“শেষ দেখা”

“শেষ দেখা”
কবি
প্রকাশনী সত্যকথা প্রকাশনী ও বন্ধু প্রকাশনী
সম্পাদক এস এম নজরুল ইসলাম
প্রচ্ছদ শিল্পী অন্তরা ইসলাম
স্বত্ব নিজেস্ব রচনা
প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংস্করণ প্রথম বার
বিক্রয় মূল্য ১০০

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

শেষ দেখা

সবুজের সমারহ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে পরিবেষ্টিত একটি গ্রাম। যার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ইছামতি নদী। গ্রামের মূল মূল পয়েন্টে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দির। সাথে আছে খেলার মাঠ, খাল, বিল ও নদী। সব মিলে গ্রামটি যেন অপরুপ সাজে সেজেছে। গ্রামটির নাম ভুলবাড়িয়া। এত সুন্দর একটি গ্রামের নামটির শুরুতে ভুল শব্দটা আরও কৌতুহলী করে তোলে পাঠকদের। শুরুতে ভুল থাকলেও শেষে যেমন তা নাই, তেমনি এ গ্রামের মানুষ গুলোর জীবন যাপনেও কোন ভুল খুঁজে পাওয়া যায়না। যদি কিছু থাকে তা যেন সরলতার ফল। যা হোক সকলের প্রতি থাকলো গ্রামটি দেখার আমন্ত্রণ। এই গ্রামের একটি পরিবার কালের পরিবর্তনে নি:স্ব প্রায়। যেখানে জন্ম হয় শান্ত নামের ছেলেটির। দরিদ্রতাই যেন তার জীবনের বড় প্রতিবন্ধকতা। সচ্ছল সংসার ছিল। ছিল গোয়াল ভরা গরু আর মাঠ ভরা ধান। পুকুর ভরা মাছ ছিল তাদের। বাড়ীটাও ছিল অনেক টিপটপ। চার পাশে ফুলের বাগান। বাড়ীর ঠিক দক্ষিণে আছে বিশাল পুকুর। বাড়ীটা দেখে আজও মনে হয় যেন ঠাটবাট সব কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের। অনেক পুরাতন ঐতিয্যে ভরা এই বাড়ী। কত মানুষ খেটে খেত এ বাড়ীতে। মানুষের বিপদে আপদে পাশে এসে দাড়াতো যেই পরিবার। এখন সেই পরিবার শুধু হাহাকার আর দৈন্যতায় ভারা। মানুষের জীবন যেমন পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ শিশু থেকে কৈশর, কৈশর থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বৃদ্ধ। ঠিক তেমনি ভাবে বাড়ীটির সৌন্দর্য্যও এখন বৃদ্ধ। পরিবার টি নি:স্ব হওয়ার গল্পটিও অনেক দির্ঘ্য। তবে স্বল্প পরিসরে অল্প কথায় না বললে জানার কৌতুহল থেকে যাবে সবার মাঝে। তাই বলে হালকা করার চেষ্টা করছি। পরিবারের যিনি প্রধান তার নাম শেখ আব্দুল্লাহ আল সিরাজ। সমাজের সচ্ছল পরিবারের অন্যতম । মাথা ব্যথা নামক ব্রেইনের সমস্যা তাকে তিলে তিলে পুঙ্গ করে ফেলল। অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখানো শেষ কিছুতেই কিছু হয়নি কিন্তু একের পর এক টাকা দিয়ে গেছে মেডিক্যাল ও বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তারদের। কিছুটা তৈরি হয় মানুষিক সমস্যা। থাকে কিছু দিন পাবনা হেমায়েতপুর পাগলাগারদে। কাছের কিছু মানুষ তার এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তার কিছু সম্পদ হাতিয়ে নেয়। যা পরবর্তিতে তার চিকিৎসা বাবদ খরচ হিসেবে চালিয়ে দেয়। এভাবেই সিরাজ সাহেবের বর্তমান অবস্থার সৃষ্টি হয়। এখনও সে পুরোপুরি সুস্থ নয়। তবু ছেলেকে পড়া শোনা করানোর ইচ্ছা বিন্দু মাত্রও হ্রাস পায়নি তার। শেষ সম্বলটুকু যার পেছনে ব্যয় করছে তার নাম শান্ত। অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করে সে। ঠিকমত স্কুলের বেতন দিতে পারেনা। এমন কি দুবেলা দুমুঠো খেতেও পায়না ঠিক ভাবে। এভাবেই চলে তার প্রথমিক ও মাধমিক স্কুলের পড়ালেখা। শান্ত অনেক ভাল ছাত্র। তাই