দেখেছি একটি দৃশ্য ভাই!
সেই কথাটাই বলতে চাই
গা শিয়রে উঠবেই জানি
তবুও বলতে হবে এখনি।
বনে ছিল একটি বাঘিনী
কাল তার খাদ্য জোটেনি।
না-খেয়ে কাটালো রজনী
তাই সে ভয়ঙ্কর রাগিণী।
আজ গেল খাবার খোঁজে
সারা দুপুর বদ মেজাজে
আজও খাবার না-পেলে
জ্বালা ধরবেই তার পিলে।
একটি ঘোড়া ছিল অদূরে
সে’টি তখন আতুর-ঘরে।
সহ্য করে প্রসব-বেদনাকে
জন্ম দিলো এক শাবককে।
সদ্য প্রসব মিটলো তার
কাটেনি তখন কষ্ট-ভার,
শাবকখানা বসেই আছে
জননী,সন্তানটিকে চাটছে।
নবজাতকটি নড়ে চড়ে
মা’র গন্ধ শরীর জুড়ে
পা-গুলি খুবই নড়বড়ে
উঠতে গেলে যায় পড়ে।
বাঘিনী দেখেছে ঘোড়াকে
ছুট লাগালো সেই দিকে
ধরে ফেলবেই জন্তুটাকে
উদরে পুড়বেই ঘোড়াকে।
মা-ঘোড়াটি তার ভয়ে
ছুটলো দূরে বাঁচার দায়ে
স্নেহ-রজ্জুতে পড়লো টান
দূরে দাঁড়ালো সে সটান।
বাঘিনী এলো আতুর ঘরে
ফুলের গন্ধেই ম-ম করে
শিশুকে দেখল নেড়েচেড়ে
করবে কী সে, তারপরে?
ভয়ে কাঁপছি যে থরথরি
দেখেই সে’সব ভয়ে ডরি,
তখনি মোর দু’চোখ মুদি
ভাবছি তাকে মারে যদি!
দু’ভাগ হয়ে মোর হৃদয়
তর্ক জুড়লো-হবে সদয়?
কি করবে সেই বাঘিনী?
অভুক্ত সে,খাদ্য-সন্ধানী।
মা-ঘোড়ার হৃদয়-জুড়ে
দুঃখ-সরোবর নড়ে চড়ে
বাঘিনীর নাগালে শাবক
বাঁচতে দেবে কি ঘাতক?
মা-ঘোড়ার চোখে অশ্রুজল
ভরা সাগরটিতে অথৈ জল।
সে দুঃখ-কষ্টে ছুড়ছে মাথা
চির ধরবে মাটি,জানা কথা।
শিশু তখন খিদের জ্বালায়
সইতে না-পেরে ছুঁড়ছে পা
বাঘিনীর সেই দুপুর বেলায়
শরীরে লাগলো কতক ঘা।
তবু বাঘিনী রইলো নীরব
শাবককে বলেনি-বেয়াদব
মারি যদি একখানা থাবা
মাথা ঘুরে রইবি বোবা।
ভাবলো বুঝি সেও জননী
অপত্য স্নেহ যে কতখানি
জেনেছে সেই নাড়ির টান
জানাবে সে তাকে সম্মান।
বুঝলো বাঘিনী তার ভয়ে
মা-ঘোড়াটি আছে অদূরে,
তার ভয়ে আসছে না যে
ফেরত গেলেই আসবে সে।
সচক্ষে দেখেছি মিটিমিটি
যা ঘটলো সব খুঁটিনাটি
মাতৃত্বকে জানিয়ে সম্মান
মা-বাঘিনী ফেরত যান।