মৌন প্রতিবাদ
               - ইফতেখার হোসেন



অতি নগণ্য নগ্ন রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে
প্রকৃতিতে ভরা অতীব সুন্দর চৌরাস্তায়
কখন এসে পৌঁছে গেছি বুঝতে পারিনি
বুঝতে পারিনি অতীতের
ধামাধরা নগ্ন সমাজটাকেও
যারা সত্যিই নগ্ন;
খোলসের ধার ধারে না –।
ধার ধারে না মুখোস পরা উল্লসিত
বিজয়ী সমাজের  ক্রিয়াকলাপের।
আজ এখানে এসে পৌঁছে গেছি –
হয়তো ভুল করে ; না।… না,…
নগ্ন সমাজের আড়ষ্টতায় ।


কিন্তু বিবেক - এর উত্তর অন্য কিছু দেয় ।
বিদ্বেষ! নাকি আক্ষেপ ; নাকি লোভ …!
নাকি ! সূক্ষ্ম আবরণ দিয়ে ঢাকা -
কলুষিত এই সমাজটাকে
নগ্নদের বাসযোগ্য করবার-
প্রতিজ্ঞা নিয়ে এই চৌরাস্তায় এসে পৌঁছেছি
আমি জানি না …. ।


প্রেম দিয়ে যখন বিচার করি
তখন মুনিঋষি হয়ে যায় ।
কিন্তূ উপদেশ দিয়ে দুনিয়া চলে না
অচল হয়ে যাবে এই সমাজ
মতলববাজদের দৌরাত্ম্যে ।
অসাড় হয়ে যাবে জীবন
তাদের ভাবের উপেক্ষায় ।
কিন্তূ প্রেমকে বাদ দিলে
দুনিয়া যে আঁধার হয়ে যায় ।
ঢাকা পড়ে যায় স্তুপের তলায়
নগ্ন সমাজের দল ।
তখন মায়াগুলোয় শুধু মাথা চাঁড়া দিয়ে ওঠে ।
সদ্যোজাত জাতকটির মায়াবি কান্না
অসহ্য হয়ে ওঠে ।
কিন্তু তার চেয়েও বেশি অসহ্য
মতলববাজদের দৌরাত্ম্য ।
বাধ্য হই পাষাণ হতে
মায়ার কোনো মুল্য নেই ।
নেই প্রেমের কোনো ঝঞ্ঝাট,
নেই নগ্নদের আর্তনাদ ।
আছে শুধু কৃত্রিমতার শিহরণ
আছে ভাবাবেগের লুন্ঠন। ।


প্রতিবাদের ভাষা দিয়ে বিচার করি যখন
তখন সবকিছু ঘুষখোরদের পায়ের তলায়


মুখ থুবড়ে পড়ে ।


ক্ষমতার একক অভিযান চলতে শুরু করে ।
যেটাকে রোধ করার কথা;
ক্ষমতা বরঞ্চ তার দিকে-ই সাঁয় দেয়।
ক্ষমতা লোভের কাছে বিক্রি হয়ে যায় ।
শুরু হয় ক্ষমতার অপব্যবহার।
প্রতিবাদী জেলের ঘানি টানতে থাকে
মায়াগুলো তখন প্রেমের জোয়ারে আছাড় খায়
আর ডুকরে ডুকরে কাঁদে
কিন্তূ বুকের আগুনটা তখনও
দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে।
জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যায় এই বুক
আর বুকের ভাষাগুলো চায় প্রতিশোধ।
চায় ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের অবসান
চায় নগ্নদের বাসযোগ্য এক টুকরো জমি।


পুঁথিগত শিক্ষা দিয়ে যখন বিচার করি
তখন মানবাত্মা সেলের ভেতর
ধড়ফড় করতে করতে নিস্তেজ হয়ে যায়।
রাজনৈতিক ঝাণ্ডা তুলে অনায়াসে
‘বন্দেমাতরম’ গাইতে পারি ।
ভায়ের রক্ত দিয়ে ‘লাল-সালাম’ লিখে দি-ই--
বুভুক্ষুর বুকে।
আর নয়তো-বা
সবকিছু অদৃষ্টের উপর ছেড়ে দি-ই।
জবরদস্তি নামিয়ে আনি ভগবানকে
ধর্মের দোহাই দিয়ে ।
অতি নগন্য নগ্ন এই সমাজ
বুঝবে না এতো সাত-পাঁচ ।
কুর্সির পর কুর্সি বদল,
রাজার পর রাজা
মুখে প্রতিবাদের ভাষা,-
ক্ষমতাধারীদের বিপক্ষে কথার জাল বুনে
ক্ষমতায় আসা ! বড্ড রেওয়াজ হয়ে গেছে ।
তিন বছর বয়স থেকে গিলতে গিলতে
এতো বেশি গিললাম
আজও তোমার দর্শন পেলেম না ।
অথচ তোমার দোহাই দিয়ে এতো কামালাম
নগ্নরা দেখেও দেখতে পায় না
এতো বড়ো সম্মান কে বলি দিতে চায়!
তোমার দুধের শিশু কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ুক
তাতে আমার কি আসে যায়!
“আছে কার হিম্মৎ- কে ধরিবে হাল”
কে বলবে --;
“রাজা তোর কাপড় কোথায় ?”