শুনেছি কাকাতুয়ার মুখ থেকে,সুন্দরবন লাগোয়া
গ্রামাঞ্চলের মানুষদের অশেষ দুঃখ কষ্টের লাঘবে  
এগিয়ে এসেছিল সরকার।গ্রীষ্মে দাবদাহে ধরণীতে
জলের হাহাকার মেটাতে যেমন বর্ষা পা বাড়ায়,
তেমনি এই উদ্যোগেরও ছিল খুবই দরকার।  
সেই স্থানের মানুষেরা ভাবলো তখন মাথার উপর
থেকে কালো মেঘ-কুণ্ডলী সরবে এবার।সেই লক্ষণ
দেখে আশার জোয়ারে ভাসলো সেই স্থানের সব
মানুষেরা।
কাকাতুয়া নাকি দেখেছিল,তারপর ছুটে এসেছিল
নদী বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।সমীক্ষা
করে সকলে মিলিত ভাবে পৌঁছলো স্থির সিদ্ধান্তে
কিভাবে করতে হবে এই বিপর্যয়ের মোকাবিলা।
জেনেছি তারা লিপিবদ্ধ করেছে নদী গুলিতে স্থায়ী
বাঁধ নির্মাণের আবশ্যকীয়তা।
শুনেছি,কাকাতুয়া অদূরে বৃক্ষশাখে বসে দেখেছে,
‘সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস রোধে দুর্গ বলয়ের মতোই
নদী তীরে ও গড়তে হবেই উঁচু সুরক্ষা প্রাচীর’,
এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতেও বিশেষ বিলম্ব
করেনি তারা।
তাদের পরামর্শ মেনে সরকারের উদ্যোগে শুরু
হয়েছিল সেই নির্মাণ কাজ।সেই দেখে কতিপয়
ভোট-পাখির কপালে পড়লো ভাঁজ।
কাকাতুয়া বলে গেল,পাঁকের ঘোলা জলে মাছ
নড়াচড়া করলে,যেমন ওদের ধরার লাগি’ সাধ
জাগে কতিপয় মানুষের মনে,তেমন কাণ্ড নাকি
ঘটলো সেখানে।প্রকল্পের কাজ আজও অসম্পূর্ণ
রয়েছে অজ্ঞাত কারণে।
সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রত্যাশায় চাতক
পাখিদের মতো আজও বেঁচে আছে সেই স্থানের
মানুষেরা।দূর থেকে দূরবীনে সব দেখছে বনানী
ধ্বংস করেছে যারা।
সেজ বাতিতে তেলের অভাব।গ্রামবাসীদের আশার
দীপ নিভু নিভু।কাকাতুয়া ভাবছে বসে সেটি কি
আর জোরালো ভাবে জ্বলবে কখনো?আমফানের
স্মৃতি ভোলেনি মানুষ।তবুও দেখছি সেজ বাতিটি
সেভাবে জ্বলে ওঠেনি এখনও।
আঁধার রাতে ওদের জীর্ণ ঘরের ফুটো চাল দিয়ে
তারাদের ক্ষীণ আলো ঢোকে বটে,তবে বিলীয়মান  
রঙের মতো হারিয়ে যায় সাথে সাথে।
কাকাতুয়া জানালো সেই দুস্থ মানুষেরা স্বপ্ন দেখে
শুধু স্থায়ী বসত ঘরের সাথে নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
বন্যা প্রতিরোধে নদী-বাঁধ নির্মাণ হলে আতঙ্কের
প্রহর গুনতে হতো না আর।
তাদের স্বস্তি দিতে চেয়েছিল সরকার।কাকাতুয়া
মনের দুঃখে বৃক্ষের শাখে মাথা ঠুকে বলে গেল    
তার ধারণা বহুদিন আগেই দরকার ছিল এই
সমস্যার সুরাহার।
ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষিত হলে ভোট-পাখিরা দলে
দলে গাল ভরা আশ্বাস দিতে তাদের কাছে ছুটে
আসে।সেই সময় তাদের খুব কদর।চড়চড় করে
বাড়ে তাদের বাজার দর।
বাক-চতুর ভোট-পাখিরা এসে কোকিলের মতো
সুমধুর গান গায়।তারা দুস্থদের প্রত্যাশায় ইন্ধন
যোগাতে ব্যস্ত,সে সময়।  
তারা স্বপ্নচারীদের অকাল বসন্তের আগমন বার্তা
শোনায়।হতভাগ্য সেসব মানুষ তখনও জানে না,
তাদের যে স্বপ্ন দেখতেও আছে মানা।তবুও তারা
স্বপ্ন দেখে।খুঁজে পেতে একটা স্থায়ী ঠিকানা।
দরিদ্র সেই মানুষেরা ওদের মিষ্টি কথাতে মজে
সরল বিশ্বাসে।সেই দেখে নক্ষত্ররা চুপিসারে হাসে।
দ্বীপবাসীরা একটু মাথা গোঁজার ঠাই খুঁজে পাবার
আশায় তাদের অমূল্য ভোট ভোট প্রার্থীদের পক্ষে
ঢেলে দেয় ভোট-বাক্সে।জানে না তারা কুহক
বলে তাদের অমূল্য ভোট হলো কিনা হাতছাড়া।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় বারংবার ফিরে এসে তাদের
জীবন করছে ছারখার।তবু পরিযায়ী দের দেখা
মেলে না আর।আয়লা ও আমফান ঝড় সাক্ষ্য
দিচ্ছে তার।
তাদের জীবনে যেন দুর্যোগ ঘনিয়ে আসে সূর্যাস্ত
হলে।বিষধর সাপ ও হিংস্র বাঘের অভয়ারণ্যে
দুঃখ-কষ্ট ও ভয়কে বুকে আগলে সেই মানুষেরা
রাতে পর্ণ কুটিরে ঘুমায়।জীর্ণ চালের ছিদ্র পথে
তারারা রাত জেগে তাদের দেয় প্রহরা।
যাত্রাপালার মতো ভোট আসে,ভোট যায়।কিন্তু
সেই দুস্থ মানুষেরা প্রতিবাদী হোক কিংবা না-ই
হোক,পালা বদলের খেলায় মাতুক কিংবা না-ই
মাতুক,ভোটের শেষে সেই একই খেলা।
একই ট্র্যাডিশন চলছে সমানে।কাকাতুয়াটি বলে
গেল,সে বুঝেছে এই দুস্থ মানুষদের আর কিছুই
করার নেই,এটুকু ছাড়া।
ভাবি,হয়তো ঠিক তাই।চালশে পড়া চোখে আর
কতদূর অবধি দেখা যায়!

          (সমাপ্ত)