মধ্যাহ্ন অদূরেই, এইতো আরো দুই আলোকবর্ষ
যূগল ঠোঁটের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকেও কম
দুই চোখের কোটরের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকেও কম
চোখের অন্তস্থে ঢেউ খেলানো দিঘী পেরুতে হবে
ওহে নাবিক, তুলে নিও চৌদ্দখান নীলপদ্ম।
নিষিদ্ধ মফস্বল বন্দর থেকে তুলে নিও নাঙা তলোয়ার
অথবা কার্তুজ কিম্বা বক্র ছুরি।


মধ্যাহ্ন অদূরেই, এইতো আরো দুই আলোকবর্ষ
মধ্যমা থেকে তর্জনির মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকেও কম
নসিকা গহ্বর দুইয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকেও কম
জোড়া পাহাড়ের গা ঘেঁষে চলা বন্ধুর রাস্তা পেরুতে হবে।
ওহে পথিক, তুলে নিও বনলতা সাধ্যানুযায়ী।
সটান বেয়ে পরা বিশুদ্ধ ঝরনা জলে স্নাত পাথরগুলো তুলে নিও অথবা শেওলা কিম্বা প্রবাল এক খাঁড়ি।


কখনো নাবিক, কখনো পথিক,
নৌকা ভাসিয়ে অথবা পিকাপে চেপে
চকিত আমি পেরোচ্ছি পথ সব দূরত্ব
কখনো পদদলে তোমার শাড়ির ডোরা বেয়ে,


হেডলাইট ছুটছে অস্থির, দোদুল লোমের
রোমান্টিক আলোড়নের কম্পন ভেদি
মৃগনাভী গন্ধ শুকে শুকে অনবরত, কেবল
ছুটে চলছি অবিরাম, অবিরত এবং একঘেয়ে।


মধ্যাহ্ন আর কত দূরে!


যখন চুম্বন সৃষ্টি করি মৃত্তিকা পৃষ্ঠে
জ্বলে উঠে চোখ ফুসে উঠে সমুদ্র
কেঁপে উঠে ভুগোল, শুরু হয় জলোচ্ছ্বাস
দিক হারিয়ে ফেলি, ভাসি দ্বিধাবিভক্ত,


কেঁপে কেঁপে ওঠি শঙ্কায়, কে জানে আরও কত পথ
অপরিচিত সব নগর বন্দর, অযাচিত
ধেয়ে আসা অজানা সব গন্ধ, অচেনা
রাস্তায় অনবরত আসক্ত আমি, সিক্ত, ক্লান্ত এবং রিক্ত।


মধ্যাহ্ন আর কত দূরে!


মধ্যাহ্ন অদূরেই, এইতো এসে পৌঁছেছি
দুটি চোখ জ্বলছে, দৃষ্টি রাখছে চোখের উপর
দুটি হাত নড়নোন্মুখ, ছুঁয়ে যাচ্ছে অনবরত
হঠাৎ জ্বলে দাও আগুন, চোখ কান ঝলসে দাও তার গতিতে
লক্ষ্য, তুমি বিশালাক্ষি, তুমিই জীবন,


মধ্যাহ্ন অদূরেই, এইতো এসে পৌঁছেছি
দুটি কান, কেবলই শ্রবনের অযোগ্য
জোড়া ঠোঁট মৃত্যুন্মুখ, অন্য জোড়ার কম্পনে
হঠাৎ সশব্দে ফেটে, বুক মুখ ঝলসে দাও তোমার ঈর্ষার এসিডে
নীলতারা, তুমিময় আমি, তুমি মানেই মরণ।


অবশেষে, কোথায় মধ্যাহ্ন!


চৌদ্দখান নীলপদ্ম খেয়ে আমি মানে রূপক নীল ফুল হয়ে
বসে আছি তুমি মানে রূপক স্টোভের পরে
তুলে নিয়েছিলাম যে কার্তুজ, বক্র ছুরি এবং নাঙা তলোয়ার
তাতে নিজেকেই ঝাঝরা করেছি, এসে তোমার আসরে।


এই যে দেখ করুন বনলতা শাখা, ঠিক এদের মতোই
আমার ক্ষুধার্ত হাত কতকাল ছুঁয়ে দেখেনি তোমাকে
স্নাত পাথরগুলোর মতোই সরল, প্রবালের মতো
কোমল তুমি, আমার ঘুমেও দন্ড দেইনি তোমাকে।


নেশাতুর গন্ধে মৌ মৌ শালবন,
নাড়া দিয়ে গেল নাকে
কোথায় মধ্যাহ্ন!


আবার যাত্রা শুরু, গোলাপি রঙের টানে
গারো পাহাড় থেকে মেনগ্রোভ বন।
কোথায় মধ্যাহ্ন!


নলখাগরা বন হু হু করে জ্বলছে
এক্সিলারেটর চেপে কেটে যায় আরও হাজার মাইল।
রাস্তায় অজানা খাদ, টুটি টিপে ধরেছে সময়
কোথায় মধ্যাহ্ন!


কথা শুনছে না স্টিয়ারিং, জেদ ধরেছে ঘোটক
অবাধ্য গিয়ার বাক্স, ব্রেক ধরছে না এখন।
কোথায় মধ্যাহ্ন!


কত শব্দ, ঘ্রাণ শুকে, কত বাঁকে ঘুরে ফিরে
ঘন ঘন নখোদর্পনে
চোখ মুখ পিঠ খুবলে ঠোঁটের পেটে প্রবাল ফুটিয়ে
ঘনঘন দন্ত্যের পিড়নে


ট্রিগারে রেখেছি তর্জনি আর অন্য হাতে ছুরি।
পাঁচ, চার, তিন............
কাউন্টডাউন শুরু
ট্রিগারে চাপতেই মস্তিষ্ক বিদীর্ণ
ওহে তিলোত্তমা, মধ্যাহ্ন মানে কেবলই তোমার ভ্রু।


আহা মধ্যাহ্ন, তোকে ছুঁতে আর কত পথ ছিল দেরী!