আমার মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রক্রিয়াগুলো
গভীর মমতায়-
নিপুন হাতে-
সুচারুভাবে শেষ করে
আমার বাবা তার বুকের সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন।
মায়ের পার্থিব শরীর আজ থেকে বিলীন হয়ে যাওয়া মেনে নিতে বাবার কষ্ট কতটা তীব্র
সেটা বুঝার বয়স আমার তখনও হয়নি
তবে তাঁর দুচোখ গড়িয়ে জলের ধারা
এখনও আমার কপালে- চোখে-মুখে লেগে আছে ।।  


আমার ছয় বছর বয়সে মায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে
বাড়িজুড়ে অতিথির সমাগমে আমি ছিলাম উৎফুল্ল!!    
বাবা তার হৃদয়ের ক্ষরণ গোপন করে আমাতেই সদা ব্যাস্ত  
তার কাছে করা ছেলেমানুষি বায়নার তালিকাটিও
হতো বেশ দীর্ঘ ।


নামাজের কাতার, গির্জার ঘণ্টা, ভজন গাওয়া পুরুত  মিলেমিশে এক হয়ে যেতো সে সময়!
  
বয়স বাড়ে;
অশরীরী মায়ের অস্পষ্ট ছবি ভেসে উঠে মানসপটে
এক গভীর রাতে, বৃষ্টি হয় খুব  
অবিশ্রান্ত বৃষ্টির টুপটাপ--
কুকুরের ডাক।
নাহ! এ ছাড়া আর কোনো শব্দ ছিলো না ।
হঠাত মায়ের সাথে দেখা--
কপালে কোমল করতলের স্পর্শ দিয়ে  ঘুম ভাঙ্গায়  
অন্ধকারে স্পষ্ট আমার মা আর তার চোখ।  
নবভাঁজের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ধূসর অবয়বে
শাহাদাৎ আঙুলে ঠোট চেপে মা খিলখিলিয়ে উঠে
উচ্ছল এক কিশোরী যেন এই সময়ে সে
ফিসফিস করে কিছু বলতে চায়।
অস্পষ্ট।
আমি কান পাতি।
আমার সাথে মলিন স্মৃতিস্তূপও চেয়ে থাকে,
দেখা হয় মায়ের সাথে--
অশরীরি মায়ের বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকি,
মাঝরাতে তখনও বৃষ্টি।
  
মায়ের অপেক্ষায় যে পথ শেষ হয়---সে পথে চেয়ে থাকি
পশ্চিম আকাশে গোধূলির লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে। প্রার্থনার জন্য  শ্রেষ্ঠ সময়।
কাঁদবারও।।