সেদিন স্বপ্নে সাক্ষাৎ হলো সঞ্জয়ের  
সাথে।একান্তে আলাপ চারিতায়
বললো সে,দিব্য জ্ঞানে দেখেছে
এ যুগে গিনিপিগদের নিয়ে পরীক্ষা
নিরীক্ষা করে গবেষকেরা অদ্ভুত
মজা লোটে।কারণে অকারণে ওদের
শরীরে বহু বার ছুরি চালাতে পারে
অনায়াসে।
এই ব্যাপারটা একটু খুলে বলার
অনুরোধ করায় হেসে বললো সে,
গবেষণা করতে গিয়ে গিনিপিগদের
মেরে ফেলাও যায় অনায়াসে।তাছাড়া
গিনিপিগদের মারলে তাদের মারার
কারণ জানতে কেহ কখনো কি ছুটে
গেছে?অবশেষে ওদের সেই মরদেহ
ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেওয়া যায়
অক্লেশে।
কথাগুলো শুনেই যখন ভাবছি বসে
তখন সে এক নিঃশ্বাসে বলে গেল,
কেহ গবেষণায় সফলতা পেলে তো
তার পোয়া বারো।চারিদিকে তখন
তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন।
জিজ্ঞেস করেছি,সে সব মিটে গেলে
তারপর?
দেখেছি মানসিক কষ্টে বিদীর্ণ হয়ে
বললো সে,যদিও মানুষের কল্যাণে  
কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে
তবুও এ যুগে মুখে চুষিকাঠি পুরে
আত্মহারা হতে ক্ষতি কী।
তাই তো বহু দেশে মসনদ দখলে
মত্ত বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি গবেষণায়
এতোটা তৎপর।রাত দিন পরীক্ষা
নিরীক্ষা করছে গিনিপিগের মতো
অসহায় মানুষের উপর।
মসনদ দখলে গবেষণার কথা শুনে
ভাবনায় তালগোল পাকাচ্ছে বুঝে  
তখনি সে বুঝিয়ে বললো,মানুষের
সম্পদ লুটের কলাকৌশল নির্ধারণ
করাই সব সময় তাদের গবেষণার
মুখ্য বিষয়।
লুটের অর্থে তারাও বাঞ্ছা রামের
সাধের দৃষ্টিনন্দন বাগানের মতো
নিজেদের বাগান গড়তে তৎপর।
দুর্দশাগ্রস্তদের সমস্যার সুরাহা করে
দেওয়ার চেয়ে প্রচারে আলো পেতে
ব্যস্ত তারা।
তাদের মজা লোটার অনেক হদিশ
পেয়েছি তার পাশে বসে।বললো সে,
বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ কালে
বিরোধী নেতারা সামাজিক দূরত্বের
ভাবনা ভুলে জনগণ তান্ত্রিক বিপ্লব
করতে মানুষদের নিয়ে নামলো বহু
জনপথে।বলা বাহুল্য,মিটিং মিছিলের
পরে অংশগ্রহণ কারীদের অনেকেই
করোনায় সংক্রমিত হয়ে ফিরলো ঘরে।
আগুনের কাছে দেশলাই কাঠি ধরলে
যেমন দপ করে জ্বলে ওঠে,করোনার
সংক্রমণ তখন তেমনি বাড়লো হঠাৎ
করে।শুরু হলো মৃত্যুর মিছিল।
তারপরে কত কী যে ঘটলো এদিকে
সেদিকে।কেহ কেহ মারা গেল বিনা
চিকিৎসায় ফুটপাথে পড়ে থেকে।কেহ
চরকির মতো বহু হাসপাতালে ঘুরে
কোথাও ভর্তি হতেও না-পেরে শেষে  
বিনা চিকিৎসায় মরলো নিজের ঘরে।
শুনেছি তার মুখে এই সুযোগে নাকি
সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে বহু নেতা
উঠে এলো আরও প্রচারের আলোয়।
দুঃস্থদের সমস্যাগুলো তখন নিরাশায়
মুমূর্ষের মতো অশ্রু ঝরালো।
মওকা বুঝে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভটি
নিরপেক্ষতার ভাবনা ভুলে সংবাদ
সংগ্রহের কাজে নেমে রসদ ঝোলায়
পুড়ে চলতে গিয়েই পা হড়কে ঢলে
পড়লো এক দিকে।
