প্রিয়তমা,
আমাদের শয়ন কক্ষের দেওয়াল ঘড়িটার
দিকে তাকিয়ে দেখো,দোলকটা দূর প্রান্তে
পৌঁছে আবারও পিছনে ফিরে আসে।কেহ
যেন তাকে সব সময় টানে।তেমনি জন্ম
ভিটে মাটির ব্যাপক টান অনুভব করছি
বিভূঁই-এ এসে।
প্রিয়তমা,সন্দেহ হয় বিশিষ্ট-ব্যক্তিরা সেই  
টানটা অনুভব করে কিনা ক্ষমতায় বসে।
নয়তো লক-ডাউনে পরিযায়ীদের নিয়ে
তারা এতো ছেলেখেলা করে কোন সাহসে।
ভাবি,আরও কত কী দেখবো শেষে।
দীর্ঘদিন পরে আজ লক ডাউনে সাময়িক
বিরতি ঘোষণা হতে পারে,দূরপাল্লার ট্রেন
চলাচল আবারও শুরু হবে,সেরকম একটা
খবর পেয়েছি সকালে।তেমন কিছু হতে
পারে ধরে নিয়ে গোধূলিতে পাখির নীড়ে
ফেরার মতোই আমি ঘরে ফেরার অদম্য
স্পৃহায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লক্ষণ-রেখা
পেরিয়ে আগেভাগে পৌঁছেও গেছি বান্দ্রা
রেল স্টেশনে। খুবই ব্যস্ত ছিলাম সেসময়।
সময়ের স্বল্পতায় তোমাকে খবরটা দিতে
পারিনি আগে।
প্রিয়তমা,স্টেশনে পৌঁছে দেখেছি আরো শত  
শত পরিযায়ী শ্রমিক।তারাও সেই খবরটি
পেয়েই চলে এলো ঘরে ফেরার তাগিদে।
ব্যাপক ভিড় জমলো স্টেশন চত্বরে।তারা
কেউ জানে না করোনায় আক্রান্ত কিনা।
সেথায় ন্যূনতম সামাজিক দূরত্ব বজায়
রেখে চলার অবস্থাও ছিল না।
জানি না,তখন মানুষের জটলায় আমিও
করোনায় ধরাশায়ী হয়েছি কিনা।টিভিতে
সংবাদের শিরোনামে হয়তো তুমি জেনেছ
পরের ঘটনা।
প্রিয়তমা,‘লক ডাউন আবারও বাড়লো’
সরকারী ভাবে ঘোষণা হওয়ার পরে সব
পরিযায়ীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়লো।দাব
দাহের মতো ক্ষণিকে সেই স্টেশন চত্বরে
বিক্ষোভ ছড়ালো।
সংবাদ সংস্থা জানালো বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ
ভাবে পুলিশের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল না
বলে শেষে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ফাঁকা
করলো স্টেশন চত্বর।মানুষগুলো বিচ্ছিন্ন  
হয়ে কে,কোথায় ঠাই নিলো ও কতটা
করোনার সংক্রমণ ছড়ালো সেই বিষয়ে
কিছু বলা দুষ্কর।
সেই জটলা থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসে
আমি এখন বসে আছি একটি পুরাতন
মন্দিরের দেয়ালে পিঠ সেঁটে।লোকালয়
থেকে বহু দূরে।দেখে মনে হয় যেকোনো
কারণে বহুদিন আগে এই স্থানটি থেকে
মানুষের বসতি সরে গেছে।
প্রিয়তমা,সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ছে।শরীর
দুর্বল।অন্য কোথাও যাওয়াও সম্ভব নয়
এখন।রাতটুকু এখানে কাটাবো,ভেবেছি।
এখন রাখছি।কাল আবার কথা হবে।
                                   ইতি
                             তোমার প্রাণেশ্বর