হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
আমি অতি ক্ষুদ্র একটি  অণুজীব
৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সাল। চীনের উহান নগরে আমার  জন্ম
চীন থেকে আমি দ্রুত দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ি
গোটা দুনিয়া এখন আমার কবজায়,আমি বিশ্ব সম্রাট
আমি মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে মানুষের কলিজায় ঢুকে যাই


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
জন্মই আমার আজন্ম পাপ; আমি আতঙ্কের প্রতিশব্দ
আমার নাম শুনলে মানুষের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে
কারণ, আমার জন্মের মধ্যেই ধ্বংসের বীজ নিহিত
আমি অতি ক্ষুদ্র অতি সুক্ষ্ন; বলা যায় আমি অদৃশ্য
কিন্তু আমি অপার শক্তির অধিকারী এক আতংকিত ভাইরাস


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
বিজ্ঞানীদের কাছেও আমি যমদূত
কূল-কিনারা হারিয়ে ওরাও গালে হাত দিয়ে বসে পড়েছে
আমি বহুরূপী, রহস্যময়ী এক ভাইরাস
আমি প্রয়োজন অনুযায়ী রূপ ও শক্তি পাল্টাতে সক্ষম
ডাক্তার বিজ্ঞানী রাজা-বাদশাহ সকলকে আমি পরাস্ত করেছি।


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
আমি মানুষের নাক-মুখ দিয়ে ভিতরে ঢুকতে সক্ষম
শরীরের ভিতরে ঢুকেই মরণ খেলায় মেতে ওঠি
আমার থাবা খুবই ভয়ংকর; যা মানুষ আগে কখনও দেখেনি
পৃথিবীর অগণিত মানুষকে আমি কুপোকাত করেছি।


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
আমাকে রুখতে তোমরা কত সভা সেমিনার করছো
লকডাউনের নামে মানুষকে ঘর বন্দি করে রাখছো
হাট-বাজার অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করছো
আমাকে ঠেকাতে কত আয়োজন কতনা উদ্যোগ।


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
এবার পণ্ডিত, জ্ঞানী-গুণীব্যক্তিরা বোল পাল্টে দিল
আমাকে চিরতরে নির্মূল করার জন্যে ঘুম হারাম
শক্তিধর বিলাত, আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ভারত এবং অন্যরা
আমাকে নির্মূল করতে উঠে পড়ে লেগেছে টিকা বানাতে।


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
আমিও পিছু হটার নই; নিজের রুপ-চেহারা বদল করেছি
অমনি কূলে এসে মহাপণ্ডিতদের তরী ডুবে আর
এভাবেই মহাপন্ডিতগণ নির্বোধ বনে যায়
ওদের মাথায় হাত দেখে আমার ভীষণ হাসি পায়।


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
বেশ অবাক লাগে আমাকে নিয়ে মানুষের এত মহড়া কেন
তোমরা নিজেরাইতো নিজেদের কত ক্ষতি করে চলছো
মারামারি-কাটাকাটি, যুদ্ধ-বিগ্রহ করছো
খাদ্যে বিষ ঢালছো, আকাশ-বাতাসকে দূষিত করছো
নিত্য পাহাড়-জঙ্গল, নদী-নালাকে ধ্বংস করছো।


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
তোমরা কি অংক কষা ভুলে গেছো ? মাথা খাটাও, হিসাব মিলাও
তোমরা কিসব করেছো তা কি একবারও ভেবে দেখেছো ?
তা দেখবে কেন! কেবল আমাকে দোষছো!
তোমরা দখলদারিত্ব ধরে রাখতে কত প্রাণ কেড়ে নিচ্ছো
মারণাস্ত্রের ভারে সরাকে ধরা জ্ঞাণ মনে করছোনা
মানুষ মারতে দিন-রাত কূটচালে মত্ত হয়ে আছো।


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
সৃষ্টির সেরা জীবদের বিবেক-বুদ্ধি কই পালালো?
সৃষ্টির সেরা জীব বলে সৃষ্টিকর্তাকেই অস্বীকার করছো?
স্রষ্ঠার স্পষ্ঠ বাণীকে পরিবর্তন করতে চাইছো
স্রষ্ঠার মনোনীত দ্বীনকে ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চাইছো
কি করে তোমরা এত অকৃতজ্ঞহও, বল!


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
পাপ তোমাদেরকে পেরেকের মত আটকে রেখেছে
নিশ্চিত মৃর্তু জেনেও বিরত থাকতে পারছোনা;  কিন্তুকেন?
তোমরা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয়না
এখনও সময় আছে স্বজাতির মধ্যে রেষারেষি ভুলে যাও
সেবায় জীবন উৎসর্গ কর, প্রাণীকূল বাচাঁও, প্রকৃতিকে বাঁচাও
আমাকে নয় পারলে নিজেদের চর্কায় বেশি বেশি তেল দাও


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
অহংকার করনা। নিজের সীমার মধ্যে থাক
সৃষ্টিকূলের সেবা কর, ঈশ্বরের দিকে এগিয়ে আসো
ঈশ্বর দয়ার সাগর, তিনি তোমাদের দিকে এগিয়ে আসবে
পৃথিবী স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হবে, সত্য সুন্দর পথে চলবে ধরিত্রী।
থাকবেনা ভাইরাস, মহামারি, থাকবে পৃথিবী, থাকবে মানুষ।


হে মানুষ! খুব মন দিয়ে শোন; আমি করোনা বলছি
আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আর বিরক্ত করবনা যদি তোমরা শোধরাও
আমি বাতাসের সঙ্গে মিশে সারা দুনিয়া ঘুরে ঘুরে খুশবু ছড়াব
অক্সিজেনে ভরিয়ে দেব তোমাদের প্রাণ-মন;
পৃথিবী আবার প্রাণ ফিরে পাবে, পৃথিবী হয়ে ওঠবে স্বর্গরাজ্য
মানুষ পরিনত হবে শান্তি প্রিয় শান্ত মানুষ হিসেবে।


(১১ নভেম্বর ২০২০ দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত শুভ্রেন্দু ভট্টাচার্য নিবন্ধিত কাহিনী অবলম্বনে লেখা আমার এ কবিতাটি। ) ।