স্বাধীনতা!পুষ্পাঞ্জলি হাতে নিয়ে তোমার
চুয়াত্তর তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে
এসে কেন যেন বিষণ্ণ দেখছি তোমাকে।
হয়তো ভাবছো বসে এযাবৎ হাঁটি হাঁটি
পা পা করে শৈশব কাটিয়ে এই যৌবনে
উত্তরণের পথে কী অপরাধে এই বয়সে
বহু বার হতে হয়েছে চরম নির্যাতনের
শিকার।
তোমার অশ্রুঝরা সেই কষ্টের দিনগুলো
কাটেনি এখনও।সে দিন যখন তোমার
গলা জড়িয়ে ধরেছি ভালোবেসে,একান্তে
আলাপচারিতায় এদেশের শিশুসন্তানদের
কোলে নিয়ে বসে তুমি অনর্গল বলেছিলে
তোমার দুঃখের কথা।
বলেছিলে,‘তাদের মানুষ গড়ার যদিও
তোমার সাধ ছিল, সাধ্য ছিল না।প্রকৃত
মানুষ করতে পারো নি।
বলেছিলে,এদেশে ফড় ও মজুতদারদের
কারসাজি ও কালোবাজারির দরুণ দেশে
বেড়েছে জনগণের আর্থিক অসাম্য।এখন
দেশটার অবস্থা জঘন্য।এই দেশে যথাযথ
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাবে শ্রমিক
এবং কৃষকেরা ভুগছে কর্মহীনতায়।বাড়ছে
দারিদ্র।তাই এখনও হয়নি সকল মানুষের
মাথা গোঁজার ঠাই।জানি না আজও, কে
নেবে সেই দুঃস্থদের কর্মসংস্থানের দায়।
তুমি বলেছিলে,এদেশে বহু মানুষের দিন
কাটে অপুষ্টিতে।অর্থাভাবে করতে পারোনি
তাদের যথাযথ শিক্ষার বন্দোবস্ত।সে সব
মানুষগুলো সুশিক্ষিত না হওয়ায় ডুবলো
অজ্ঞতায়।
সুশিক্ষার অভাবে আজকাল অজস্র স্বচ্ছল
মানুষের মনে ভোগবাদ পৌঁছেছে চরমে।
তাই সেসব মানুষেরা তাদের বৃদ্ধ পিতা
মাতাদের পাঠাচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে।
সুশিক্ষার অভাবেই অসংখ্য মানুষ এখনও
রয়েছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন, সমাজবিরোধী,ধর্মান্ধ
কিবা সন্ত্রাসবাদী।তাদের নীতি নৈতিকতার
হয়েছে জলাঞ্জলি।তাই দেশে আজও জ্বলছে
হিংসার দাবানল।
স্বাধীনতা!সেদিন একান্তে আলাপচারিতায়
তুমি বলেছিলে,নাবালকত্ব কাটেনি এখনও
বিচার ব্যবস্থার।যথাযথ সংস্কার করা হয়ে
ওঠেনি তার।আজও ব্যাপক ভাবেই চলছে
কন্যা-ভ্রুন হত্যা।দেখি মাথা তুলে দাঁড়াতে
পারেনি আজও নারী স্বাধীনতা।
প্রকৃত শিক্ষার অভাবেই বাড়ছে মানুষের
লোভ,লালসা।এখন দেশ জুড়ে মাথা চারা
দিয়েছে অসংখ্য জুয়ারি।
স্বাধীনতা!তাই দেখছি প্রতিদিন তুমি যেন
শিক্ষা,স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েই
দিশেহারা।ভাবতেও অবাক লাগে সে সব
নিয়ে কিভাবে চলছে কালোবাজারি!
দুঃখে বিদীর্ণ হয়ে তুমি সে দিন বলেছিলে,
দৈনন্দিনের পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের
সংক্রমণ কালে এযাবৎ শত সহস্র মানুষের
জীবনের বিনিময়ে জন্ম জন্মান্তর আগেকার
এই সকল কালো বাজারিদের থেকে নেওয়া
ঋণ হয়তো শোধ হয়নি এখনও।
তুমি বলেছিলে,দেশের নাগরিকরা হারিয়েছে
তাদের মৌলিক অধিকার।মানুষগুলো ভুগছে
স্বাধীনতা হীনতায়।তারা আছে চরম দুর্দশায়।
দেশবাসীরা আজ দুর্দশা থেকে মুক্তির আশায়
চেয়ে আছে প্রশাসনের কর্তাদের মুখের দিকে।
তাদের বোধদয় হয়েছে কিনা জানি না এখন,
অন্যায়ের প্রায়চিত্ত করার হয়েছে সময়।
তাই আজকে স্বদেশের দুর্দশা মোচনে যথাযথ
উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সব দেশবাসীকে
দেশমাতার বন্দনায় জোরালো ভাবে উচ্চারণ
করতে হবে ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি।