে কথায়।  
আমি অত্যাচারের শৃঙ্খলে বন্দী দশায়
সম্ভ্রম বাঁচাতে ছাতা টি খুলে দেখেছি
তার সারা শরীরে শত ছিদ্র।সেটি
রৌদ্র-তাপেও লাগবে না দেহ রক্ষায়।
দেখেছি তার যষ্টি চিড় ধরা,ভগ্নপ্রায়।
চলার পথে তাকে অবলম্বন ভাবাও
বৃথা।সেই দেখে আমার বিশ্বাসে চিড়
ধরেছে।যাকে এতকাল আমি আত্মার
আত্মীয়ের মতো আগলে রেখেছি,সেও
লাগলো না কোনও কাজে।
মা,আমি এখন রক্তে স্নাত।আমাকে
চলে যেতে হবে এই পৃথিবী ছেড়ে।
তুমি এই ভগ্ন ছাতা টি ফেলে দিও।
সেটি লাগবে না কারো কোন কাজে।