মিটিং মিছিলে একটানা ক’দিন
দৌড়ঝাঁপের পরের ঘটনা।বলবো
কী তোমাকে,চারদিকে গণতন্ত্রের
উৎসব চলছে জোরদার,তবু বেশ
ক’দিন দেখা মেলেনি তার।সপ্তাহ
অন্তে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি সে
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।
শোনো,তাকে প্রথমে থাকতে হবে
হোম কোয়ারেন্টাইনে,সরকারের
সিদ্ধান্ত।সেটি মেনে টেলি মেডিসিনে
ভরসা রেখে চললো চিকিৎসা।
সেকথা শুনেছি লোক মুখে,ক’দিন
আগে।শোনো,তার ভাগ্যের বিড়ম্বনা।
শরীরের নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করে
বারেবারে ঔষধ পরিবর্তন করেও
চিকিৎসায় মেলেনি সাড়া।প্রয়োজন
জরুরী পরিসেবা।
অস্তগামী সূর্য,তার আভাও ম্রিয়মাণ।
দিন মানে বহু আশা নিয়ে গেলো
হাসপাতালে,যদি জরুরী পরিষেবা
মেলে।সব প্রচেষ্টা গেল বিফলে।
ফিরিয়ে দিয়েছে একে একে চার
চারটি হাসপাতাল।এ দশা অনেক
রোগীর।দলে দলে রোগী নিয়ে
তাদের আত্মীয় পরিজনরা বিভিন্ন
হাসপাতাল থেকে ফিরে গেছে।
বলো,এসব দেখে বা শুনে কার না
চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশা
কিনা জানতে ইচ্ছা করে?হাতজোড়
করে অনুরোধেও মেলেনি সুফল।
শুনেছি,কেউ ভর্তি নেয়নি তাকেও,
বেডের অভাবে।
তারপর?ঘরে ফেরার পরে ক্রমে
স্বাস্থ্যের অবনতি,সেও জেনেছি।
তোমাকে বলবো কী,পাঁজি ঘেঁটে
দিনক্ষণ বেছে নিয়ে সেই সময়
মন্দিরে আরাধ্য দেবতার পূজা
দিয়ে চারদিকে অসংখ্য জনগণ
নেমে পড়েছে গণতন্ত্রের উৎসবে।
আজ এই উৎসবের ভোটদান পর্ব।
গর্ব করার বিষয়,তাই হয় কি?
ভোটের ব্যাপারীদের মুখে শুনি,
গণতন্ত্রে ভোট নাকি জীবনের
চেয়েও অমূল্য!হয়তো অনেকের
চিত্তবৈকল্য হচ্ছে এমন,গণতন্ত্রকে
অক্ষুন্ন রাখতে করোনার কারণে
মহামারীকেও উপেক্ষা করে তারা
মেতে উঠেছে উৎসবে।
নিরুদ,আজ এই ভোটের উৎসবে
তোমার উপস্থিতি নিশ্চিত করার
জন্য তোমার বাড়ি যেতে গিয়ে
পথে দেখেছি করোনায় আক্রান্ত
হয়ে মৃতদের মৃত্যুমিছিল।তারপর
ছুটে গিয়ে দেখেছি,তোমার বাড়ির
দরজায় তালা।বন্ধ সব দরজা,
জানালা।নিস্তব্ধ চারপাশে।
আশপাশে ইতিউতি তাকিয়ে দেখি
একজন রমণী একটি জানালার
পাল্লা ফাঁক করে উঁকি দিয়ে
আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখাচোখি হলো।সৌজন্য বজায়
রেখে তাকে জিজ্ঞেস করে একথা
জেনেছি,মৃত্যুসজ্জায় শুয়ে তুমি
জানিয়েছিলে বাঁচার শেষ আকুতি।
গণতন্ত্রের উৎসবে তখন সকলে
ব্যস্ত।চারদিক থেকে ইতস্ততঃ ভাবে
ছুটে আসছে মাইকের আওয়াজ,
লোকজনের বিকট চিৎকার,কানে
তালা লাগার জোগাড়।
নিরুদ,বারংবার অনেককে ডেকেছো
বটে।সেই সাথে দু'চোখে অনর্গল
অশ্রু ঝরালে।কিন্তু,তোমার সেই
ডাকে কেউ দেয়নি সারা।রাতের
জোনাকিরা জানালার ফাঁক দিয়ে
এসে তোমাকে দিয়েছে প্রহরা।
এভাবে কাটলো রাতি।শুনেছি,
জ্বলেনি আশার বাতি।
বলবো কী,নিরুদ,তার কাছ থেকে
শ্মশানে তোমার ঠিকানা জেনে
এখানে এসে দেখি,তুমি শুয়ে
আছো নির্বিকারে,প্রজ্বলিত চিতার
উপরে।দাউ দাউ করে জ্বলছে
চিতার আগুন।
বাকরুদ্ধ।বলতে পারিনি,‘উঠে
এসো।যেতে হবে ভোট দিতে,
গণতন্ত্রের উৎসবে’।জানি না,
তাতে গণতন্ত্রের হলো কতটা
ক্ষয় ক্ষতি।