মাস্টাররা সাহায্য সহযোগীতা করে এগিয়ে নিল তাকে। এভাবে সে মাধ্যমিক পর্যন্ত পাশ করালো। ছেলেটি লেখা পড়ায় এতটাই ভাল যে, নিজের ক্লাসের ছাত্রদেরকেও পড়াতে পারত। মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্টার মার্ক নিয়ে উত্তির্ন হল। স্কুলের শিক্ষকরা সবাই তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিল। তাকে নিয়ে সবাই গর্ব বোধ করল। শিক্ষকদের মান রেখেছে সে। কিন্তু এবার সে কোথায় পড়বে, কিভাবে পড়বে এ নিয়ে সংকট দেখা দিল তার মনে। কেউ কেউ বলে গরিব মানুষের ছেলে এর বেশি পড়ালেখার দরকার নেই। কোন হাতের কাজ শিখে রুজি রোজগার কর। এত পড়ে করবে কি? আবার কেউ ভাবে এত ভাল ছাত্র টাকার অভাবে লেখা পড়া ছেড়ে দেবে? তাই তারা এগিয়ে আসে শান্তর পাশে। বুদ্ধি দিল কলেজে ভর্তি হওয়ার। গ্রামের কেউ কেউ ও স্কুলের শিক্ষকরা সবাই মিলে শান্তকে গ্রামের কলেজে বিনা বেতনে পড়ালেখার বন্দবস্ত করল এবং গ্রামে চাঁদা তুলে বই কিনা ও বাঁকি খরচ খরচা যোগার করে পড়ালেখার ব্যবস্থা করল। এভাবেই পার হয় দু’টি বছর। দু’বছর কষ্টের সাথে পাঞ্জা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকেও কৃতিত্বের সাথে পাশ করল সে। এখানেও শ্রেষ্ঠতর রেজাল্টের স্বাক্ষর রাখল শান্ত। সামনের দিকে এগিয়েই চলেছে সে। কিন্তু এবার বোধহয় সামনে এগোবার রাস্তা বন্ধ হয়ে আসছে। কারন এতদিন তো গ্রামের লোকজন ও প্রতিবেশিদের সহযোগীতা পেয়েছে। তাই যতটা সম্ভব হয়েছে, উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়াটা অতটা সম্ভব হবেনা। এবার প্রয়োজন অনেক টাকা। মাসে মাসে ভার্সিটির বেতন, নিজের থাকা খাওয়া, পোশাক পরিচ্ছদ ইত্যাদি। দু’এক টাকার কাজ নয়। আর্থিক সহযোগীতার পাশাপাশি মানুষিক শক্তি যোগাতে হবে তবেই এবার সামনে চলা সম্ভব। নিজ পরিবারের পক্ষে এত টাকা পয়সা দেওয়া তো দুরের কথা যদি কোথাও ভর্তি হতে যেতে হয়, যাওয়া আসার ভাড়াটা পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব হবেনা। তাই বাপের তেমন অর্থ সম্পদ না থাকায় স্নাতক পড়ার সাহস পায় না শান্ত। তবু কেউ কেউ বুদ্ধি দিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেই টিউশনি করার জন্য ছাত্র পাওয়া যাবে। যাতে করে নিজের খরচ জোগার হয়ে যাবে। এদিকে টিউশনিতে অনেক দখল আছে তার। প্রায় ৭ বছরের অভিজ্ঞতা তার। এলাকার সব ছেলে মেয়েদের পড়াত সে। বুদ্ধিটা খারাপ নয়। কিন্তু শহরে গিয়ে প্রথমেই এটা সম্ভব কিনা তা ভাববার বিষয়। তাছাড়া কোথায় গিয়ে থাকবে, কার কাছে যাবে এটাও তো ভাবতে হবে নিশ্চয়ই। অনেক চিন্তা ভাবনা করে শেষ মেষ তাই করবে বলে ভাবল শান্ত। কখনো শহরের হালচাল দেখেনি সে, কি ভাবে কোথায় কার কাছে যাবে ভাবতে থাকে। হঠাৎ একটা বুদ্ধি এসে সাহস দিল শান্তকে। ঠিক করলো ঢাকা যাবে। যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসে পাশে গিয়ে থামবে। খুঁজা খুঁজি করে ছোট খাট একটা চাকরী নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। তাই বাবা মার অভাবী সংসার থেকে অনেক কষ্টে যোগার করা মায়ের কিছু টাকা এক মাসের খোরাক হিসেবে সঙ্গে নিল। চলল অজানার উদ্দেশ্যে। জানা নেই কোথায় কার কাছে যাবে। পথ চেনা নাই, নাই কোন কোন ঠিকানা। এভাবে কোথায় গিয়ে দাড়াবে সে, এই প্রশ্নই বারবার ঘুরপাক খায় তার মনে। শেষ ভরসা হলো, কোন স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে