প্রতিদিন মরতে মরতে ক্লান্ত হলে খুঁজে নেবো ছুরি
বেডসাইড টেবিলে পড়ে রইবে ইস্তফাপত্র।
ভয়ে আমার বুক শুকিয়ে যাবে।
আরো একটা সকাল দেখতে সাধ হবে বড়।
পরক্ষণেই মাথাঝাড়া দিয়ে সে অবান্তর চিন্তা সরিয়ে ফেলে ছুরিটা উঁচিয়ে ধরবো।
আমি প্রস্তুত। হাত কাঁপবে থরোথরো? কাঁপুক।
সে অন্তিম মুহূর্তে জানালার ভারী পর্দা ঠেলে কানে আসবে চিৎকার।
ছুরিটা নামিয়ে চট করে রাতের পোশাকটা বদলে নেবো।
চৌকাঠ মাড়িয়ে দেখে নেবো দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার।
‘ ফাঁসি চাই’
‘ উপড়ে ফেল ও চোখজোড়া '
‘ কালো হাত ভেঙে দাও '
হাত দুটো বাড়িয়ে ধরবো চোখের সামনে,
কোথায়, খুব একটা কালো তো নয়।
এবার আমার চোখ পড়বে কুশপুত্তলিকাটার ওপর।
আমি পড়িমড়ি করে ছুটে যাবো।
“ জ্বলজ্যান্ত মানুষটা থাকতে খড়ের পুতুল পুড়িয়ে কি কাজ? "
দড়ি হাতে এগিয়ে আসবে কেউ, চোখের পলকে বেঁধে ফেলবে হাত-পা।
ধীরে ধীরে কেরোসিনের বোতলটা উপুড় করবে মাথায়।
তার উদ্ধত স্তনযুগলে আমার চোখ পড়বে।
অবধারিতভাবেই মনে পড়বে কোন এক অপরাধী স্বপ্ন।
জ্বলে উঠবে লাইটার, সে আলোয় দেখে নেব মায়াকাড়া তার মুখ।
শুধাবো, “ জীবন নদীর ওপারে কি বিক্ষোভ হয়?
অনেকখানি অভিমান বুকে নিয়ে
রাত-বিরাতে জ্বলে ওঠে খড়ের পুতুল? "
যমটুপিটা আলতো করে পরিয়ে দিতে দিতে বলবে,
“ ধরাধামে যে করেছে নরকবাস
ভয় কিসে তার ?
মৃত্যু-উল্লাসে করো হাস্য-পরিহাস। “
অন্ধকার নেমে আসা আমার দুনিয়ায় জ্বলে উঠবে আগুন।
লকলকে শিখাগুলো সাপের মত এঁকেবেঁকে উঠবে গা বেয়ে।
চমৎকারভাবে পুড়ে যাবো, শেষবারের মত হয়ে নেব শুদ্ধ।


হঠাৎ ঘামতে ঘামতে ঘুম থেকে জেগে উঠবো,
খোলা জানালা দিয়ে কানে আসবে হট্টগোল।
বরাবরের মত ওরা আজও জড় হয়েছে।
জানালা দিয়ে বাইরে একবার তাকাবো।
একটা কুশপুত্তলিকা পুড়ছে, চেহারাটা অবিকল আমার মত।
পাশে দাঁড়িয়ে যারা উল্লাসে নাচছে, তাদের গায়ে এক টুকরো সুতো পর্যন্ত নেই।
হাতের এক ধাক্কায় জানালাটা বন্ধ করে ফের ঘুমিয়ে পড়লাম।


মরতে মরতে একদিন আমি ক্লান্ত হয়ে যাবো,
চৌকাঠ পেরিয়ে বেরিয়ে আসবো জ্বলেপুড়ে ছাই হতে।
কেরোসিনের বোতলটা সযত্নে আগলে রেখে
তুমি থাকবে তো সেই রাতে?