প্রিয়তমা,
গতকাল বলেছি তোমাকে আজ শোনাবো
এই বিশ্বে নারীদের দুর্দশার কাহিনী।জানি,    
তুমিও উদগ্রীব হয়ে সেই কাহিনী শুনতেই
রয়েছো প্রতীক্ষায়।ভয়ানক অবস্থায় এটাই
স্বাভাবিক,নির্দ্বিধায় বলা যায়।
রাজসভার সমস্ত আসন পরিপূর্ণ।থমথমে
পরিবেশ।রাজসাক্ষীর বক্তব্য শুনতে চেয়ে
সবাই বসে আছে উদগ্রীব হয়ে।উৎকণ্ঠায়
সভাস্থলে যমরাজ করলো পদচারণা।সেই
দেখে সবাই কাঁটালো ভয়ে।
পরে বক্তব্য রাখার সবুজ সংকেত পেয়ে  
যমরাজকে বললো রাজসাক্ষী,ধরণীতে
গরীব নারীদের প্রতি কেন এবং কিভাবে
নিয়মিত সামাজিক অপরাধ ঘটে।সেইসাথে
কী ভয়ঙ্কর কষ্ট সহে ওরা বাঁচে।
যমরাজকে রাজসাক্ষী বললো,শ্রমজীবীদের
ঘাম ঝরা শ্রমের বিনিময়ে যখন কতিপয়
মানুষের কাছে প্রভূত অর্থ পৌঁছলো,জগতে
সৃষ্টি হলো ব্যাপকতর আর্থিক বৈষম্য।তখন
বিত্তশালীরা তাদের সেই মজুত অর্থ দুহাতে
ঝর্ণা ধারার মতো নিয়মিত ঢেলে চেয়েছে
তাদের ভোগের বাসনা মেটাতে।
আবার যে নারীদের শৈশব থেকে কেটেছে
দারিদ্রের সাথে চরম সংঘাতে,উদাসী সেই
নারীরা সদা তাকিয়ে দেখলো এই পৃথিবী
অদ্ভুত ফ্যাকাসে।
ওদের চারদিকে ছড়ানো অজস্র ক্যাকটাস।
দেখেছে সে,ওরা নিয়ত লতা-গুল্মের মতো
অবলম্বন খোঁজে,পেতে চায় শুধুমাত্র বাঁচার
আশ্বাস।
ওরা কখনও জানে না,ওদের জন্য পাতা
আছে ঘুঘু পাখি ধরার মতো অজস্র ফাঁদ।
সামগ্রিক অবস্থা দেখে কালো ওড়নায় মুখ
ঢেকে বিশ্বকে ধিক্কার জানিয়ে ফিরে গেল
লজ্জাবনত চাঁদ।
ওরা ফাঁদে ধরা পড়ে।সর্বশক্তি দিয়ে জাল
ছিঁড়ে বেরোতে ব্যর্থ হয়ে ফেলে দীর্ঘশ্বাস।
তবুও ওরা বাঁচার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ধরে
রাখে নিজেদের আত্মবিশ্বাস।
ভয়ানক বুভুক্ষা যেন ওদের গিলতে আসে,
অন্যদিকে প্রলোভন,ইজ্জত বিসর্জন দিয়ে
অর্থ উপার্জনের হাতছানি।কী করবে নারী?
একটি পথ বেছে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা।
ভাবি,এ যেন ওদের প্রতি বিধাতার নির্মম
নিষ্ঠুরতা।
সুস্থ ভাবে বাঁচার সব চেষ্টা বিফলে গেলে,
মানুষ বাঁচার জন্য বেছে নিতে বাধ্য হয়
শেষ পথ।অশ্রু ঝরা চোখে নীরবে চলে
যায় আঁধার গলির আঁস্তাকুড়ে।
প্রিয়তমা,রাজসাক্ষী যমরাজকে বলতে বাধ্য
হলো,ব্যাধিগ্রস্ত সমাজে কতিপয় উন্মত্ত বর্বর,
ভদ্রলোকের বেশে সুখের পানসি চড়ে ওদের
সামনে এসে দাঁড়াতো হেসে।
অর্থের গরিমায় বর্বরেরা অকাল বসন্ত দেখে
হতো উৎফুল্লে মাতোয়ারা।শুরুতে কোকিলের  
ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও স্বরূপে ফিরে যেতে
ওদের কালক্ষেপ হতো না।
প্রিয়তমা,রাজসাক্ষী জানালো বর্বরদের নখের
আঁচড়ে যুগ যুগ ধরে ক্ষতবিক্ষত হলো নারী।
রক্ত ঝরলো।দুর্বৃত্তরা জঘন্য লালসার নিবৃত্তির
জন্য কখনও নারীদের কলিজাকে টেনে ছিঁড়ে
ফেলে অবশেষে অচল পয়সার মতো অবজ্ঞায়
ওদের ছুঁড়ে ফেলতো ভাগারে।
রাজসাক্ষী বললো,সমাজে অবহেলিত নারীদের
জীবনের রসায়নকে বদলাতে হলে গড়েপিটে
আবার নতুন ভাবে গড়তে হবে এই বিশ্বকে।
বিশ্বে সব নির্যাতিতদের লড়াই-সংগ্রামের মধ্য
দিয়ে এই অসাম্যের মূলোচ্ছেদ করা ছাড়া সে
আর কোন গত্যন্তর দেখছে না।
প্রিয়তমা,আজ এটুকুই থাকুক।কাল আবারও
কথা হবে।
                                          ইতি
                                   তোমার প্রাণেশ্বর