গিয়ে থামবে। সকাল হলেই একটা ব্যবস্থা বের করা যাবে। সে একাকি চলতে চলতে ভাবছে যে, গিয়ে কি ভাবে কোথায় থামবে সে। কিন্তু মনবল এখনো হারায়নি। যাই হোক, একটা কিছু তো হবেই এত ভেবে লাভ কি?। সাহস যতটা পাচ্ছিল, মনে মনে ভয়ও কম ছিলনা তার। আল্লাহ যা করবে ভালই করবে। বাসে বসে এসব নিয়ে ভাবছে শান্ত। আশে পাশে কয়েক জন লোকের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য কথা বলতে থাকে শান্ত। ডানে বামে যারা আছেন তাদের কেউ যাবে গাবতলি, কেউ যাবে মতিঝিল, আবার কেউ কেউ সাবার নবীনগর যাবে। সব জায়গার নামই শুনেছে সে কিন্তু কখনো যায়নি। তবে শুনেছে মতিঝিল অনেক গুরুত্বপুর্ন জায়গা। তবে সেখানেই যাবে বলে মনে মনে একটা চিন্তা করতে থাকে। সাবার সাথেই কেউ না কেউ আছে, কিন্তু শান্ত বড় একা। হঠাৎ দেখা হলো আক্কাজ আলীর সাথে। শান্তর সামনের ছিটে বসা। একই গ্রামে বাড়ী। আক্কাজ ঢাকা সাবার বাস স্টেশনে পান সিগারেট বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। ছোট্ট একটা এক রুমের (ভাড়া) বাসায় থাকে। আক্কাজ শান্তকে দেখেই চিনে ফেলল এবং জিজ্ঞাসা করল কোথায় যাবে তুমি। শান্ত ততক্ষণে মনে সাহসের সঞ্চার করে নিয়েছে এবং বলল ঢাকা যাব। আক্কাজ পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, কার কাছে? জানিনা বলে মন ভার করে ফেলল শান্ত। আক্কাজ গরীব হলেও মনটা ছিল উদার। অচেনা জায়গা শহরটা তো ছোট নয়, এখানে কেউ কারো খোঁজ রাখেনা তুমি কিভাবে কোথায় গিয়ে থাকবে। যদি হারিয়ে যাও। এভাবে তো তুমি বিপদে পরবে। এভাবে কেউ বাড়ী থেকে বের হয়? তাছাড়া কিছু করার ছিল না তার। আক্কাজ শান্তকে বলল যে, তুমি তাহলে আপাতত আমার এখানে গিয়ে থাক। আমি তোমাকে কিছু জায়গা ও কিছু লোকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে পরে তুমি একাই চলতে পারবে। শান্ত বলল তাহলে অনেক ভালই হয়। আমি কাউকেই চিনিনা। কোন জায়গায়ও চিনিনা। শহরের মানুষ কতটা নির্মম তা নিজ চোখে না দেখলে তো ভাবাই যায়না। শান্ত একে তো ছোট মানুষ, তারপর আবার এবারই প্রথম ঢাকায় আসছে। শান্ত দির্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল বাঁচা গেল। এবার তো একটা গতি করা যাবে। ভয় কেটে গেছে শান্তর। গাড়ী ছুটছে দারুন বেগে। মাঝ পথে এসে নাস্তার বিরতি। আক্কাজ শান্তকে নিয়ে হোটেলে কিছু খাইয়ে নিল। নাস্তা শেষে গাড়ী আবার ছুটল আপন বেগে। যেন যাবে সীমানা পেরিয়ে। যেতে যেতে পথও ফুরিয়ে গেল। নামবার সময় হয়ে গেল। বেলা আর বেশি নাই নামতে নামতে হয়ত সন্ধ্যে হয়ে যাবে। বাস থেকে নেমে কিছুটা পথ পায়ে হেটে আর কিছুটা পথ যেতে হয় রিক্্রায়। বাস থেকে নামবার সাথে সাথেই সন্ধ্যা হল দিল মাগরিবের আযান। বাসায় যেতে যেতে রাত কিছুটা ঘন অন্ধকার হয়ে গেল। চেনা মানুষের সাথে চলতেই শান্তর বুক ধরপর করছে। একা গেলে কি হত ভেবে ভয়ে গা ভার হয়ে আসছে। কথা ঠিক ভাবে বলতে পারছে না সে। আক্কাজের বাসা ছিল টিন সেড বাড়ীর এক রুমের বাসা। ভাড়া এক হাজার টাকা । স্ত্রী ও এক মেয়ে সীমাকে নিয়ে ঐ রুমে আক্কাজ প্রায় ১০ বছর বসবাস করছে। তাই শান্তকে নিয়ে তার বাসায় আশ্রয় দিল। আক্কাজের ভাব সাব এমন মনে হয় যেন আক্কাজই এবাড়ীর মালিক। আক্কাজের মেয়ে ও স্ত্রীকে শান্ত আগে থেকেই চেনে। তাই বাসায় গিয়ে তাদের দেখে সব ভয় দুর হয়ে যায় এবং মনে হচ্ছিল তার নিজ বাড়ীতেই এসেছে। এতটুকু