প্রিয়া,তোমার কি মনে পড়ে বহু দিন
আগের সে কথা।পুকুর ঘাটে তোমার
সাথে আমার প্রথম চোখাচোখি হতেই
শ্যামাপোকার মতো যেন লজ্জা বিঁধলো
তোমার আড়ষ্ট চোখে।বৃদ্ধা মাসী সেই
দৃশ্য দেখে ফেললো বলে তুমি তাকালে
ভিন্ন দিকে।
বহু দিন পরে অবসরে যখন আমরা
খোলা বেলকনিতে বসেছি এক সাথে,
তুমি বলেছিলে,‘যদিও সেদিন আমাকে
নিয়ে তোমার মনে কৌতূহলের সীমা
ছিল না,তবুও সংকোচে মুখ নিচু করে
স্নান সেরেই তাড়াতাড়ি সরে পড়লে,
আমার দিকে একবারের জন্যও তাকালে
না ফিরে।
সে সময় তোমার শরীরী ভাষা দেখে
আমার মনে হলো যৌবনে উত্তরণের
পথে হয়তো তোমার দেহে ও মনের
ভেতর জেগেছিল শিহরণ।তবুও সেই
প্রথম দেখার পরেই কোনও অজ্ঞাত
কারণে তুমি সেদিন নিজেকে করেছ
যথাসাধ্য নিয়ন্ত্রণ।
আমি স্নান সেরে ফিরে আসার সময়
বুঝিনি পরে কী ঘটতে পারে।সেদিন
সেই দোকানে আমি নবাগত।দেখেছি
দোকানি তার দোকানের সব দিকে
কড়া নজর রাখছেন নিয়ত।
তারই কড়া প্রহরায় মাসীর পাশে
তোমাকে বসে থাকতে দেখে সেদিন
বুঝেছি আমাদের দু’য়ের ঠাই হলো
একই ঠিকানায়।
দেখেছি,কী জানি কেন যে কারণে  
ও অকারণে সেই ঠিকানায় ঘন ঘন
তোমার ও আমার হয়েছে দেখাদেখি,
চোখাচোখি,এমন কি ঠোকাঠুকি।
দোকানি সহ সকলে সেসব দেখেছিল
টেরা চোখে।তাদের ভাবখানা এমনই
ছিল যেন আমরা বহু অপরাধ করে
বসেছি।
শেষে অজান্তে তোমার এবং আমার
মনের গহিনে প্রেমের পরশ লাগলো
যখন তোমার কী মনে পড়ে,প্রিয়া,
আমাদের কে, কখন, আগে এগিয়ে
এসে জমিয়েছিলাম আলাপন?কিভাবে
শুরু হয়েছিল প্রেমের রসায়ন’?
প্রিয়া,তোমার কী মনে পড়ে,একবার
আমাদের সজোরে ঠোকাঠুকির পরে
তুমি মাটিতে পড়ে গিয়েই উহু --,
আঃ ---বলে চিৎকার করে উঠলে
বিকট জোরে।মাসী সাথে সাথে ধরে
নিয়ে গেলো তোমাকে।জানি না,পড়ে
কিভাবে ভালোবাসার বসতিও গড়ে
উঠলো মনের ভিতরে।
এটুকু আমার বেশ মনে আছে,তুমি
আমাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলে
সুগন্ধি চা-এর প্রতি আমার আসক্তি
আছে কি?সে সময় শীত কাল।ঠাণ্ডাও
বেশ জোরালো।তখন তোমার সাথে
জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার অভিলাষে
বলেছিলাম তোমাকে,‘এমন ভয়ানক
শীতে মাঝে মাঝে চা-এ চুমুক দিতে
কার না ভালো লাগে’!
সেদিন দাপটে শীতে দেহের উষ্ণতা
বাড়ানোর স্পৃহাও ছিল মনে।দেখেছি
কিছু সময় পরে জানি না কার কী
ইশারায় দোকানের কর্মচারী ছেলেটি
একটি চা-এর পাত্রে গরম চা নিয়ে
এলো খাবার টেবিলে।
প্রিয়া,তোমার কি মনে পড়ে সেদিন
সুসজ্জিত একটি টেবিলে তুমি একটি
‘কাপ’ আর আমি একটি ‘প্লেট’ এই
আমাদের নিজস্ব পরিচয় নিয়ে প্রথম
গরম চা-এর উষ্ণতা অনুভব করেছি
এক সাথে।