শ্রীমতী ইন্দিরা প্রাণাধিকাসু
স্টীমার । খুলনা
মাগো আমার লক্ষ্মী ,
মনিষ্যি না পক্ষী!
এই ছিলেম তরীতে ,
কোথায় এনু ত্বরিতে!
কাল ছিলেম খুলনায় ,
তাতে তো আর ভুল নাই ,
কলকাতায় এসেছি সদ্য ,
বসে বসে লিখছি পদ্য ।


তোদের ফেলে সারাটা দিন
আছি অমনি এক রকম ,
খোপে বসে পায়রা যেন
করছি কেবল বক্বকম!
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
মেঘ করেছে আকাশে ,
উষার রাঙা মুখখানি গো
কেমন যেন ফ্যাকাশে!
বাড়িতে যে কেউ কোথা নেই
দুয়োরগুলো ভেজানো ,
ঘরে ঘরে খুঁজে বেড়াই
ঘরে আছে কে যেন!
পক্ষীটি সেই ঝুপসি হয়ে
ঝিমচ্ছে রে খাঁচাতে ,
ভুলে গেছে নেচে নেচে
পুচ্ছটি তার নাচাতে ।
ঘরের কোণে আপন মনে
শূন্য পড়ে বিছেনা ,
কাহার তরে কেঁদে মরে
সে কথাটা মিছে না!
বইগুলো সব ছড়িয়ে প ' ড়ে
নাম লেখা তায় কার গো!
এমনি তারা রবে কি রে
খুলবে না কেউ আর গো!
এটা আছে সেটা আছে
অভাব কিছু নেই তো ,
স্মরণ করে দেয় রে যারে
থাকে নাকো সেই তো!
বাগানে ওই দুটো গাছে
ফুল ফুটেছে রাশি রাশি ,
ফুলের গন্ধে মনে পড়ে
ফুল কে আমায় দিত মেলা ,
বিছেনায় কার মুখটি দেখে
সকাল হত সকালবেলা!
জল থেকে তুই আসবি কবে
মাটির লক্ষ্মী মাটিতে
ঠাকুরবাবুর ছয় নম্বর
জোড়াসাঁকোর বাটীতে!


ইস্টিম ওই রে ফুরিয়ে এল
নোঙর তবে ফেলি অদ্য ।
অবিদিত নেই তো তোমার
রবিকাকা কুঁড়ের হদ্দ!
আজকে নাকি মেঘ করেছে
ঠেকছে কেমন ফাঁকা-ফাঁকা ,
তাই খানিকটা ফোঁসফোঁসিয়ে
বিদায় হল —
রবিকাকা ।


পত্র
শ্রীমতী ইন্দিরা প্রাণাধিকাসু
স্টীমার । খুলনা


বসে বসে লিখলেম চিঠি
পুরিয়ে দিলাম চারটি পিঠই ,
পেলেম না তার জবাবই
এমনি তোমার নবাবী!


দুটো ছত্র লিখবি পত্র
একলা তোমার ‘ রব্-কা ' যে!
পোড়ারমুখী তাও হবে না
আলিস্যি তোর সব কাজে!
ঝগড়াটে নয় স্বভাব আমার
নইলে দেখতে কারখানা ,
গলার চোটে আকাশ ফেটে
হয়ে যেত চারখানা ,
বাছা আমার দেখতে পেতে
এই কলমের ধারখানা!


তোমার মতো এমনি মা তো
দেখি নি এ বঙ্গে গো ,
মায়া দয়া যা-কিছু সে
যদিন থাকে সঙ্গে গো!
চোখের আড়াল প্রাণের আড়াল
কেমনতরো ঢঙ এ গো!
তোমার প্রাণ যে পাষাণ-সম
জানি সেটা Long ago!


সংসারে যে সবি মায়া
সেটা নেহাত গল্প না!
বাইরেতে এক ভিতরে এক
এ যেন কার খল-পনা!
সত্যি বলে যেটা দেখি
সেটা আমার কল্পনা!
ভেবে একবার দেখো বাছা
ফিলজফি অল্প না!


মস্ত একটা বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ
কে রেখেছে সাজিয়ে
যা করি তা কেবল ‘ থোড়া
জমির বাস্তে কাজিয়ে! '
বৃষ্টি পড়ে চিঠি না পাই ,
মনটা নিয়ে ততই হাঁপাই ,
শূন্যে চেয়ে ততই ভাবি
সকলি ভোজ-বাজি এ!
ফিলজফি মনের মধ্যে
ততই ওঠে গাঁজিয়ে!


দূর হোক গে , এত কথা
কেনই বলি তোমাকে!
ভরা নায়ে পা দিয়েছ ,
আছ তুমি দেমাকে!


---


তোমার সঙ্গে আর কথা না ,
তুমি এখন লোকটা মস্ত ,
কাজ কি বাপু , এইখেনেতেই
রবীন্দ্রনাথ হলেন অস্ত ।


   (কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থ)