প্রিয়তমা,
এই সমাজে ক’জন মানুষ আছেন যারা
লোভ এবং ব্যক্তি-স্বার্থ বর্জন করে সবল  
দেবদারুর মতো দাঁড়িয়ে আছেন?দেখো
অধিকাংশ মানুষ লতাগুল্মের মতো লোভ
ও ব্যক্তি-স্বার্থ আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছে।
তোমাকে বলবো কী এ-ব্যাপারে সমাজে
কেহই কম যায় না কোনমতে।
লোভ ও ব্যক্তি-স্বার্থের ব্যাপারে যে যতই
ভাবুক না কেন অধিকাংশই মিথোজীবীর
মতো পারস্পরিক সাহচর্যে বেঁচে থাকতে
চেষ্টা করে।বিশ্বকে গোগ্রাসে গিলতে চায়      
না।কিন্তু এ-ব্যাপারে অসাধু ব্যবসায়ীরা
হলো পাকা খেলোয়াড়।সেদিন রাজসাক্ষী
বললো,বনের পশুরাজকেও তাদের কাছ
থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার।
প্রিয়তমা,তুমি রেসের ঘোড়া দেখেছ।পাকা
সড়কেও ওরা ছুটতে পারে।সেজন্য ওদের
পা-গুলির নীচে লোহার ক্ষুর পরানো হয়
গজাল ঠুকে ঠুকে।
হয়তো সেই ভাবনাটা বেশ ঢুকেছে অসাধু
ব্যবসায়ীদের মগজে।শৈশব থেকে ভেজাল
খাদ্য দ্রব্য এবং ঔষধ সেবনে অভ্যস্ত হয়ে
যেন মহীরুহের মতো বেঁচে থাকতে পারে,
মানুষের মধ্যে সেই অভ্যাসটা গড়ে দিতে
যেন ওরা আদাজল খেয়ে নেমেছে নিবিড়
গবেষণার কাজে।
ওদের অধিকাংশ হয়েছে ভেজালে বিশেষজ্ঞ।
শিশুদের সংগ্রামী জীবনের ভিতটা গড়তে
নির্ভয়ে ভেজাল মেশাচ্ছে শিশুদের দুগ্ধজাত
খাবারে।রোগ নিরাময়ের ঔষধেও ভেজাল
মেশাতে এখন ওরা সিদ্ধহস্ত।
প্রিয়তমা,এটা জেনে রেখো, সদা মুনাফার
টগবগে ঘোড়ার পিঠে চড়ার অভ্যাস রপ্ত
করতে অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব সামাজিক
অপরাধ মূলক কাজ করে।
অধুনা কতটা দীর্ঘ ওদের অপরাধ মূলক
কাজের তালিকা,তুমি কল্পনাও করে উঠতে
পারবে না।বিশ্ববাসীদের ওরা নিয়ত দিচ্ছে
যন্ত্রণা।
ব্যাপক অর্থের লালসায় ওরা যুক্ত হয়েছে
দুষ্ট চক্রে।অপরাধ মূলক কাজের প্রবণতা
যেন মিশে আছে ওদের রক্তে।বিস্ময় জাগে    
যখন শুনি ‘সদ্যোজাত শিশু চুরি ও বিক্রি’
এসব ঘৃণ্য অপরাধ মূলক কাজ ওরা করে
অবলীলায়।হিসাব পাওয়া দুষ্কর, ওরা কত
সদ্যোজাত শিশুকে করেছে ওদের মায়েদের
কোল ছাড়া।
প্রিয়তমা,সেদিন শুনেছি যমরাজের বিচার
সভায় বিচারককে উদ্দেশ্য করে রাজসাক্ষী
বললো,হুজুর আর দেরি নয়,সময় হয়েছে
এসব জঘন্য অপরাধীদের অপরাধমূলক
কাজের সঠিক হিসাব নেওয়ার।
সে সময় যমরাজের বিচার সভায় থমথমে
পরিবেশ।ভুক্তভোগীরা তাকালো যমরাজের
মুখের দিকে।ওরা অপরাধীদের শাস্তির শেষ
দেখার অপেক্ষায়।
যমরাজের বিচার সভার শেষের অংশটুকু
বাকী থাকতেই ঘুম ভাঙ্গলো।স্বপ্নে এটুকুই
দেখে লাফিয়ে উঠে বসেছি সটান।জানতে
পারিনি বিচারের হলো কিনা অবসান।
প্রিয়তমা,নিশ্চয় জানো বিভিন্ন ধর্মে আছে
বহু শাখা ও প্রশাখা।দেখবে সেখানে ধর্মে
বিশ্বাসীদের মধ্যে জন্মান্তরবাদ ও কর্মফল
নিয়ে রয়েছে নানাবিধ অভিমত।সে সকল
আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।
সেই বিষয় নিয়ে ভাবছিও না।শুধু জানতে
ইচ্ছা করে,ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার বিষয় নিয়ে
তোমার কোন সংশয় আছে কিনা?সেসব
ভাবনা থেকে কর্মফলের ব্যাপারে আজও
সন্দিহান কিনা?
প্রিয়তমা,করোনার সংক্রমণ কমতেও পারে,
লক-ডাউন যদি ওঠে বাড়ি ফেরার কাজটা
সহজ হবে ভেবেই এযাবৎ কষ্ট করে তিন
সপ্তাহ কাটিয়েছি।আমার মতো লক্ষ লক্ষ
পরিযায়ী শ্রমিক আজ দিশাস্তহীন,ঘুরছে পথে
পথে।সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই সমস্যা
নিয়েও ভাবছে না মোটে।
তাই বাড়ি ফেরার ব্যাপারে কিছু একটা
ভাবতে হবে এবার।সবই জানাবো।আজ
এটুকুই থাকুক।
                                     ইতি
                            তোমার প্রাণেশ্বর