গভীর রাত। শিয়রের পাশে জানালা
খোলা।
ধরণী ঘুমচ্ছে পাশ ফিরে। তার বুকের
উপর জেগে ওঠা কোলের শিশু আঁচড়
কাটছে মায়ের শরীরে।
ঘরে মিটমিট করে জ্বলছে নাইটল্যাম্প।
বাইরে ঘন অন্ধকার।
শিশুটি জানালা দিয়ে কী দেখলো কে  
জানে! কেঁদে উঠলো। ছটপট করছে
ফাঁদে পড়া পাখির মতো।
কী বোঝাতে চাইছে, জানি না। মনে
হলো বলতে চাইছে দেবদত্ত বলাকার
মতো তাকে তীরবিদ্ধ করেছে। শরীর
করেছে ক্ষত-বিক্ষত। কষ্ট হচ্ছে যন্ত্রনা
সহ্য করতে। হয়তো ভাবছে সে আর
বাঁচবে না।
এ ভুবনে দেনা রইলো কত কে জানে!
সব মিটিয়ে হয়তো ইহলোক ছাড়তে
হবে।
জানি না কেন যে শিশুটি হঠাৎ একটু
চুপ করলো। কী জানি সে শুনলো কি
দৈববাণী, অত্যাধুনিক চিকিৎসায় এই
ক্ষত সারবে না। বিশল্যকরণী বাঁচাতে
পারে। তার সে ভেষজ গুন আছে।
মেঘে ঢাকা আকাশ। তারাগুলো যেন
মেঘের কাছে হার মেনেছে, তাদের
দেখা মিললো না।
দেখেছি শিশু তাকালো জানালা দিয়ে
বাইরে আকাশের দিকে। এ অবস্থায়  
কিছু কি দেখতে পারে?
মুখের হাসিটুুকু নিমেষে লোপ পেল,
অস্তগামী সূর্যের মতো।  
বিষণ্ণতাও যেন মনে জাঁকিয়ে বসলো।
দেখেছি তার আঁখি ছলছল। মুঠো হাত
খুলে খুঁজলো আলোর ঠিকানা!
বহুু ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে হয়তো
দেখতে চেয়েছে সূর্যোদয়। কী জানি,
সে ভেবেছে কিনা তার ক্ষত নিরাময়ে
কেউ যোগাবে কি বিশল্যকরণী?
সময় কাটলো সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়।
মিটমিট করে জ্বলা বাতির আলোর
নিচে বসে তখন বলেছি তাকে একটু
অপেক্ষা করো, হবেই সূর্যোদয়।
ইচ্ছা ছিল বিশল্যকরণী এনে তার ক্ষত
নিরাময় করতে।
সে আর হলো কৈ? এ  ভাগ্যের বিড়ম্বনা,
রাত অবসানের সময় পেরলো, এখনও
সূর্যের দেখা মিললো না।