এসময় জানতে খুব ইচ্ছা করে
‘মোহ এক ভীষণ বস্তু’,সন্দেহ
আছে কি তাতে?বলি,শৈশবেই
শিক্ষক-মশাইদের কাছ থেকে
জেনেছি,জ্ঞানী ব্যক্তিরাও এর
ভয়ে সর্বদাই তটস্থ।জোঁকের
মতো আঁকড়ে ধরলে ভয়ঙ্কর,
একেবারে ক্ষত বিক্ষত করে
অনায়াসে।
জানো নিশ্চয়,তেলা বাঁশে ওঠা
বানরদের পক্ষেও কষ্টকর।তবু
বাঁশের আগায় লোভনীয় কিছু
খাদ্যসামগ্রী ঝুলিয়ে দিলে ওরা
মোহের বশে অক্লান্ত প্রচেষ্টায়  
সেই খাদ্যসামগ্রী নামাতে চেষ্টা
করে হামেশা।
এ নয় কোনও অমূলক দশা।
বলি শোনো,এ রকম উদাহরণ
ভুড়িভুড়ি,তুড়ি মেরেও উড়িয়ে
দেওয়ার মতো নয়।
এইতো সেদিন কাকাতুয়া বিদেশ
বিভূঁই ঘুরে গোধূলিবেলায় এসে
খবর দিলো,কোনও এক দেশের
রাজামশাইও নাকি সিংহাসনের
দখল অটুট রাখতে মোহে পড়ে
অনুরূপ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেও
ইতস্তত: করছে না মোটে।
জেনো,এ কাজটি সহজসাধ্য নয়,
সেজন্য বিবেককে বন্ধক রাখতে
হয়।তবুও,বলো তো,মহাজনদের
বন্ধকির এই কারবার কি থেমে
থেকেছে কখনো?
রাজামশাই-এর এক কাণ্ড শোনো।
কাকাতুয়া নাকি দেখেছে সমীচীন
নয় জেনেবুঝেও পাষণ্ডদের চোখ
রাঙানিকে নীরবে সহ্য করে সে
অবিরাম অনেক অনৈতিক কাজ
করেছে হাসিমুখে।
সেদিনের ঘটনা শোনো।বাজিকরের
নির্দেশে বিভিন্ন বিষয়ে জনগণদের
বিভ্রান্ত করতে গিয়ে তার কী দশা
হলো।
বিশাল রঙ্গমঞ্চে হয়েছে একশ ত্রিশ
কোটি লোকের জনসমাগম।আলোক
সজ্জাও উত্তম।
রাজামশাই সেজেগুজে স্টেজে উঠে
পড়ার সাথে সাথে হলো দর্শকদের
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান।গ্যালারীতে
হৈ-হৈ রব।সকলে ভাসলো আনন্দ
উল্লাসে।
তারপর?সে আর বলতে?পারদর্শী
যাদুকরের মতোই ভেল্কি দেখাতে
গিয়ে চাতুরী ধরা পড়বার পড়ে
তার বেহাল দশা।অগত্যা সে কী
আর করে?মাথা ঠুকলো মেঝেতে।
হামেশাই নাকি হচ্ছে এ দশা।
শোনো,কাকাতুয়ার মজুত ভাণ্ডার
যেন সাগরের জলাধারের মতোই
বিশাল,ফুরায় না কখনও।এইতো
সেদিন তাকে ধরে সুড়সুড়ি দিলে
তার মুখ থেকে অনর্গল বেরিয়ে
এলো রাজামশাই এর এক আজব
কাণ্ড।
অবলীলায় তার রাজ্য শাসনের
মানদণ্ড হেলে পড়লো একপাশে।
দেখেছে কাকাতুয়া,বাজিকরদের
নির্দেশে সে বাধ্য পোষ্যের মতো
তাদের সব কাজ সমাধা করছে।
হায়রে!দৈন্যদশা কোথায় পৌঁছতে
পারে!তবুও সে ভুলতে পারে না
সিংহাসনের মোহ।
জানো,কাকাতুয়ার মুখ থেকে সব
শুনে রাজাকে বলতে ইচ্ছা করে,
‘রাজামশাই!মিথ্যাচারে ভর করে
সুদীর্ঘকাল গদিকে আঁকড়ে রাখা
কষ্টকর।
রাজ্যের শাসনকার্যে পঙ্গপালদের
মতো অসংখ্য অনিষ্টকারী ঢুকে
পড়তেও পারে অবলীলায়।বলি,
বাঞ্ছা রামের সাজানো বাগানের
রক্ষণাবেক্ষণে বিপত্তির কথা কি
মনে পড়ে?তেমন দশা উপস্থিত
হলে সেসময় বুকে হেঁটেও তাকে
রক্ষা করা হবে কষ্টকর’।