ফলকের পর ফলক অতিক্রম করে,
মাঠ-ঘাট-গ্রাম-নদী-পথ, এবং দিন পেরিয়ে,
অবশেষে এক রাত পেয়েছিলাম।
পত্র ঝরার শব্দ, শিশিরের মৃদু ছন্দে পতন, আর
দক্ষিণ থেকে ধেয়ে আসা জোরালো হিমবাহ,
সব মিলিয়ে এক অনিন্দ্য দৃশ্যপট।
শহুরে নিয়ন আর সোডিয়াম আভা, কখন নিভে যাবে?
এই ভেবে ক্লান্ত হবার ভঙ্গিতে, অনবরত
গুনে চলছিলাম মৃতপ্রায় পাতার কাপন।
হিমবাহ, আমার লোমকূপে জাগাচ্ছিল অনবদ্য শিহরন।
আলো নিভে গেল, কুয়াশা ঘনীভূত হলো,
এবং প্রদীপ জ্বলে উঠলো। কি এক দারুণ প্রকাশ!
মুগ্ধ নয়নে উর্ধমুখী আমি, দেখছিলাম আকাশ।
পাখি উড়ে যাচ্ছিল। আঁধারের গা ধুয়ে নামছিল জ্যোৎস্না।
উত্তাপ খুঁজছিলাম প্রতিফলিত সে আলোয়।
শুনছিলাম গান, অবিরত বয়ে চলা জ্যোৎস্নাধারার গল্পপাঠ।
দেহের সমস্ত পথপ্রান্তর, এবং সকল গলিই ভিজে যাচ্ছিল
তার স্রোতে। আহা! প্রকৃতির এমন প্রকাশ,
আমাকে নিবন্ধ করেছিল এক নিরব, নির্জীব এবং
নিষ্পলক দর্শক হিসেবে।
বাকরুদ্ধ হয়েছিল, ধ্বনি হারিয়ে বিবস্ত্র হচ্ছিল শব্দ।
বাক্য হিসেবে সংযোজিত হবার কথা ভুলে গিয়ে,
ঝরে পড়ছিল অনবরত জ্যোৎস্নাহত হয়ে।
মিলিয়ে যাচ্ছিল অজানা কোন গহ্বরে। আসলে,
মিলিয়ে যাচ্ছিলো কি? নাকি, হারিয়ে যাচ্ছিলো?
নাহ, কোনটাই না। বরং রাতের গা স্পর্শ করতেই,
স্পর্শকাতর এবং ক্ষুধার্ত রাত, বেছে বেছে খেয়ে নিচ্ছিলো
আমার মানসপটে রচিত হওয়া প্রতিটি শব্দকেই।
মূলতঃ সেটি ছিলো, এক শব্দভূক রাত। আর,
এমন রাতগুলোই কবিদের জন্য উৎসর্গীকৃত।।