প্রায়শ দিনে নিজের স্মৃতি-হারিয়ে
বৈষয়িক বিষয়াদি সমূহ সব ভুলে
ভৌগোলিক সীমানার গণ্ডি ছাড়িয়ে
রমণী পৌঁছতো বিস্মৃতির অতলে।
যৌবনে মনির খনি ছিল স্মৃতিতে
ঝড়ের তাণ্ডবে উত্তাল সমুদ্র-স্রোতে
ডুবন্ত তরণীর মতো দোলা শেষে
তার স্মৃতি তলিয়ে গেল অবশেষে।
একদিন সবার অলক্ষ্যে সেই রমণী
চললেন, যেন গৃহত্যাগী সন্ন্যাসিনী।
পথে পড়ে গিয়ে মস্তিষ্কের আঘাতে
অজস্র রক্তক্ষরণ হলো সাথে সাথে।
রক্তের ধারা উড়ন্ত উল্কার মতো
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে থামলো অবশেষে।
টলমল পায়ে আবার চলতে গিয়ে
স্টেশনে এসে অজ্ঞান হলো শেষে।
রমণীর মস্তিষ্কের স্মৃতির সৌধটি
মাতৃজঠরে লালিত ভ্রূণের মতো।
গুরুতর ঘাতে অতিশয় জর্জরিত
হয়ে স্রষ্টার কাছে করলো মিনতি।
জ্ঞান ফেরার পরে দেখলো রমণী
শুয়ে আছে হাসপাতালের শয্যাতে।
কে,কখন রমণীকে পৌঁছে দিয়েছে
সেথায় সেই খবর নেই স্মৃতিপটে।
সন্তান তার খোঁজে বেরলো সদলে
আত্মীয় পরিজন সহ সকলে মিলে।
তল্লাশ করেও তার হদিশ না পেয়ে
বিষণ্ণ মনে তারা ফিরলো সকলে।
রমণীর জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে
ভাবলো তার সন্তান রয়েছে পাশে।
সে ভ্রান্তির বশে কম্পমান দু’হাত
বাড়ালো কত কী বলবার আশে!
অন্তর্যামী তখন অসীম স্নেহ বশে
পৌঁছলেন সেথায় মানবীর বেশে।
রমণীর স্মৃতির পুনরুত্থানের জন্য
মানবী চেষ্টা চালালেন অসামান্য।
গোয়েন্দাদের খানা তল্লাশির মতো
রমণীর স্মৃতি তল্লাশে ব্যস্ত সতত।
মানবী মনের অতল গহ্বর থেকে
স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন একে একে।
রমণীর পুত্রের সন্ধান করা বাকি
সেই তথ্য-তল্লাসেও দেন নি ফাঁকি।
মানবী সেই অসমাপ্ত কাজটি সেরে
পুত্রকে আনলেন মা-র বক্ষ দুয়ারে।
স্নেহ ও ভালোবাসার অক্ষয় সদনে
স্বর্গ নেমে এসেছিল সেই সন্ধিক্ষণে।