প্রিয়তমা,
তোমাকে গতকাল আমি বলেছি সমাজের
উপর অর্থনৈতিক বৈষম্য কিভাবে ভয়ানক
প্রভাব ফেলে,সে বিষয় রাজসাক্ষীর বক্তব্য
তুলে ধরে আজ বলবো তোমাকে।
রাজসাক্ষী সভায় যমরাজের মুখোমুখি হয়ে
বিশ্বের দরিদ্রদের দুর্বিষহ অবস্থা জানালো।
সমীক্ষার কাজের সময়ে সে নাকি দেখেছে
ধোঁয়াশার পর্দা বিশ্বকে ঢেকেছে।তার মুখে
শুনেছি,সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে নাকি  
আজও পৌঁছায়নি সুশিক্ষার আলো।
আকাশ তোলপাড় করে আসা এক বীভৎস
ঝড়ে পর্দাটি সরে যেতেই সে দেখতে পেল
দুঃখিনী ধরিত্রীর বুকে স্থির দাঁড়িয়ে একটি
নগ্ন সভ্যতার মূর্তি।সেই দেখে সম্ভ্রম বোধে
বনানী এবং বনের পশুপাখিরা নত মস্তকে
তাকালো মাটির দিকে।
প্রিয়তমা,তুমি হয়তো আঁতকে উঠছ একথা
শুনে।আশ্চর্য হতে হবে,তখন বিভিন্ন দেশের
হাল-হকিকত জেনে।
রাজসাক্ষীকে আমি বলতে শুনেছি,বহু অর্থের
বিনিময়ে কতিপয় বিত্তশালী দরিদ্রদের ধোঁকা
দিতে উন্নত প্রযুক্তি সহ বোকা-বাক্স হস্তগত
করে বিনোদন জগতকে সুলভে পৌঁছে দিতো
দরিদ্রদের ঘরে ঘরে।ওরা প্রত্যাশা মতো ফল
পেতো অচিরে।
আফিং-এর নেশা।সেই বিনোদন জগত পেয়ে
দরিদ্ররা খুশিতে হতো বিভোর।তখনি ঘনিয়ে
আসতো দুর্যোগ।বিত্তশালীরা সেই রহস্য কাজে
লাগিয়ে বাজিকরের মতোই ইশারায় ওদেরকে
পুতুলের মতো নাচাতো দিনভর।
প্রিয়তমা,রাজসাক্ষীর বিবরণ থেকে শুনেছি,
পেটের দায়ে আর দারিদ্রের সাথে সংঘাতে
পর্যুদস্ত দরিদ্ররা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে দেশ
বিদেশে কাজের খোঁজে ঘুরে অবশেষে কলুর
বলদের মতো বিত্তশালীদের ঘানিও টানতে
বাধ্য হতো।  
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে সে দেখেছে,দরিদ্রদের
শ্রমের বিনিময়ে উৎপাদিত সম্পদ নিয়মিত
ফিল্টার কাগজের ভেতর দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে  
পরিস্রুতের মতো জমতো পুঁজিপতিদের ঘরে,
আর সেই হত-দরিদ্রদের দেহ নিঃসৃত ঘাম
অবিরাম গড়াতো মাটিতে।
অবস্থা কখনও এমনও হতো মানুষ অনিচ্ছা
সত্ত্বেও চক্রব্যূহের ভেতর ঢুকে পড়ে পরিণত
হতো নির্মম ক্রীতদাসে।অন্ধকূপে বন্দি দশায়
ওরা বেঁচে থাকতো পরজীবীর মতো।প্রতিবর্ত
ক্রিয়ায় ওদের জন্য ধার্য কাজ করা পরিণত
হতো ওদের নিত্যকার অভ্যাসে।
প্রিয়তমা,নারীদের জীবনেও ঘটতো অনুরূপ
দশা।এখন এটুকু থাকুক।সেসব বলবো পড়ে।
                                    ইতি
                             তোমার প্রাণেশ্বর