বৃদ্ধাকে আগেও দেখেছি সামনে থেকে,-বহুবার
তার বিস্তৃত ললাট,সুন্দর মুখশ্রী,মায়াবিনী ঠিকঠাক।
সে বয়সের ভারে দন্তহীনা-
মুখখানা সরু-চুপসানো,গালে ভাঁজ,ললাটে বলীরেখা।
সরু গলা,-ভাঁজে ভাঁজে ছেয়ে গেছে।
তার এক-ঝাঁক অবিন্যস্ত পক্ককেশ,-মাথা জুড়ে,
সবটাই বয়সের ভারে পাকা,-সাদা,
মাথার চারদিক থেকে বন্ধুর পথে নেমে
তার সমস্ত কাঁধটাই ঢেকেছে।
চুলের গোছার-শেষপ্রান্তের আগেই বাধা,
-গ্রন্থিটা কাঁধ ছাড়িয়েছে।
তার শেষেও গোছা-চুল নেমেছে।
ঠিক যেন আমার পিতামহী-
তাকে শৈশব থেকে যেমন দেখেছি।
তারও এক-ঝাঁক পাকাচুল দেখেছি
আমার প্রথম দেখা থেকে,
মাথার চারদিক থেকে নেমেছে।
উভয়ের ভারি মিল দেখে ভাবি,
এ অদ্ভুত মিল-টা এলো কোত্থেকে!
বৃদ্ধা যেন আমার পূর্বপুরুষদের কেহ,
কারো প্রপিতামহী!-সদা হাস্যময়ী।
বৃদ্ধা ডেকেছেন আমায় বহুবার,
কাছে বা দূরে যখন থেকেছি যেথায়।
তাই,তার ডাকে বহুবার সারা দিয়েছি
তাকে ভালবেসেছি সেই শৈশব থেকে।
তার ডাকে ছুটে এসে এক ঝাপে
তার কোলে লুটিয়ে পড়েছি যখন-তখন।
শব্দ করেছিলেন বৃদ্ধা,উঁ---আ----।
জিজ্ঞেস করেছি তাকে,-খুব লেগেছে?
উত্তর দিয়েছিলেন সাথে সাথে,-ও কিছু না,সেরে যাবে।
লজ্জায় মাথা হেঁট,ঝাপ দেওয়ার দরকার ছিল কি?
বৃদ্ধা সব ভুলে স্নেহ-ঢাললেন,মাতৃস্নেহ!
কিছুটা সময় পরে দেখি,-আমি স্নিগ্ধ,স্নাত।
বৃদ্ধা বললেন-শরীরটা মুছে নে।এবার বাড়ি যা।
বৃদ্ধার সাথে পরিচয়-
যেদিন প্রথম মা’র সাথে এসেছিলাম।
মা,বৃদ্ধার সাক্ষাতে বলেছিলেন-নম: কর,তাঁকে।
ইনি তোমার-আমার,সবার-মা।
তাঁকে প্রণাম করে জিজ্ঞেস করেছি-
তোমার বাড়ি কোথায়?
বৃদ্ধা হেসে বলেছিলেন-গোমুখ,হিমালয়ে।
বড়ো হয়ে যেও,খোকা!
দেখে এসো এই মা’র বাড়ি-টা।
ইনি, সর্বজনীন মা-গঙ্গা।
সেই থেকে প্রতিদিন নম: করি তাঁকে,সাক্ষাতে।