প্রিয়তমা,
আজকে আমি সারাদিন রেল লাইন ধরে
হেঁটেছি প্রায় পঞ্চাশ কিমি।পা মেপে মেপে
এভাবে সারাদিন লাইনের স্লিপারের উপর
দিয়ে চলা যে কতটা কষ্টকর সে কথাটি
জানেন শুধু অন্তর্যামী।
মনে পড়ে,শৈশবে পড়াশুনার চেয়েও ব্যস্ত
ছিলাম খেলাধুলো ও দুরন্তপনায়।বহু বার
শরীরে হয়েছে কাটা ছেঁড়া।বদ্যিদের কিছু
ঔষধির সাথে পরিচয় ও তাদের প্রয়োগ
কৌশল জেনেছি সেই সময়।
তখন জেনেছি শরীরে কাটা ছেঁড়ায় গাঁদা
ফুল গাছের পাতার রস,চোট-আঘাতে চুন
ও কাঁচা হলুদের বাহ্যিক প্রয়োগ কৌশল,
রৌদ্র তাপে মাথা ব্যথায় ও দেহের ত্বকের
জ্বালা-যন্ত্রণায় ঘৃতকুমারী পাতার রসের
উপকারিতা।
প্রিয়তমা,মাঠে খেলে চোট-আঘাত নিয়ে
বাড়ি ফিরলে,সে খবর জানাজানি হওয়ার
আশঙ্কায় প্রায়শ বিশেষজ্ঞের মতো নিজে
করেছি নিজের চিকিৎসার বন্দোবস্ত।
কখনো কখনো ধরা পড়েছি গোয়েন্দার
ছড়ানো জালে।জননী,পিসিমাকে বলতেন
আমাকে রাখতে কড়া প্রহরায়।কী বেহাল  
দশা।শৃঙ্খলে বন্দি রাখার অসীম প্রচেষ্টা।
ভাবি,জগতে এমন খেলা-পাগল ছেলে কি
আছে যে কখনও খেলার সময় বন্দোবস্ত
করেনি নানান অছিলায়।
প্রিয়তমা,দ্বি প্রহরে সকলে ভাত ঘুমে মজলে
খেলতে রোজ পালিয়ে গেছি মা-পিসিমার
নজর এড়িয়ে।খেলার সময় চোট আঘাতে
বেহাল দশায় পড়লে মাকে মুখ খুলে সব
বলতে বাধ্য হয়েছি।নয়তো সবই নীরবে
সহ্য করেছি।
আজকে লাইন ধরে হাঁটার সময় দেখেছি
বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়ানো বহু গাঁদা ফুল গাছ
ও ঘৃতকুমারী।ওরা দুধারেই ছিল ছড়িয়ে
ছিটিয়ে।ওদের পাতার ঔষধি গুণ জানা
ছিল বলে আর সুদীর্ঘ পথে চলতে গিয়ে
ওদের কাজে লাগতে পারে ভেবে সযত্নে
সেসব সংগ্রহ করেছি।
রেল লাইনের উপর দিয়ে চলার অনভ্যাসে
আজ খুবই কষ্ট হলো।দুপুরের পরে পা দুটি
চলছিলো না আর।দুর্বার গতিতেই চলতে
গিয়ে দেখেছি পা গুলি জকির নির্দেশ নামা
মানতেও অপারগ।
নিজের মনকে প্রশ্ন করেছি,পরিযায়ীদের
বাঁচার কোন অধিকার আছে কি?পা-দুটি
সারাদিন হলো লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার স্বীকার।
ওরা বহুবার অবাধ্যের মতো চলতে গিয়ে
পাথর খণ্ডদের সাথে করলো ঠোকাঠুকি।
ক্লান্তিতে বিধ্বস্ত,পা-দুটি বারবার জানালো
মিনতি।মস্তিষ্কের কাছেও সবিনয়ে জানতে
চেয়েছে আর কত পথ যেতে বাকি!
আমি সেই সময় অভিজ্ঞ বদ্যিদের মতো
খুঁটিয়ে দেখেছি,আঘাতপ্রাপ্ত স্থানগুলি থেকে
ঝরেছে রক্ত।বুঝে নিতেও চেয়েছি কতটা
গভীরে পৌঁছেছে সেসব ক্ষত।সেই সময়
ক্ষতগুলির নিরাময়ের যথাযথ ব্যবস্থাও
করেছি।
প্রিয়তমা,এখানে এখন দেখছি সূর্য পশ্চিম
আকাশে ঢলে পড়ছে।বুঝেছি,আজ বিশেষ
এগোন সম্ভব নয়।তাই এখন দিনের শেষে
এই নির্জন প্রদেশে এক বট গাছকে বেছে
নিয়েছি আশ্রয়স্থল।তোমাকে এখন খবরটা
দিচ্ছি সেই বৃক্ষমূলে বসে।
প্রিয়তমা,অল্প সময় পড়ে চারদিক ঢাকবে
ঘন অন্ধকারে।রাখছি এখন।আবারও কথা
হবে সকালে।
                                     ইতি
                              তোমার প্রাণেশ্বর