প্রিয় অনুরাধা,
তুমি বলেছিলে-
আমাকে আর ভালোবাসবেনা।
আমার হাতে হাত রেখে, হলুদ শাড়ি পরে
আর দেখবেনা ফাগুন।
আমার কবিতার প্রথম পাঠক তুমি আর হবেনা।
কেদে কেদে খুব করে বলেছিলে-
আমি যেনো নতুন কাউকে খুজে নেই।
প্রিয় বাবার মনে দুঃখ দিয়ে
আমাকে তুমি পেতে চাওনা।
তোমার স্কুল শিক্ষক বাবা
তার প্রিয় ছাত্রের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে
বাকি জীবন নিশ্চিন্তে থাকতে চায়।
কষ্ট পেয়েছিলাম খুব।
মেনেও নিয়েছিলাম।
খোজ নিয়ে জেনেছিলাম-
শান্ত, সৌম্য, মার্জিত ছেলে।
সুন্দর চাকরী, মানে সুন্দর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা।
তার সাথে শুধু তোমাকেই মানায়।
নিজেকে ভীষণ রকমের অপাংক্তেয় মনে হয়েছিলো সেদিন।
তারপর একে একে কেটে গেছে
জীবনের দশটা বছর।
তোমার আমার শহর এখন ভিন্ন।
বছর পাঁচেক আগে পুরানো বন্ধু সুরেনের সাথে
হঠাৎ করে ঢাকার রাস্তায় দেখা।
একসময় আমাদের প্রেমের নিত্য স্বাক্ষী ছিলো সে।
কফি শপে বসে সে নিজে থেকে জানিয়েছিলো-
খুব ভালো আছো তুমি।
আদর্শ গৃহিণী হয়েছো।
স্বামী-সন্তান সেবায় সুখেই কাটছে তোমার দিন।
কফিতে চুমুক দিতে দিতে আমি শুধু শুনেছিলাম।
আলাদা করে কিছু জানতে চাইনি।
সেদিন থেকে বুকের মাঝে এক অব্যক্ত যন্ত্রণা।
তোমার সম্পর্কে আমার যে অনেক কিছু জানতে ইচ্ছা হয়।
স্বামির সাথে তুমি কি বৃষ্টিতে ভেজো?
পার্কে বসে একসাথে ফুচকা খাও?
সুমন চট্টোপাধ্যায় এর 'তোমাকে চাই' গানটি
এখনো কি বছরে হাজারবার শোনো?
বেলা বোস-কে নিয়ে অঞ্জন দত্তের '2441139' গানটি
বার বার শুনতাম বলে একসময় তোমার খুব বিরক্ত লাগতো।
অনেকবার ডিলেট দিয়েছো আমার মোবাইল থেকে।
আচ্ছা, এখন যদি তোমার সামনে
অন্য কেউ গানটি শোনে,
তখন কি আমার কথা মনে পড়বে তোমার?
আমার কিন্তু মনে পড়ে।
তবে সে মনে পড়া
তোমাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগায় না।
তবুও মনে পড়ে।
একটু দেরিতে হলেও
তোমার কথা আমি রেখেছি।
নতুন কাউকে খুজে নিয়েছি।
সে আমাকে তোমার চেয়ে
বেশি ভালোবাসে কিনা বলতে পারবোনা।
তবে সুখে-দুঃখে আমৃত্যু পাশে থাকবে
এ প্রতিশ্রুতি সে দিয়েছে।
তোমার মতো করে আমার হাতে হাত রেখে
সে ফাগুন দেখে, আকাশ দেখে,
দিগন্ত দেখে, স্বপ্ন দেখে।
তার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে  
আমি মাঝে মাঝে নির্বাক হয়ে বসে থাকি।
তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু নেমে আসে।
এ অশ্রুর ভাষা আমি বুঝি।
কিছু করার থাকেনা আমার।
অতিতের কাছে বর্তমানের কিছু থেকে যায় ঋণ।
সে ঋণ থেকে তুমি নিজেই আমাকে মুক্তি দিয়েছিলে।
অথচ আমি নিজেকে মুক্ত করতে পারিনি।