প্রিয়তমা,
আজ সকাল থেকে ভেসেছি জন-জোয়ারে।
বুঝেছি সাগরের ছোট ছোট ঢেউ একযোগে
কত ব্যাপক শক্তি ধরে।
রেললাইন ধরে পরিযায়ী শ্রমিকরা নিয়ত
যথাযথ সামাজিক ব্যবধানকে ঠিক রেখে
ভূতল কাঁপিয়ে চললো যখন,তাদের শক্তি
এবং মনোবল দেখে মনে হলো তারা এই
বিশ্বে স্বর্গও রচনা করতে পারে।বিপরীতে
বজ্র-মুষ্টিতে হিংসাশ্রয়ী কাজে নামলে ওরা
বিধ্বংসী সুনামিও হতে পারে।
কোলে-পিঠে শিশুদের ও নিজেদের সামগ্রী
নিয়ে শত শত নারী ও পুরুষেরা পৌঁছতে
চাইছে নিজেদের বাড়ি ঘরে।
প্রিয়তমা,দেখো এসব পরিযায়ীরা অশেষ
দুঃখ কষ্ট সহে মানব সভ্যতার খিলানগুলি
রাখছে ধরে।ভাবতেও অবাক লাগে,তারাই
আজ পরিত্যক্ত,ঘরে-বাইরে।করোনার ভয়ে
তাদের ঠাই দিতে ভয় পায় আত্মীয়স্বজন,
পাড়া প্রতিবেশীরা।
প্রিয়তমা,নিশ্চয় জেনেছ দীর্ঘ দিনের পরে  
আজ আবশ্যক সামাজিক ব্যবধান বজায়
রেখে জনগণের অতি-আবশ্যকীয় পণ্যাদি
এবং রেশন সামগ্রী সংগ্রহের জন্যই শুধু
লক ডাউন শিথিল করা হয়েছে সরকারী
নির্দেশ মেনে।
খাঁচায় বন্দি পাখিরা যেমন মুক্তির সাধ
পেলে আকাশে উড়ে বেড়ায় উন্মাদনায়,
আজ তেমনি অবস্থা দেখেছি পথে।
রেলপথ দিয়ে চলতে গিয়ে এক লেভেল
ক্রসিং-এ পৌঁছে দেখেছি পাশেই দোকান
বাজার।নারী-পুরুষ বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি
বেরিয়ে কিনছে খাদ্য সামগ্রী সহ তাদের
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি।তখন দেখেছি,
বহু মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো মুখোশ
না-পড়ে।
ভাবছি,মানুষের ভাবনা কত খানি অতলে
তলিয়ে গেলে এই দুর্যোগে রাস্তায় বেরোয়
মুখোশ না-পড়ে।ন্যূনতম ব্যবধান বজায়
না-রেখে দ্রব্য-সামগ্রী কেনার জন্য সবাই
ভিড় করলো দোকানে বাজারে।
প্রিয়তমা,অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের তালিকাটি
দেখে ধরলো ভীমরতি।পরিযায়ীদের নাকি
এ এক ব্যামো,সারেও না ঔষধে।দেখেছি
রেল-লাইনের পাশে মদের দোকান।আমি
হতবাক হয়েছি দোকানের সামনেই সুরা
পায়ীদের সুদীর্ঘ লাইন দেখে।তার চেয়েও
বেশি হতবাক হয়েছি যখন দেখেছি সেই
ক্রেতাদের লাইন সাপের মতো একে বেঁকে
চলে গেছে বহুদূরে।যে সামাজিক দূরত্বকে
বজায় রাখা আবশ্যক,সেও যেন ভুলে গেছে।
দেখেছি দ্রব্যের চাহিদা এতোই ব্যাপক যে
সামগ্রী হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় অনেকে
করলো ঠেলাঠেলি,হাতাহাতি।দেখেছি চূড়ান্ত
অব্যবস্থা।
করোনার সংক্রমণের আদর্শ স্থানটি দেখে
আজ সমাজ ও সভ্যতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে
ঘরমুখো এগিয়েছি।
প্রিয়তমা,তুমি ভাবতেও পারবে না কী কষ্ট
সইতে হলো পথে পথে।দিনান্তে খোঁজ খবর
নিয়ে জেনেছি আজ প্রায় চল্লিশ কিমি পথ
হাঁটতে গিয়ে পা অক্ষত ছিল না কারো।
আমাদের এভাবে সইতে হয় দুঃসহ যন্ত্রণা।
দিনান্তে নিজেদের সম্বল থেকে যৎসামান্য
খাবার খেয়ে সবাই নিচ্ছে বিশ্রাম।
প্রিয়তমা, এখন লোকালয় থেকে বহু দূরে
রেল লাইনের পাশে একটি ফাঁকা অনাবাদী
চাষের জমিতে সকলে একত্রে নিয়েছি ঠাই।
এখানে বসে তোমাকে এই খবরটা জানিয়ে
ঘুমবো এখন।কাল আবারও কথা হবে।চিন্তা
করো না মোটে।
                                 ইতি
                           তোমার প্রাণেশ্বর