এই দেখে মনে খুব কষ্ট হলো।দেখি,
সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে সে এবার
সংবেদনশীল সব বিষয়গুলিতে লাল,
নীল আলো ফেলে মানুষের ভাবনার
অভিমুখ বদলে দিলো।
প্রদীপের নীচেই অন্ধকার,এ কথাটা
জানা দরকার।হাসপাতালের চত্বরে
রোগী পরিসেবার কেন্দ্র গুলি নাকি    
ঘুঘুর বাসা।সেখানে করোনা রোগী
পৌঁছলে চরম ভোগান্তির পাশাপাশি
পরিজনেরা হেনস্থায় কোনঠাসা।
এই অবস্থায়ও নেতারা ব্যস্ত,উচিত
ও অনুচিত কাজ নিয়ে গবেষণায়।
কিন্তু মানুষের সমস্যাগুলির সুরাহা
করবার নেই কোনও প্রচেষ্টা।জ্বলন্ত
সমস্যাগুলিকে মাগুর মাছের মতো
জিইয়ে রাখছে তারা।
দেখেছি বহু নেতা নেত্রীর লালসার
লকলকে জিভ থেকে লালা ঝরলো
লকডাউনের সময়।রাতে অন্ধকারে
জনগণের জন্য বরাদ্ধের বহু ত্রাণ
সামগ্রী পৌঁছে গেলো নেতাদের ঘরে।
তারপর অনেকে শিশুর মতো মুখে
চুষিকাঠি পুড়ে ঘরে কাটালো বহাল
তবিয়তে।
যারা ঘুরলো নেতাদের সাথে তাদের
জিজ্ঞেস করেছি,‘কোনও সুরাহা হলো
কি?ভেবে চিন্তে উত্তর দিলো অনেকে,
‘অন্যায়গুলি ঠেকাতে গিয়ে সুরাহার
পরিবর্তে করোনা ভাইরাসকে নিয়েই
ফিরেছি ঘরে'।
দেখেছি মানুষদের ক্ষোভ ও বিক্ষোভ
যখন জাগলো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো
তখন দুর্দশাগ্রস্তদের দেখে মায়া কান্নায়
ভেসে অনেক নেতানেত্রী মাথা ঠুকলো
সহানুভূতির চৌকাঠে।সেই কান্ড দেখে
প্রত্যক্ষদর্শীরাও হতবাক।ভাবে গদগদ
হয়ে তারাও তখন ভিড়লো সে দলে।
হায় রে।কত কী চাতুরী চলছে বিশ্ব
জুড়ে।জনগণের এতোটা কষ্ট ভোগের
পরেও নেতারা বন্যদের তাড়াতে শুধু
ঘণ্টা পিটিয়েই হলো দায়সারা।
এখন বিশ্বের বহু দেশে ভোট আসন্ন।
চাণক্যের অভাবে সব নেতানেত্রীরা
রাত জেগে জনগণের ভোটের চরিত্র  
বিশ্লেষণে গবেষকদের মতো অসংখ্য
গাণিতিক সমীকরণ সমাধানে ব্যস্ত।
এই ব্যস্ততার মাঝেও তারা মুনাফা
লাভের আশায় স্ব-দেশে গিনিপিগের
মতো অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে
যেতে রোজ ছুটছে মাঠে ময়দানে।
সংবাদ মাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ার
হাত ধরেও অধুনা নেতারা বিকচ্ছে
তাদের ভাষণ।জনগণ সেসব গিলছে
বেশ মজা করে,ছিপে মাছ ধরবার
বরশীর টোপের মতন।
অনেকে আজও মুখোশধারী নেতা
নেত্রীদের স্বরূপ চিনতে ভুল করে।
ভোটে দুষ্কৃতিদের জিতিয়ে জয়মাল্য
পড়ায়।
ভোট শেষে তারাও বিঁধছে মাছদের
মতো নেতানেত্রীদের বড়শিতে।তখন
তাদের বুক অনুতাপে ধিকধিক করে
জ্বলছে তুষের আগুনের মতো।
প্রতিবাদ প্রতিরোধের পথে সে সময়
প্রহরী বহাল।চারদিকে তাকিয়ে দেখে
রক্তের আকাল।তাই কে আর রক্ত
ঝরায়।ভুলের মাশুল দিতে জনগণ
দেওয়ালে মাথা ঠুকে।শেষে চিত-হয়ে
মরে পড়ে থাকে ফুটপাথে।
বিয়োগান্ত নাটকের যবনিকার শেষ
হলে মিটে যায় বহু বিশিষ্ট বিদ্বজ্জনের
দায়ভার।
বহু রাত অনিদ্রার পরে তারা মদিরা
গিলে সুখ নিদ্রায় কাটাতে তখন ঘরে
ঘুমিয়ে পড়ে বহাল তবিয়তে।