ঠাঁই পাওয়াও ছিল তখন দুরহ ব্যপার। শহরের কেউ কাউকে কোন সাহায্য করেনা। কারণ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানুষ একের পর এক ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে মানুষের প্রতি ভালবাসা মমত্ব্যবোধ হারিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া দেশ জুড়ে চলছিল তখন সন্ত্রাসী কার্যক্রম সরকার যেন তাদের নিয়ন্ত্রণে পরাজিত সৈনিকের পরিচয় বহন কারী। ক’দিন আগেও ঘটে গেল বিডিআর বিদ্রোহ। মারা গেল হাজারও আর্মি অফিসার। দেশ এখন প্রায় অশান্ত। সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা গেল কমে, কারণ যে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী নিজেরাই নিরাপদ নয় সে দেশের জনগণ কি ভাবে নিরাপদ হবে। সারা দেশ জুড়ে যেন এই কলরব। সবখানে ছড়িয়ে পড়ল আতঙ্ক। কারো ভাই কারো ছেলে হারিয়ে গেল আর ফিরে এলনা ওই সরকার নামক জালিম শাসকের কবল থেকে। যেখানে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আর সেখানেই ঘটে গেল এত বড় একটা দুর্ঘটনা। যা মানুষ ৭১ (একাত্তরেও) শোনেনি। নয় মাস ধরে যুদ্ধ করেও এতগুলো অফিসার মারা যায়নি। অথচ কয়েক মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে গেল কয়েক হাজার আর্মি অফিসার। গুলির আওয়াজে মনে হচ্ছিল নতুন ৭১ এর জন্ম হচ্ছে। এভাবেই দেশের মেধাবী সেনা অফিসারদেরকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হল। দেশ এখন মহা সংকটে অবস্থান করছে। দেশের ভেতরে বাইরে হচ্ছিল নানা ধরনের ষড়যন্ত্র। এমতাবস্থায় শান্ত এসেছে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে। এতটা ভংয়ঙ্কর পরিস্থিতি শান্ত কোনদিন দেখা তো দুরের কথা কানেও শোনেনি। তাই ভয়ে বুক ধরপর করে তার। কোথায় যাব আর কি হয়ে যাবে। এছাড়াও দেশে চলছিল গুম খুন আর প্রতিহিংসায় প্রতিশোধের লড়াই। এই লড়াইয়ে গুম হয়েছে অনেক গুলি প্রাণ। এসব দেখে শুনে দেশের প্রতি শ্রোদ্ধার পরিবর্তে অশ্রোদ্ধার জন্ম নেয় শান্তর মনে। মানুষ শিক্ষা করে দেশ ও জনগনের কল্যাণ সাধনের জন্য, শুধু ব্যক্তিগত সুখ সাচ্ছন্দের জন্য নয়। আর আমি এ কি দেখছি। এ দেশ কিভাবে সামনে অগ্রসর হবে। কোন পথ খোলা নেই আর। ক্ষমতার মোহে নীল নক্সা করে যারা এদেশের শিক্ষিত, মেধাবী, ও দেশ প্রতিরক্ষার হাতিয়ার গুলোকে হত্যা করতে পারে তারা দেশের কোনদিন কল্যান করতে পারেনা। সমাজকে বদলে দিতেও তার আরেকটা প্রতিজ্ঞা করতে হল। তাই আক্কাজের কাছে কোন মতে ঠাঁই পেয়ে নিজেকে এগিয়ে নেবার সুযোগ পেল সে। একেবারেই নিজের গ্রামের মানুষ বলে আক্কাজ শান্তকে ঠাঁই দিয়েছে। রাতটা কোন মতে কাটিয়ে দিল শান্ত। একই ঘরে এভাবে চারজন মানুষ থাকাটাও কষ্ট। আক্কাজ সাকালে উঠে শান্তকে নিয়ে আশে পাশের বেশ কিছু লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। একটা মেসও ঠিক করে দিল। যাতে শান্তর থাকতে কোন অসুবিধা না হয়। খাওয়া দাওয়া করত আক্কাজের বাসায় থাকতো মেসে এভাবে বেশ কিছু দিন থাকল সে। শান্ত সকালে বেড়িয়ে যায় সন্ধ্যায় ফেরে। সারাদিন দারে দারে কাজের খোঁজে বেড়ায়। আক্কাজেরও ছোট সংসার অল্প আয়ের মানুষ। আর কতদিন এভাবে চলবে ভাবতে থাকে সে। শান্ত এদিকে সকালে যায় বিকেলে ফেরে, ভাল ভাবে দুটো কথাও বলার সময় হয়না। শুক্রবারে শান্তকে বোঝাবে বলে ভাবতে থাকে আক্কাজ। সেদিন জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে