প্রিয়তমা,
আজ ভোরে ঘুম থেকে উঠেছি পাখিদের  
কলকাকলি শুনে।কী করতে হবে ভেবেছি
তখন।বিক্ষিপ্ত মন খুঁজে বেরোলো শান্তির
তপোবন।
এদিক সেদিকে চেয়ে সে সময় দেখেছি
অদূরে অতি মনোরম একটি গুল বাগিচা।
ভারাক্রান্ত মনের কিছুটা বোঝা হালকা
করতে আমি তখন সেখানে গিয়ে হেঁটে
বেরিয়েছি বাগিচায়।
প্রিয়তমা,নজরে এলো কাছে দুটি রঙিন
প্রজাপতি,ফুলের সৌরভে মাতোয়ারা।ওরা
ডানা মেলে উড়েছিল উল্লাসে।মনে হলো
ওদের অন্তরে বইছে যেন অনাবিল প্রেম
ভালোবাসা,উভয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে তখন
আত্মার-আত্মীয়।
প্রিয়তমা,মনে এলো দশ বছর আগেকার
কথা।ভরা যৌবনে চলার পথে জীবনসঙ্গী
খুঁজে নেওয়া শ্রেয় মনে হলো সেই সময়।
কিন্তু মনের মধ্যে খুঁজে পাইনি সে বিষয়ে
অবাধ স্বাধীনতা।
ভাব প্রকাশে অক্ষমতায় প্রতিদিন অনুভব
করেছি প্রেম ভালোবাসার উষ্ণ প্রস্রবণে
সাঁতার কাটার ব্যর্থতা।
হয়তো কাপুরুষিত,হঠকারী সিদ্ধান্ত,তবু
অন্ধজনরা যেমন যষ্টি-নির্ভর ঠিক তেমনি
আমি তখন বংশ পরস্পরার প্রথাটি মেনে
সামাজিক বিবাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রিয়তমা,অবসরে একাকী বসেও ভেবেছি,
জীবনসঙ্গিনী না-হোক রূপসী,কালো হীরা
হলে ক্ষতি কী!বাবা-মাকে তাদের কর্তব্য
পালনে অগ্রণী হতে দেখে বিবাহে সম্মতি
দিয়েছি।
তখন সামাজিক প্রথায় বট বৃক্ষের মতোই
ঝুরি নামিয়ে জমিন খুঁজতে গিয়ে অজানা
অচেনা তোমাকে আমি অটুট বিশ্বাসে পত্নী
হিসাবে শিরোধার্য করতেও দ্বিধাগ্রস্ত হইনি
কখনো।যেটুকু জানি,তুমিও সে সময় এই
বিবাহে সায় দিয়েছ।সিদ্ধান্ত বদল করোনি
কখনো।
শুভ পরিণয় ক্ষণে তোমাকে দেখেছি খুবই
কাছ থেকে।দুই হাতে শাঁখা,সিঁথিতে সিঁদুর,  
কবরীতে ছিল রজনীগন্ধার মালা।সে সময়
শাস্ত্রীয় মতে বিবাহ হওয়ার পরে নিজের
ভাসমান সত্তা ভুলে গেছি।তারপর একত্রে
এযাবৎ কাটিয়েছি।
গড়ে উঠলো নিজেদের প্রেম-ভালোবাসা।
খাদ যাচাই করে গ্রহণ-বর্জনের অবকাশ
এবং মানসিকতার কোনোটাই কারো মনে
আসেনি।বরং যে যেটুকু পেয়েছি সেটুকুই
নিয়েই সন্তুষ্ট থেকেছি।লাভ-লোকসানের
হিসাব না কষে হয়তো ভালো আছি।
এখন মানুষের সচেতনা অনেক বেড়েছে।
বিবাহের আগে থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে
চলে লাভ-লোকসানের চুলচেরা বিশ্লেষণ।
দাঁড়িপাল্লা যে কোন দিকে সামান্য ঝুঁকলে
বিপত্তি।প্রজাপতিকে ধরে টানাটানি,প্রায়শ
তার ডানা ছাঁটা, আরও কত কী।
প্রিয়তমা,ভালো দিকও রয়েছে।অনভিপ্রেত
কারো কোনও ব্যক্তি-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ
এবং জুলুম ব্যাপারটা কমেছে।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো স্বামী ও স্ত্রীর অবাধ
স্বাধীনতায় বিবাহ নামক বন্ধন ব্যাপারটা
এখন এতোই আলগা হলো,ছিঁড়ে যেতে
লাগে না সময়।
পাশাপাশি বড় ব্যাপার অপত্যদের নিয়ে।
কী নির্মম পরিহাস।শিশুরা অপলকে দেখে
বাবা-মা খেলছে দড়ি-টানাটানি,আর ওরা
মাঝে,রুমাল যেখানে।নিয়ত হেলে-দোলে
এদিকে সেদিকে,উভয়ের টানে।
দু দিকের টানে ওদের মন-পাখিটার ডানা
ছিঁড়ে,ছিঁড়ুক।বাবা-মার ব্যক্তি-স্বাধীনতা
হয়তো সেই পাখির চেয়েও দামী!
প্রিয়তমা,দেখছি প্রকৃতি জেগেছে।চোখ গুলো
রগড়ে শয্যা ছেড়ে উঠে বসেছে।আর দেরি
নয়।এবার রেললাইন ধরে এগোবো বাড়ির
দিকে,যতদূর সম্ভব পায়ে হেঁটে।রাখি এখন।
আবার পরে কথা হবে।
                                    ইতি
                             তোমার প্রাণেশ্বর