মানব জীবনে হিংসা-ঘৃণা-বিদ্বেষ চকমকি
পাথরের মতো একটু ঠোকাঠুকিতেই জ্বলে
ওঠে।আগুনের ফুলকি ছড়ায় সাথে সাথে।
উল্লাসে ঘটায় গৃহদাহ,প্রকৃতি দহে যেন দাহ্য
পদার্থের মতো।যুগে যুগে লোভী হিংসাশ্রয়ী
মানুষেরা নিজেদের কাছে গচ্ছিত রেখেছে
এই ব্যাপক ক্ষমতাশালী মারণাস্ত্র।
দুঃখের বিষয়,মানবতার কোন কথা কখনো
শোনেনি ওরা।লোভ লালসাকে করেনি সংযত।
লোভের বশে এই বাঁধনছাড়া মানুষগুলো এই
মারণাস্ত্রের মজুত ভাণ্ডার গড়েছে নিয়ত।ওরা
বুদ্ধি ও ক্ষমতা বলে নির্বিকারে বিষদের ঢেলে
দিলো জলে স্থলে অন্তরীক্ষে।কতগুলি ক্রীড়নক
তখন নেচে উঠলো বাজিকরের ইশারাতে।
এই মানুষেরা সুযোগ সন্ধানী।রাতের অন্ধকারে
অগ্নি সংযোগ করে পোড়াল শত সহস্র বনানী।
নির্বিকারে অরণ্য নিধনের ফলে হারালো বহু
পশু পাখিদের জীবন।  
প্রকৃতির বক্ষ স্থলে জাগলো তীব্র প্রদাহ সেটাও
বোঝেনি ওরা।বুঝতে চায়নি,তাদের অত্যাচার
প্রকৃতির কাছে কত দুর্বিষহ।কালো চশমা চোখে
দেখতে পায়নি প্রকৃতির রোষানল।বোঝেনি কত
কী ঘটবে প্রকৃতি যদি কালনাগিনীর মতো মারে
ছোবল।
কতটা মাসুল গুনতে হবে ভাবেনি তখন।আজকে
শিথিল হচ্ছে প্রেমের বাঁধন।বাঁচার তাগিদে স্বজনের
নৈকট্য ও নিষিদ্ধ এখন।কোণঠাসা হয়ে আজ মানুষ
বুঝছে কতটা প্রয়োজন আত্মনিয়ন্ত্রণ।
সময় এসেছে।মেঘের অন্তরাল থেকে যেন দৈববাণী
ভেসে আসে,–‘দে না চুকিয়ে তোদের সকল দেনা’।
ভাবি,যথাসময়ে মানুষ সংযত হলে আজ নিশ্চিত
এতো বড় ক্ষয় ক্ষতি হতো না।
এখন বিশ্ব জুড়ে করোনার ছোবলে চলছে মৃতদের
মিছিল,শব যাত্রী বিহীন,শববাহী যানে মৃত ব্যক্তিরা
যাচ্ছেন ধীরে ধীরে।জানি,যারা মারা গেলেন তারা
আর তাকাবেন না ফিরে।
তাঁদের শোক সন্তপ্ত আত্মীয় পরিজন যারা আজও
বেঁচে আছে,তাদের কিছুই করার নেই দূর থেকে
বিনম্রে শ্রদ্ধা জানানো ছাড়া।তাদের সম্ভব হবে না
মৃত ব্যক্তিদের কাছে যাওয়া,অতন্দ্র প্রহরী দের
মতো রয়েছে নিষেধের প্রাকার খাঁড়া।
কী যেন এক ভয়ঙ্কর কষ্টবোধ কাজ করছে সবার
বুকের ভিতর।বেঁচে থাকা সব অসহায় মানুষগুলো
এখন খাঁচা-বন্দী পাখিদের মতন ডানা ঝাপটায়,
আর্তস্বরে পরম পুরুষকে বাঁচার আকুতি জানায়।
দেখি,প্রকৃতি যেন নাট্যশালার নীরব দর্শক।