প্রিয়তমা,
গত রাতে আমি নিদ্রা-দেবীর আরাধনার
সমস্ত আয়োজনটা সেরে যখন শুয়েছি পাশ
ফিরে,সে সময় শরীরে অনুভব করেছি ঈষৎ
জ্বর।শুয়েছিলাম দীর্ঘক্ষণ।তবু ঘুম আসেনি    
মোটে।জ্বর বাড়ছে,সেই অনুভূতি জাগলেই
ঔষধ খেয়েছি সাথে সাথে।জানি না,কখন
উষ্ণতা কমলো।এযাবৎ যেটুকু মনে আছে,
ঘুমিয়েছি মাঝ রাতে।
সুদীর্ঘ সময় আমি কাটালাম একাকী জেগে।
প্রিয়তমা,করেছি তখন বহু স্মৃতির রোমন্থন।
জাগরণে জাবর কাটার মতোই আগের বহু
স্মৃতি ফিরে এলো বারংবার।খোকার ফেলে
আসা দিন গুলোর স্মৃতিও ছুঁয়েছে বারবার।
ভেবেছি সে সময় ঘরের মেঝেতে হামাগুড়ি
দিয়ে কিভাবে একটি ঘর থেকে অন্য ঘরে
সে ছুটে যেতো।বিকাল হলে ঘরের বাইরে
বেড়াতে যেতে বায়না জুড়তো,রেগে গেলে
কিভাবে ঘরের মেঝেতে গড়াগড়ি খেতো।
আরো কত কী।
প্রিয়তমা,তোমার কথাও খুব মনে জাগলো।
তুমি বর্ষা মুখর দিনে সুযোগ বের করতেই
যে কোন অজুহাতে বৃষ্টিকে স্বাগত জানাতে।
আনন্দে উৎফুল্লে বাইরে ছুটে গিয়েই দুহাত
বাড়িয়ে প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করে কাক-ভেজা
হয়ে তবে ফিরতে ঘরে।
তাছাড়াও ঘন ঘোর বর্ষায় বসতে উন্মুক্ত  
জানালার পাশে।সুর ও লয়ে গুণ গুণ করে
গান গাইতে।স্বপ্নে বিভোর হতে,সেসব ত্রিশ
বছর ধরে আমি অনুভব করেছি তোমার
চোখের দৃষ্টিতে।
শিলাবৃষ্টি হলেই তুমি আনন্দে উচ্ছ্বাসে বের
হতে শিল কুড়তে।শাড়ির আঁচলে কিছু শিল
নিয়ে শেষে আমার সামনে হাজির হতে।
যাক সেসব কথা।সকালে ঘুম থেকে উঠেই
দেখি সবাই করছে বেরোনোর প্রস্তুতি।আমি
তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বেরিয়েছি এক সাথে।
চলেছি সবাই সেনানীর মতো।কারোর সময়
ছিল না তাকাতে পিছন ফিরে।সবার চলার
ভঙ্গীতে তখন মনে হলো পেরোতে পারবো
দুর্গম গিরি,কান্তার মরু।
সাহসে ভর করে সবাই এগোচ্ছি এক সাথে।
পেরিয়ে এসেছি বহু পথ।মাইলের পর মাইল।
রোদের তাপে ঝলসালো শরীর।সবাই খিদেয়
কাহিল।তবুও থামার ইচ্ছা ছিল না মোটে।
নজরে এলো রেল লাইনের পাশে বিশাল মাঠ।
এক প্রকাণ্ড বটগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে
পাশে।অদূরে লোকালয়।
প্রিয়তমা,দেখেছি বহু  গ্রামবাসী যেন করোনার
ভয়ে ও ঘোর দারিদ্রে কাটাচ্ছে  অস্তিত্বের গভীর
সংকটে।আপৎ কালে বাঘে ও  গরুতে যেভাবে
জল খায় একসাথে, তারাও এখন সব ভেদাভেদ
ভুলে তেমনি চলছে সহমতে।
অভাবের তাড়নায় তারা একসাথে করলো একটি
পঙক্তি ভোজের আয়োজন।সামাজিক দূরত্ব মেনে
করলো সুষ্ঠভাবে পরিচালনা।শুনে এসেছি মাইকে
নিয়মিত ভাবে করলো ঘোষণা।সকলেই সামাজিক
দূরত্ব সঠিক ভাবে মেনে পঙক্তি ভোজে অংশ গ্রহণ
করতেও ভুল করেনি মোটে।
আমরা চলে যাচ্ছিলাম রেল পথ ধরে তাদের পাশ
দিয়ে।প্রিয়তমা,সমব্যথী না হয়ে কে,কবে কারো
প্রকৃত বন্ধু হলো এই জগতে।
প্রতিদিন অর্ধাহার কিংবা অনাহারে যাপিত সেই
দরিদ্র গ্রামবাসীদের মাইকের ঘোষণা পৌঁছলো
আমাদের কানে।পদযাত্রীদের প্রতি পঙক্তি ভোজে
সাদর আমন্ত্রণ।সেই বার্তাটুকু নিয়ে সশরীরেও ছুটে  
এলো দুজন।তাদের আন্তরিক আহ্বানে আমরা সবাই
অংশগ্রহণ করেছি পঙক্তি ভোজে।  
প্রিয়তমা,দেখেছি তখন ভিখারি ও জমিদার পঙক্তি
ভোজে বসেছে পাশাপাশি।কেহই ভাবছে না এখন
নিজের বংশ পরিচয়।তারা ভুলতে চাইছে অতীত
গৌরব,জাত্যভিমান,অনৈতিক রঙের বিভেদ।সবাই
আজ ধীরে ধীরে বুঝে নিচ্ছে এই মানব জাতিকে
টিকে থাকার প্রশ্নে ফিরতেই হবে আবার প্রকৃতির
পাঠশালায়।
প্রিয়তমা,খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা তাদের জন্য
পর্যাপ্ত খাবার ছিল কিনা সেই খবর নিয়ে তাদের
শুভেচ্ছা জানিয়ে পথের ডাকে সারা দিয়ে চলেছি
আবার গন্তব্যের দিকে।
আজ আর নয়। আবারও কথা হবে আগামীকাল।
                                   ইতি
                             তোমার প্রাণেশ্বর