সেদিন ঘরে ফিরে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়েছি
বিছানায়।ক্লান্ত অবসন্ন দেহে লড়াই করার ক্ষমতা
ছিল না আর।
স্বপ্ন পরী চুপিচুপি এসে মগজকে করলো ছারখার।
বলেছি তাকে, ‘কেন এসেছিস এখন,আমার ঘুমের
ব্যাঘাত ঘটাতে’।
শাসনের ভঙ্গিতে সে আমাকে চুপ করিয়ে দিলো
নিমেষে।বাধ্য শিশুর মতো দু’চোখ বুজে ঘুমিয়ে
পড়েছি শেষে।
স্বপ্নের ঘোরে দেখেছি,ভুখা পেটে কলুর বলদদের
মতো কলের সাথে চলছে আমার কাজের ব্যস্ততা।
কাজের চাপে ক্লান্ত।বিশ্রামের জন্য বলেছি তাকে,
‘একটু দাঁড়া’।কালা বধির সেই যন্ত্রটা শোনেনি
সেকথা।অগত্যা চলেছি তার সাথে।
নির্ঝরে দেহ নিঃসৃত ফোঁটা ফোঁটা ঘাম ও রক্ত
ঝরেছে গলিত রজনের মতো।সেই নির্যাস গুলো
নালা নর্দমার পাশ দিয়ে থকথকে কালো পদার্থ
হয়ে গড়িয়ে চললো দুখের সাগর অভিমুখে।
রাজপথে জনতার ব্যস্ততা।ঘোড় দৌড়ের মতো
ছুটতে গিয়ে ওরা সকলে সেসব পায়ে মাড়িয়ে
চলে গেল অবহেলায়।রাজা বাহাদুরের বিশ্বস্ত
ঘোড়া রাজার নির্দেশে সেসব পায়ে পিষে চলে
গেল অবলীলায়।
আমি আমার ঘাম-রক্তের লাঞ্ছনা সহ্য করতে
না পারায় বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছিল।চিৎকার
করে উঠেছি,উঁহু,আ।
অবশেষ গুলি ঘোড়ার খুঁড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে
অনাদরে ফুটপাথে থেকে জমাট বাঁধলো,দেখতে
অবিকল টিকা।    
কপালে সিঁদুরের টিপ,ছিপছিপে শরীর।পথ চলতি
মানুষের ভিড়ে গেরুয়া পোশাকে এক জটাধারী
সেসব থলিতে পুড়ে কমণ্ডলু হাতে হেঁটে দুখী ও
দরিদ্রের প্রত্যাশা পূরণে কল্পতরুর মতো সটান
গিয়ে বসলো এক গাছের নীচে,শ্মশানে।
নিখাদ সন্ন্যাসী যেন।কমণ্ডলু হতে সে শান্তিজল
ছড়ানোর কালে ভ্রমে বা সজ্ঞানে জনতার ভিড়
থেকে কেহ কেহ বলে উঠলো,‘ওই দেখো,ভণিতা
করছে এক বিড়াল তপস্বী’।সন্ন্যাসী সবার গায়ে
মাথায় মন্ত্রপূত জল ছড়াবার সাথে সাথে ‘ওম
শান্তি,ওম শান্তি’বললো উচ্চস্বরে।
স্বস্তিত্বে বাঁচার একটু আশায় আমি ও শান্তিজল
নিতে তাঁর পাশে গিয়ে বসেছি সন্তর্পণে।দেখেছি
তাঁকে,ব্যস্ততার ফাঁকে কালো অঙ্গারের টিকাগুলি
পুড়িয়ে হুঁকোতে তামাক খেতে।ছাই ভস্ম যেটুকু  
কল্কিতে জমলো,সেসব ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিলো।
আবিষ্ট চিত্তে তাকিয়ে দেখেছি,টিকাগুলি জ্বললো
ধিক ধিক করে।আমার দেহের ঘাম ও রক্তের
নির্যাসের শেষ পরিণতি।ঘুম ভাঙ্গলো।