দেখে অবাক হয়ে ভাবছি
‘কেন এতো ভিড় এখন লাশকাটা ঘরের
সামনে? কেন বহু মানুষ দাঁড়িয়ে ঘরের
দেওয়ালে ঠুকছে মাথা? বুকে কি হলো
গভীর ক্ষত?’
আগেও দেখেছি অনেককে যখনি তাদের
নিকট জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে,
শবদেহ সৎকারের লাগি’ পোস্টমর্টেম
রিপোর্ট প্রয়োজন দাঁড়াতো সেসময় তারা
উদ্বিগ্ন হয়ে এখানে বসে থাকতো। তবে
এ দৃশ্য তো দেখিনি আগে।
ভাবছি যখন সে কথা, দেখি কাকাতুয়া,
কোত্থেকে উড়ে এসে মরা আমড়া গাছে
বসে বললো, ‘সেকি! দেখনি এ বিশ্বজুড়ে
এখন চলছে কী?
ক্ষমতাধরদের দৌরাত্ম্য। সমাজের বুকে
যেন গভীর ক্ষত না-করে থামবে না।
অকারণে তারা পায়ে-পা বাঁধিয়ে করছে
যুদ্ধ। মরছে অজস্র সৈন্য সেনা’।
জিজ্ঞেস করেছি পাখিকে, ‘সঠিক সংখ্যা?’
বললো পাখি, ‘হতাহতের সংখ্যা যে কত
সঠিক বলা যাবে না’।
সে অবগত করলো, এ যুদ্ধ যত গড়াচ্ছে
বহু দেশে প্রকট হচ্ছে জ্বালানী সংকট।
শীতপ্রধান দেশগুলোতে যত মানুষ মরছে
এ যুদ্ধে এখন তার চেয়েও বহু গুন মরবে
এ শীতে।
অর্থনৈতিক অবস্থা? এ আবহে তালা ঝুলতে
শুরু হলো অগণিত কলকারখানায়।
মুক্ত বিশ্ববাণিজ্য? সেও প্রায় স্তিমিত, এখন
বন্ধ হওয়ার দোরগোড়ায়’।
একথা শুনে পা-দুটো কেঁপে উঠলো ঠক ঠক
করে। ভাবতে কষ্ট হলো আরও কত কী যে
উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে শিয়রে।
কোনক্রমে নড়বড়ে খুঁটি ধরে বসে অসহায়ের
মতো তার মুখের দিকে চেয়ে থেকেছি। শুনেছি
পাখির মুখে, দেশে দেশে হু হু করে বাড়ছে
বেকারত্ব। দারিদ্র?- সেও লাগাম ছাড়া।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি? বাড়া ভাতে ছাই সেও ছড়ায়।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সেও কি আর বাদ যায়?
এসবের কষাঘাতে ও ক্ষুধার তাড়নায় বিশ্বে
এখন মরছে মানুষ লাখো লাখো।
বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতেও হয়তো নেই আর বেশি
বাকি। কে জানে, পারমানবিক যুদ্ধও শুরু
হবে নাকি?
যতই বুক ধিকিধিকি করুক না-কেন একথা
সত্য  হত-দরিদ্র মানুষদের দুর্ভাগ্য রয়েছে
বরাতে!
ক্ষতে প্রলেপন? সে কি আর সহজে জোটে?
যত দিন গড়াচ্ছে ক্ষত পৌঁছচ্ছে গভীরে।
পচে গলে হচ্ছে একাকার।
কাকাতুয়া বলে গেল, সে নাকি দেখেছে এমন
ঘটনা ঘটছে আকছার’। এসব শুনলে হাড় হিম
হওয়ার যোগাড়।
ঘরের ভেতরে নজর যেতেই চক্ষু চড়কগাছ!
হলো কী? দীর্ঘসময় কে শুয়ে রয়েছে এখানে
লাশকাটা ঘরের ডিসেকশন টেবিলে?
'মানবতা'? মরেছে নাকি? যা দিনকাল সেও
হতে পারে, আশ্চর্য কী! পোস্টমর্টেম হতে কি
এখনও বাকি? ভাবছি, পচে গলে এ মরদেহ
থেকে দুর্গন্ধ বের হবে নাকি?