একজন লোকের সাথে কথা হল শান্তর। লোকটি শান্তর সব বিষয় খোঁজ খবর নিয়ে বলল তাহলে তুমি আগামী কাল থেকে আমার স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেব ছোটদের ক্লাসে পড়াবে। আশা করি তোমার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এভাবেই আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এলো খুশিতে নাচতে শুরু করল। কিন্তু আক্কাজ ? তার তো সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। কারণ আক্কাজের ছোট সংসার, একজন মানুষের অতিরিক্ত খরচ চালানো তো কষ্ট। যদিও শান্ত এখন নিজের খরচ নিজেই চালানোর ব্যবস্থা করে ফেলেছে। তাই নিজের খরচ নিজেই চালাতে থাকে। আর মনে ভাবে যে, বেতন পেলে একবারে কিছু টাকা আক্কাজকে দিলে তার একটু উপকার হবে। আক্কাজের উপকারের কথা ভেবে স্কুলের প্রথম মাসের বেতন পুরোটাই দিয়ে দেয় আক্কাজকে এবং কোন অসুবিধা হলে তাকে জানাতে বলে। এতে আক্কাজ ভীষণ খুশি হয় এবং মনে মনে ভাবে যে, ছেলেটাকে আশ্রয় দিয়ে ভালই করেছি। যাক ছেলেটা আর যাই হোক স্বার্থপর তো নয়। ক’মাস যেতেই শান্ত এবার পড়া লেখার ভাবনাটা মাথায় নিয়ে আসে। এতদিন তো করেছে সে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। আল্লাহর অশেষ কৃপায় সে এখন বেঁচে থাকার আশ্বাস পেয়েছে। পড়াশোনা করবে তাই একটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ভর্তি হতে চায়। যে তাকে চাকরী দিয়েছে তার কাছে পরামর্শ করল সে যেভাবে পরামর্শ দিল শান্ত ঠিক সেভাবেই কাজ করল এবং ভর্তি হল। ভর্তি হলেই তো সব শেষ হয়ে যায়না, পাশাপাশি পড়ালেখাও করতে হয়। শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়া লেখা করাটা অনেক কষ্টের কাজ। তবু থেমে থাকেনি শান্ত। পড়ালেখার ঝোক ছিল তার আগে থেকেই তাই কোন প্রতিকূলতা দমিয়ে রাখতে পারেনা তাকে। এবারও পারবেনা। নিয়মিত ক্লাস করতে থাকে। অল্প দিনের মধ্যেই সে সকলের প্রিয় পাত্রে পরিনত হল। সবাই যেন তাকে একটু আলাদা ভাবে দেখতে শুরু করে। সকল শিক্ষক তাকে আলাদা ভাবে চিনে গেল। খুব আদর ¯স্নেহ পেতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এদিকে শান্তর বয়স্ক বাবা মা চিন্তায় ছেলের শোকে পাথর হয়ে গেছে, কোথায় গেল তার ছেলে। কতগুলো মাস পার হয়ে গেল কোন যোগাযোগ নাই, বেঁচে আছে না মরে গেছে না কি কোন বিপদে আছে, কিচ্ছু জানা নাই তাদের। ছেলের কথা মনে করে কাঁদছে সারাক্ষণ। শান্ত কি ইচ্ছা করে বাবা মাকে কোন সংবাদ দিচ্ছেনা, নাকি কর্ম ব্যস্তায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মোহে মন থেকে অন্য সব বিষয়কে আড়াল করে রেখেছে ? এটাই এখন আমাদের জানার বিষয়। ভার্সিটির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। শান্ত পড়ালেখার পাশাপাশি সংগীতের চর্চাও করত সে। তাই গানেও ছিল তার পারদর্শিতা। প্রতিযোগীতায় প্রথম বিজয়ী হিসেবে নাম লেখাতে সক্ষম হল শান্ত। সহপাঠি সব অচেনা মুখ এক নামে চিনে গেল শিল্পী শান্ত। কলেজের সব পরীক্ষাতে সর্বাধিক নম্বর অর্জন কারী হিসেবেও সুনাম আছে তার। সবাই তাকে মান্য করে। এভাবে সব কিছুতেই তার পারদর্শিতার প্রকাশ ঘটে গেল সারা ভার্সিটি জুড়ে। সে যেন হয়ে উঠল সকলের নয়নের মণি। কিন্তু শিক্ষকতার পয়সা দিয়ে থাকা খাওয়া ও পড়ার খরচ চালানো অনেকটা কষ্টকর হয়ে পরেছে। কারণ এখন তো খরচ বাড়ছে কিন্তু তুলনা মুলক