প্রিয়তমা,
বলছি,আজ দুপুরেও আবার ঘুমিয়ে পড়েছি
গাছের ছায়ায়।তবে সে সময় ঘুম দীর্ঘায়ত
হয়নি একেবারে।স্বপ্নে দেখেছি এক যমালয়।
তখন ভয় ও আড়ষ্টে আমি যেন চুপসানো
বেলুন।
দেখেছি যম-দূতের ঘেরাটোপে বিচার সভায়
শত শত দুই পা-ওয়ালা জন্তু-জানোয়ারের
চলছিলো বিচার।
একেবারে অত্যাধুনিক বিচার ব্যবস্থা।একজন  
রাজসাক্ষীকে দেখেছি।সে এই বিচার সভায়  
ত্রিমাত্রিক তথ্যচিত্রের মাধ্যমেই একে একে
তুলে ধরলো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাদের
অপরাধের বহু সাক্ষ্য-প্রমাণ।
তথ্যচিত্রে পৃথিবী থেকে তুলে আনা ছবির
সাহায্যে দেখালো সে,অভিযুক্তরা কিভাবে
বিশ্ব প্রকৃতির অন্তঃস্থলে ক্ষত-চিহ্ন দিয়েছে
এঁকে।কলকারখানা থেকে ওরা আকাশচুম্বী
চুল্লীর মাধ্যমে দূষিত নানান গ্যাস করলো
নিঃসরণ।আরও দেখালো সেই অভিযুক্তরা
কিভাবে সমগ্র বিশ্বের বনভূমিগুলিকে একে
একে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে বায়ুমন্ডলকে করলো
বিষের আঁকর।
প্রিয়তমা,ছবিগুলোতে দেখেছি সেসব বিষের
ঝড়-ঝাপটা সহ্য করতে না-পেরে নিমেষে
ধ্বংস হলো কত প্রজাতি।বলবো তোমাকে
লোভ-লালসায় মত্ত বিশ্বের সেই আগ্রাসীদের
উৎপীড়নের আরো কাহিনী।
প্রিয়তমা,জানো সেই অভিযুক্তদের আচরণ
কতটা ঘৃণ্য।ওরা ওদের রাসায়নিক শিল্পের
বজ্যসমূহ ঝর্ণাধারার মতো নিয়ত নালার
মাধ্যমে নদীতে চালান করে বিষাক্ত করলো
সমগ্র বিশ্বের নদী ও সাগরের জল।তাদের
নির্বুদ্ধিতায় গজালো এক মারণ কল।
প্রিয়তমা,‘মিনামাটা’ রোগটির নাম শুনেছ
নিশ্চয়।ভয়ঙ্কর এই রোগটি প্রথম ছড়ালো
জাপানের মিনামাটা শিল্পতালুকে।রাসায়নিক
শিল্পের একজন অদূরদর্শী মালিক পরিণাম
না-ভেবে কারখানায় সব উৎপাদিত বর্জ্য,
পারদের যৌগ নালা দিয়ে চালান করলো  
নদীর জলে।ভয়ানক বিষ।অচিরে সেই বিষ
ঢুকলো মাছের শরীরে,বিষাক্ত সেই নদীর
জল গলাধঃকরণ করার ফলে।
প্রিয়তমা,জানো,রাত কাটতে না-কাটতেই
পারদের বিষক্রিয়ায় জলে ভাসতে লাগলো
অজস্র মৃত মাছ।
জেলেরা উল্লাসে সেই মাছগুলি ধরে বিক্রয়
করলো হাটে বাজারে।সস্তায় বেচা কেনা।
প্রিয়তমা,তখন লোভকে সম্বরণ করতে পারে
ক’জন?সেই মাছ খাবার পরে দেখা দিলো
স্নায়ু রোগ,পেট ব্যথা,গা-বমি ভাব ও মাথার
যন্ত্রণা।
প্রিয়তমা,বদ্যিদের কোনও ওষুধে নিরাময়
হলো না।অজস্র মানুষ মারা গেল।বিড়াল,
কুকুর কিংবা কাক,চিল এই সব পাখি সেই
মাছদের খেয়ে তারাও যন্ত্রণায় কাতর হয়ে
বাঁচার তাগিদে ঝাঁপিয়ে পড়লো পুকুরে
ও নদীর জলে।বিধি বাম।সেই মিনামাটার
কবলে পড়ে সবাই চলে গেল যমালয়ে।
বিরতির পরে আবার বসলো বিচার সভা।
সেখানে আরও যেসব বিষয় উঠে এলো,
প্রিয়তমা,তোমাকে বলবো সেকথা,এবার
আমাদের বিরতির পরে।
                                 ইতি
                         তোমার প্রাণেশ্বর