রাখঢাক না রেখেই বলতে
ইচ্ছা করে আজও বহু দেশে
এবং কোনও কোনও সমাজে
গুরুদেবদের যথেষ্ট প্রাধান্য।
তাদের কর্মকাণ্ড দেখেই মনে
হয় এ জীবন যেন ধন্য।
শুনেছি অল্প-বিস্তর যজমানও
আছে সবার।সেই সংখ্যাবৃদ্ধির
সাথে সাথেই বহু গুরুদেবের
নামডাক একেবারে গুণোত্তর
প্রগতিতে ছড়িয়ে পড়ে।
অন্য অনেকের সাথে তাদের
আয়ের নাকি বিস্তর ফারাক।
গুরুদক্ষিণার থেকে যার যা
আয় রোজগার,তাতেই চলে
তাদের সংসার।
আর তাদের কী দায়দায়িত্ব?
শুনবে তবে?রাজাদের চেয়ে
কোনও অংশে কম কিসে?সব
যজমানদের লঘুগুরু পাপপুণ্য
সবই নাকি জোটে গুরুদেরই
কপালে,চুম্বকের মতোই নাকি
টেনে ধরে।সবার সে পাপের
ভার কম কিসে?গুরুদেবদের
ন্যুব্জ হবার জোগাড়।
শুনেছি তাতে আবার সেসব
যজমানেরা যদি বিপদে পড়ে
তখন গুরুদের বাড়ে আরও
দায় দায়িত্ব।দেবতাদের খুশি
করতে মন্ত্র এবং স্তোত্র পাঠ,
স্তব,‘ওঁ শান্তি’ স্তুতি ও যজ্ঞ
করা ছাড়া গত্যন্তর কী?
রাতদিন সেসব কাজ করতে
হয় ঘরে ঘরে যজমানদিগের
মঙ্গল কামনায়।এই অবস্থায়
বলো,কোনও গুরুদেব রাতে
কি একটু নিশ্চিন্তেই ঘুমোতে
পারে?
ভাবো একবার,তারা তাদের
ভালোমন্দ ভাববার অবকাশ
পায় কোথায়?
জনসেবায় উৎসর্গীকৃত প্রাণ।
যজমানদের কল্যাণেই সেবা
করতে হয় বহু দেবদেবতার!
বলো,সব কাজ একা মেটাবে
এমন সাধ্য কার?
শোনো,দুর্ভোগও কাকে বলে?
ক’দিন আগেই খবরটা এলো,
এক দেশে জনগণেরা পড়েছে
বিপাকে।জনপ্রতিনিধি নির্বাচন,
সরকার গড়ার প্রয়োজন।যদি
ভুলভ্রান্তি হয় দুর্ভোগ জুটবেই
তাদের সকলের কপালে।তাই
সকলে ঠকঠক করে কাঁপছে
ভয়ে।
এ খবর শুনে,কিছু গুরুদেবের
কপালেও পড়লো চিন্তার ভাঁজ।
যজমানদের সুরক্ষার দায়!চুপ
করেও থাকতে না-পেরে তারা
বসলেন একসাথে যজমানদের
স্বার্থে।কানাঘুষো শুনি,সকলেই
দায়িত্ববান।ভাবি,হয়তো তাই।
নয়তো গুরুদেবরা কি মিলতে
পারেন একসাথে?
সকলেই ভাবলেন,যজমানদের
বিপদের সম্ভাবনা।তারা যদি
বিপাকে পড়ে,তবে টান পড়বে
প্রণামী ও গুরুদক্ষিণায়,সেসব
একই সূত্রে বাঁধা কিনা!সেজন্য,
জান কবুল করে যজমানদের
সমস্যার থেকে উতরে দিতেই
হবে।বিনিময়ে,সে গুরুদেবদের
অনেকে ভেবেছে,প্রণামীর বাক্সে
প্রণামী যা জুটবে,তাকে তাঁরা
করবেন ভাগ-বাটোয়ারা,সেই
গুরুদেবদের যজমান সংখ্যার
আনুপাতিক হারে।
সংকট শিয়রে।ভিন্ন মতামতও  
বাঁশের কোঁড়ের মতোই মাটি
ফুঁড়েই বেরিয়ে আসতেও কি
সময় লাগে?
সূক্ষ্ম হিসাব।জটিলতার আছে
কি তাতে?তবুও বাঁধে স্বার্থের
সংঘাতে।
হায়রে,গণতন্ত্র!গঙ্গাজল টুকু  
এখন শুদ্ধ না।গঙ্গাতেও স্নান
সেরে পবিত্র হওয়ার সুযোগ
টুকুও রইলো না।
শুরু হলো তাদের জমজমাট
বিতর্ক।ফুলে ফেঁপেও উঠলো,
একেবারে ফুলুরিদের মতো।
শুনি,জোট ঘোঁট হতেও পারে
শেষমেশ।
বলি,দুর্ভাগা দেশ হলে এখন
জনগণের কথাও কে ভাবে!