ভাবে আয় বাড়েনি। তাই তো বাড়তি আয়ের জন্য শিক্ষকতার পাশাপাশি কিছু টিউশনি করাতে হবে। যাতে পড়াশোনা করতে কোন প্রকার সমস্যা না হয়। এত দিন তো তার কাছে অনেকেই পড়তে চেয়েছে কিন্তু সে পড়ায়নি। বাধ্য হয়ে এখন পড়াতে হবে তার। শান্তর বন্ধুদের নিকট এই প্রস্তাব দিয়ে দিল। পরদিনই শান্তর বন্ধু শুভ তার বোন নিপাকে পড়ানোর প্রস্তাব দেয়। শান্ত বলে যে কাউকে পড়াতে পারব। আমার কোন সমস্যা নাই। নিপা অভিজাত পরিবারের মেয়ে সেভাবেই বড় হয়েছে। তাকে পড়ানোর ভার পরল শান্তর উপর। শান্ত বাসায় গিয়ে রোজ পড়িয়ে আসে। দেখেতে দেখতে আরো অনেক ছাত্র-ছাত্রী তার কাছে পড়ার জন্য ভির জমায়। সবার মধ্য থেকে কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে পড়ানোর জন্য নির্ধারন করে। আরও অনেককেই সময় দিতে পারেনা। নিপা শুধু একাই পড়ে তার সাথে আর কেউ নেই। পড়ার পাশাপাশি কিছু বিনোদন ও করতে চায় নিপা। শান্ত সেভাবেই আনন্দ উৎসাহ দিয়ে পড়াতে শুরু করে। যাতে তার বুঝতে সহজ হয়। কিন্তু নিপা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে গল্প করতে চায় যা শান্ত পছন্দ করেনা। বেশ কিছু দিন শান্ত বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করে কিন্তু বুঝে উঠতে পারেনি। নিপার ভাষা শান্ত বুঝতে পারেনা। নিপাও পরিস্কার কিছু বলেনা। তবে বোঝাতে চায়। শান্ত ভাবে বন্ধুর বোনের দ্বায়িত্ব যেহুতু আমি নিয়েছি, তাহলে তার ভাল মন্দ দেখার দায়িত্বও আমার। তাই শান্ত ডানে বামে না তাকিয়ে নিপার পড়া ও পরীক্ষার দিকে দৃষ্টি দিয়ে পড়ার প্রতি আরও গুরত্ব বাড়াতে থাকে। যতই সে পড়ার প্রতি দৃষ্টি দিতে বলে নিপা ততই শান্তর দিকে দৃষ্টি দিয়ে রাখে। অর্থাৎ শান্তকে তার ভাল লেগে যায়। কিছু দিন পর নিপা সরাসরি প্রস্তাব দিয়ে দেয় যে, সে তাকে ভালবাসে। শান্ত বিষয়টি কিভাবে দেখবে এ নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। শান্তর উটন্ত বয়স এসময় এমন কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে। শান্ত ভেবে দেখবে বলে বিদায় হয়। পর দিন থেকে শান্তর প্রতি সরাসরি খুব বেশি খেয়াল শুরু করল নিপা। শান্ত কিছুটা ইতিবাচক দৃষ্টি কোন থেকে বিবেচনা করতে থাকে। প্রতিদিন তাকে অন্যরকম সেবা যত্নে মুগ্ধ করে ফেলল। শান্ত নিপার প্রতি ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। মধুর মধুর কথা আর আন্তরিকতা শান্তকে পাগল করে ফেলে। শান্ত এখন নিপাকে নিয়ে ভাবতে থাকে। তাহলে কি শান্ত নিজেও প্রেমে পরে গেল নাকি তার মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা না বলা কথার বহি:প্রকাশ? সে যাই হোক নিপাকে শান্ত এখন অন্য চোখে দেখে। ভাল লাগা থেকে যে দৃষ্টির সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমন দৃষ্টিতেই দেখতে থাকে শান্ত। এদিকে নিপা চুরান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে যে, সে শান্তকে ছাড়া অন্য কিছু ভাববেই না। এভাবে আস্তে আস্তে ভাল লাগা থেকে ভালবাসার সৃষ্টি হয়। শান্তও নিপাকে তার মনের অজান্তেই ভালবেসে ফেলেছে। এখন দুজনার হৃদয়ে দ’জন। আশে পাশে কেউ নাই। শান্ত পড়ালেখা নিয়েও ব্যস্ত সরাক্ষণ। কিন্তু মন থেকে সরাতে পারেনা নিপাকে। এভাবেই শান্তকে প্রেমের জালে জড়িয়ে ফেলে নিপা। ইদানিং শান্তর পড়া লেখার প্রতি মনোযোগ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। সারাক্ষণ নিপাকে নিয়ে ভাবনা তার। গ্রামের সহজ সড়ল ছেলে শান্ত অতটা বুদ্ধি শুদ্ধি নাই। প্রেমের গভীরতা এখন চরমে উঠে গেছে। কেউ কাউকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারেনা। নিপা এতটাই ভালবেসে ফেলেছে যে, শান্তকে সে তার বৈধ স্বামীর মত কল্পনা করে। পারলে যেন একই বিছানায় রাত কাটাবে। এতটা বেশি কাছে যাওয়াটা বোধ হয় ঠিক হবেনা। তাই শান্ত ুনজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। শান্ত বাইরের একটা ছেলে, আসল পরিচয় জানা নেই এই ছোট্ট বিষয়টি মাঝে মাঝে মন ভাঙ্গার ষড়যন্তে যোগ দেয়। বার বার হানা দেয় মনে, তবু ভালবাসার শক্তির কাছে বার বারই পরাজিত হয়। এভাবেই কেটে গেল কয়েকটি বছর। শান্তর চরিত্র ও মেধা দেখে মুগ্ধ ছিল অনেকেই। তাকে করেছিল অনেকেই প্রেম নিবেদন। কিন্তু শান্ত কাউকেই গরুত্ব দিতনা। নিপার আন্তরিগতা ও ভালবাসায় শান্ত নিজেই ধরা দিয়েছে নিপার হাতে। একদিন পরীক্ষা শেষে শান্ত নিপার সাথে গল্প করতে করতে বাইরের দিকে গেলে নিপার ভাই দেখে ফেলে তাদের। নিপার ভাইয়েরা এসে শান্তকে শাসিয়ে গেল এবং নিপাকে গাড়ীতে করে জোর করে বাড়ী নিয়ে গেল। বাড়ি যাবার পর কোন কথা জিজ্ঞাসা ছাড়াই প্রচন্ড প্রহারে রক্তাক্ত করে দেয় নিপার সারা শরীর। কেন অন্য ছেলের সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছে নিপা? এটাই যেন তার চরম অপরাধ। পড়া লেখার পরিবর্তে ছেলেদের সাথে হাত ধরে ঘুরে বেরানোর অপরাধে শাস্তি পেতে হল নিপাকে। কেন একজন ছেলের হাত ধরে ঘুরছে নিশ্চয়ই কারো অজানা থাকার কথা নয়। প্রেম যখন জমে উঠছিল ঠিক তখনই এমন একটা ঘটনার সৃষ্টি হয়। প্রেমের অপরাধ ক্ষমা করতে পারেনি নিপার পরিবার। জানা জানি হল, ছোট বড় প্রায় সবাই ঘটনাটি শুনলো। সারা ভার্সিটি জুড়ে যেন ঘটনাটি আলোচনার মুখ্য বিষয়ে স্থান পেয়ে গেল। জ্বরে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না নিপা। বার বার বলে যাচ্ছে আমি শান্তকে ভালবাসি। আমি শান্তকে ভালবাসি। কিচ্ছু খায়না সে, না খেয়ে আর ক’দিন থাকা যায়। নিপার মা তো আর এটা সহ্য করতে পারেনা। তাই সেও যেন নিপার সাথে প্রায় একমত যে, মেয়েদেও পছন্দ থাকতেই পারে। তার পরও যেহেতু তার ভাইয়েরা চায়না তাই ফিরে আসার জন্য অনেক বুঝালো কিন্তু শান্ত ছাড়া আর কোন কিছুতেই বুঝ আসবেনা তার। শান্তকে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, নিপা খাওয়া দাওয়া করতে শুরু করে এবং মন খুশিতে ভরে যায় তার। অসুস্থতার কারণে কয়েকদিন কলেজে আসেনা নিপা। প্রতিটি আঘাত যেন শান্তর গায়ে লেগেছে। খুবই ব্যথিত হলো সে। তাই এবার জীবন বাজী রেখে হলেও নিপাকে নিজের করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠল। নিপার ভালবাসার মূল্য দিতে এক পা পিছোপা হবেনা শান্ত। নিপা সুস্থ হল এবং নিয়মিত আবার ক্লাসে আসল শান্ত সরি বলতেই নিপা তাকে বারন করে এসব বলতে। নিপার ভাইয়েরা শান্তকে অনেক কথা বলে অপমান করেছে বলে নিপা নিজে শান্তকে সরি বলল। শান্ত মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। শান্ত আর নিপা দু’জন দু’জনকে কতটা ভালবাসে নিজ চোখে না দেখলে কল্পনাও করা সম্ভব নয়। কিন্তু মাঝ খানে কিছু কথা রয়ে যায় চির না বলা না দেখা আর আগামী দিনের দারুন বাস্তবতা। নিপার জন্য জীবনের সব টুকু সুখ বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছে শান্ত এর মূল্য