দেশবিদেশ ঘুরে এসে সেই
অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করে
দেওয়া  ভবঘুরে কাকাতুয়ার
পরিণত হয়েছে অভ্যাসে।
এই তো সেদিনও সে এসেই
মরা আমরা গাছের ডালে বসে
এক অচিন দেশের গল্পকথা
শোনালো।
কী বললো শোনো, ‘দেখেছে
সে দেশে প্রায় সব জিনিসের
অগ্নিমূল্য,সেটি বাড়ছে দ্রুত,
কর বৃদ্ধির ফলে পেট্রোল ও
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সাথে
সাথে,ঠিক যেন দাবানলের
মতো।
তার বুদ্ধি বেশ ধারালো।সে
ভেবে বললো,'জানো,এ ভাবে
দ্রব্যমূল্য দ্রুত বাড়লে সমাজ
রেগে মেগে জ্বলে উঠবে’।
এ কথা শুনেই গুরুগম্ভীর হয়ে
জিজ্ঞেস করেছি তাকে,‘সমাজের
‘জ্বলনাঙ্ক’ কত?
বিদঘুটে প্রশ্ন শুনেই সে তাজ্জব!
চোখ ছানা বড়া।উত্তর দেবে কী?
-জানলে তো!এ ব্যাপারে বলবো
কী,সেতো আমারও অজানা।
কাকাতুয়া কে বিদায় দিয়ে দেখি
জ্বলনাঙ্কের এই ভাবনাটি কালো
মেঘের মতোই আমারও মগজে
জমছে বেশ।ঝড় বহে যাবারও
বিশাল সম্ভাবনা।
বিলম্ব না-করে তার সুরক্ষার
বন্দোবস্ত করতে এক কাপ চা
নিয়ে বসে ভেবেছি বিজ্ঞানীরা
পদার্থ গুলির ‘জ্বলনাঙ্ক’ নির্ণয়
করে যে সুদীর্ঘ তালিকা তৈরি
করেছেন,সেটিতে তার কোনও
উল্লেখ আছে কিনা দেখতেই
ক্ষতি কি?
বলবো কী,সমগ্র বিন্ধ্য পর্বতে
বিশল্যকরণীর মতোই খুঁজেও
পাইনি সে তালিকায় সমাজের
জ্বলনাঙ্কের স্থান কোথায় আর
সেটি কত?
বলছি তোমাকে,এ কাজে ব্যর্থ
হয়ে তখনি ভেবেছি,এই নিয়ে
গবেষণা করতে ক্ষতি কী?তাই
এ-কাজে নেমেছি।
নিশ্চয় বুঝেছ,গবেষণার বিষয়,
‘সমাজ-এর ‘জ্বলনাঙ্ক’ নির্ণয়’।
এটি মোটেই সহজ নয়।
কি হলো?এ কথা শুনেই ভয়ে
আঁতকে উঠছ বুঝি?তা হলে
খুলেই বলি,খুঁটিনাটি সহ সবই,
একেবারে সোজাসুজি।
শোনো,এই ‘জ্বলনাঙ্ক’ সম্পর্কে
বিজ্ঞানের বই-এ বলা আছে,
কোনও বস্তুতে ক্রমাগত তাপ
দিলে তার উষ্ণতা ক্রমাগত
বাড়তে বাড়তে একটি সময়
সহ্য সীমা ছাড়ালে তখনি সে
দপ করে জ্বলে উঠে।উষ্ণতার
সেই সহ্য সীমা কে বিজ্ঞানীরা
‘জ্বলনাঙ্ক’ নাম দিয়েছেন।খুব
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,দহন সংক্রান্ত
আলোচনায় কাজে লাগে।
জ্বলনাঙ্কের ভিত্তিতে পদার্থের
তালিকাটি ঘেঁটে দেখেছি,অল্প
উষ্ণতাতে জ্বলে উঠলে সেটি
‘দাহ্য পদার্থ’।
শোনো,এই গবেষণার কাজে
নেমেছি।মনে হয়,এ গবেষণায়
আমাকে বাইরে থেকে তাপ
প্রয়োগ করতে হবে না।
বাঁচা যাবে।ঝঞ্ঝাট ও জ্বালানী
দুই-ই এ ক্ষেত্রে অন্তত বাঁচবে।
তবে,তাপের সুব্যবস্থা ঠিকই
করা আছে।চুল্লীর মতো সেটি
জ্বলছে বেশ বহাল তবিয়তে।
কাগজ,কলম আর থার্মোমিটার
নিয়ে বসেছি,সমাজের উষ্ণতা
মেপে লিপিবদ্ধ করতে।তাতেই
হয়তো কাজ মিটে যাবে।
শোনো,গবেষণার জন্য একটি
অচিন দেশকে বেছে নিয়েছি।
জানতে চাও,সে দেশকে বেছে
নেওয়ার কারণ?
তবে বলি শোনো,রীতি মতো
বিজ্ঞানের জার্নালে গবেষণাপত্র
ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখেছি,সেখানে
হেলেদুলে নেচে খেলে জনগণের
উপর করের বোঝা চেপে বসে
দ্রুত লয়ে।এভাবে চললে হয়তো
অচিরে ছাড়াবে সেই সমাজের
সহ্য সীমা।তখন শুরু হবে চূড়ান্ত
বিদ্রোহ।সমাজ জ্বলে উঠবে।তখন
জ্বলনাঙ্ক মেপে করবো লিপিবদ্ধ।