ওই দেখো, চারদিকে ধর্ম ও জাতি দাঙ্গা
দাউ দাউ করে দাবদাহের মতো জ্বলছে
যেন!
যখন বিশ্ব জুড়ে নানান অন্ধ ধর্মবিশ্বাস
সমাজে মানুষের জীবনে সর্বনাশ ডেকে
আনে, সেসময় একান্তে বসে ভাবি,বেশ
আছি,‘সর্বেশ্বর বাদ’-এ অটুট বিশ্বাস নিয়ে।
‘পরম ঈশ্বর’কে খুঁজি না কখনো কোনো
উপাসনা লয়ে ।
বিশ্বাস বেঁধেছে বাসা মনে, ‘পরম ঈশ্বর
নিরাকার, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্র ব্যাপ্ত,
এক ও অদ্বিতীয় পরম ব্রক্ষ্ম, ওঁ।
বলি,নামে কী আসে যায়,যে কেহ তাঁঁকে
ডাকতেও পারে ভিন্ন কোনও নামে, এই
ধরাধামে!এ বিশ্বাস মনে বেঁধেছে বাসা,
‘এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সজীব ও নির্জীব সব
পদার্থের স্রষ্টা ‘পরমব্রহ্ম ভিন্ন অন্য কে
আর হতে পারে’?
এই বিশ্বাসে ভর করে বলি,সব পদার্থের  
অণু,পরমাণু ছাড়াও ‘ব্রহ্ম’ বিরাজ করছে
মহাশূন্যে অর্থাৎ স্রষ্টার অস্তিত্ব সর্বব্যাপী।
ভাবছি, বিজ্ঞানের ভাষায় ‘ইথার’ ছাড়া
সর্বব্যাপী অন্য কী আর হতে পারে?
বলি,সন্দেহ কী তাই,অচিরে দার্শনিকদের
সাথে বিজ্ঞানীদের এ নিয়েও শুরু হতে
পারে তর্ক যুদ্ধের লড়াই।
জানো, 'শুচি' ও  'অশুচি' শব্দ দুটি মাঝে
মাঝে ঝড় তোলে মনে! যখনি আহত হই
এদের তাণ্ডবে,ভাবি ‘যিনি এ বিশ্বের সব
পদার্থের স্রষ্টা তাঁর অভিধানে অশুচি বলে
বর্জনীয় কিছু হতে পারে কি’?
মনের বদ্ধদুয়ারকে খুলে আকাশের দিকে
চেয়ে ভাবি,এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা ‘পরম
ব্রহ্ম’কে অশুচি করতে পারে এমন সাধ্য
কার?
কারো বিশ্বাসেই আঘাত করা অনভিপ্রেত,
জানো,তাই নিজ অন্তরাত্মাকে জিজ্ঞেস করি
অশুচি থেকে মুক্তির জন্য ‘গঙ্গাস্নান’ করা,
ভ্রান্ত বিকার নয় কি?
এভাবে একাধিক প্রশ্ন মনের দুয়ারে কড়া
নাড়ে।ভাবি, ‘মানুষে মানুষে দুরস্ত,সমগ্র
বিশ্বের এককোষী প্রাণী থেকে উন্নত সমস্ত
প্রাণীদের ভেতর যখন পরম ব্রহ্ম নিজেই
উপস্থিত তখন প্রাণীদের, কে উন্নত,কেবা
হীন এই বিভেদ ভাবনাটি কি সমীচীন’?
কোন সূত্রে মানুষে মানুষে এতো ভেদাভেদ,
হিংসা কিবা ঘোর বিদ্বেষ ?
মনে এ প্রশ্নও জাগে,‘ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্র
এমনকি প্রত্যেকের অন্তরে যিনি বিরাজমান
তাঁর আরাধনার জন্য কি যাওয়া আবশ্যক
কোনও ধর্মীয় উপাসনালয়ে? ভাবি,এসবের
উত্তর অজানা হলে অন্ধদের মতোই খুঁজে
বেড়ানো ছাড়া আর গত্যন্তর কী ?
জানো,যেখানে এ বিশ্বের সব বিষয়ের উত্তর
বিজ্ঞানীদের জানা হয়নি এখনও,সেই অর্থে
‘বিজ্ঞান’ আজও তার নাবালকত্বকে কাটিয়ে
উঠতে পারেনি এখনও।
‘দর্শন’ এর সাথে ‘বিজ্ঞান’-এর বিবাদ তার
জন্ম লগ্ন থেকে। বলি,চলুক ওদের সহজাত
বিবাদ। বিজ্ঞানের অগ্রগতি হলে ‘দর্শন’ দুই
কদম পিছিয়ে আসবে, ক্ষতি কি তাতে?
ভাবতে অবাক লাগে,বিজ্ঞানকে আরও কত
দূর যেতে হবে!
এই বিশ্বের অজানা সব রহস্য ছাড়াও এই
সৌরজগতের গণ্ডি পেরিয়ে ‘আকাশ গঙ্গার’
সব রহস্য ভেদের পরও মিলবে না স্বস্তি।
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের
সংখ্যা অগণিত। ওদের ঘূর্ণনপথও কত না
ভিন্ন । কে জানে, কোথায় কত কী রহস্য
রয়েছে লুক্কায়িত?
কে বলতে পারে, এসবের সমাধানের জন্য
লাগবে কতটা সময়? বলা কষ্টকর, আদৌ
উদ্ঘাটন করা যাবে কিনা এ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের
সব গুপ্ত রহস্য।
এ অবস্থায় বিজ্ঞান ও দর্শনের বিবাদ এড়িয়ে
যাওয়া ছাড়া আর গত্যন্তর কী?
বলি, ফিরে যাই তবে বিশ্বাসের আঁতুড়ঘর।
শুনি,বহু ভিন্ন পথে ঈশ্বরের উপাসনা করে
একই অভীষ্ট লক্ষ্যে উপাসকেরা পৌঁছে যেতে
পারেন। এই বিশ্বাসে ভর করে বলতেই হয়,
ধর্মমত ও পথ ভিন্ন হলেও এভারেষ্ট পর্বতের
চূড়ার মতো একই অভীষ্ট লক্ষ্যে যদি পৌঁছানো
সম্ভব হয় তবে ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিশ্ববাসীর
রেষারেষি অনাকাঙ্ক্ষিত নয় কি?
বিশ্ব জুড়ে বহু জাতি এবং বহু ধর্মের মধ্যে আজ
চলছে রেষারেষি। ভাবি, এদের পরিসমাপ্তি
ঘটবে কবে?