কি সে পাবে। সমাজের চাপে বিভিন্ন প্রতিকূলতার কষাঘাতে সব ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যাবেনা তো? এখন শান্ত আর নিপার প্রেমের ভরা মৌসুম কেউ কাউকে ছাড়া এক মিনিট বাঁচতে পারেনা। কলেজের সব বন্ধুরা জেনে গেল, তাই নিপা ঠিক করল এভাবে লুকোচুরি আর কত দিন। একটা পার্টি করে সকলকেই জানিয়ে দেই যে, আমি শান্তকে ভালবাসি। নিপার জন্মদিন বেশ ধুমধাম করে আয়োজন করল। ভার্সিটির সকলকেই আমন্ত্রণ করল। বাবা মা ভাই বোন সবার সামনে শান্তকে পরিচয় করিয়ে দেবে বলে। নিপার জীবনের কথা চিন্তা করে রাজি ছিল সবাই। কিন্তু তার ভাইয়েদের মনে এখনো ক্ষোভ আছে। মেনে নেবে কিনা তা এখনো বলা যাবেনা। পার্টিতে অনেক লোক উপস্থিত সাথে শান্তও ছিল সাথে। সকলের সামনে সবাইকে জানিয়ে দিল যে, সে শান্তকে ভালবাসে এবং শান্তকেই বিয়ে করবে এবং তার বাবা মার উদ্দেশ্যেও বেশ কিছু বিষয় জানিয়ে দেয়। সবাই তো নিপাকে শুভেচ্ছা জানালো। কিন্তু ভাই গুলো ক্ষোভে ফেটে পরছে। কিছু বলতেও পারছেনা তারা। হঠাৎ একটা ফোন এলো নিপার। দেখা গেল সে নিপার খুব কাছের বান্ধবী। ফেইসবুকে দেখে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানাতেই ফোন করেছে সে। তার নাম রেখা নিপার স্কুল জীবনের বান্ধবী। সে এখন সিঙ্গাপুর থাকে। মা বাবা ও এক ভাই কাজলের সাথে। ব্যস্ততা আছে পরে কথা হবে বলে ফোনটা রেখে দেয়। অনেক আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হল তার জন্ম দিনের অনুষ্ঠান। ক’দিন বেশ জমিয়ে প্রেম করল দু’জন। কারণ আর কোন বাঁধা নেই তাদের। বিয়ে তো এখন সময়ের ব্যাপার। শান্তকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। বড় কিছু করতে হবে। তার পর বিয়ে হবে বাচ্চাও হবে তাদের। শান্ত এখন একটা স্কুলে শিক্ষকতা করে আর কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে প্রাভেট পড়ায়। এভাবেই সে তার জীবনের সকল ধাপ অতিক্রম করে আসছে। এবার সব শেষে জীবনের সর্ব শেষ ধাপে পদার্পন করেছে শান্ত। যে করেই হোক এ ধাপটিও কৃতিত্বের সাথে অতিক্রম করার প্রয়াস তার। কিন্তু এটা নিয়ে নিপার আপত্তি আছে। শান্ত যেন কোন মেয়েকে না পড়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিল নিপা। হঠাৎ এই বিষয় নিয়েই দুজনার মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এখন কি আর এসব নিয়ে ভাববার সময় আছে তাদের। সামনে অগ্রসর হওয়ার সময় এখন। এভাবে ছোট ছোট বাঁধায় যদি প্রেমের উপর প্রবাব ফেলে তাহলে বাঁকি জীবন কিভাবে যাতে তাদের? মেয়েদের পড়ানো কি কোন অপরাধ? এর আগেও তো সে অনেক মেয়েকে পড়িয়েছে সেব ধরলে তো শান্তর ফাঁসি হয়ে যাবে। মেয়েদের এমন আবদার যেন জন্মগত স্বভাব। এখন কি আর করা। সে যেহেতু চেয়েছে সেটা হতেই হবে। এভাবে আর কতদিন চলা সম্ভব? নিশ্চয়ই চলা সম্ভব নয়। শুরুতেই যদি সন্দেহ কাজ করে জীবনের শেষে পৌছবে কি করে? কারণ তো পরিস্কার যে, কেন নিপা মেয়েদের পড়াতে নিষেধ করে। যদি শান্ত আবার অন্য কাউকে ভালবেসে ফেলে। নিপা মেয়েদের পড়াতে নিষেধ করে কিন্তু শান্ত পড়াবেই। শান্ত কোন পেশাকে অনেক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। ওটা তার দায়িত্ব, সামনে পরীক্ষা চাইলেও পড়ানো বন্ধ করা যাবেনা। কমপক্ষে ১ মাস আগে জানাতে হবে। কিন্তু নিপা এটা মানতে রাজি না। কোন কথাই শুনতে রাজি নয় সে। নিপা এক পর্যায়ে রাগ করে চলে গেল। এমন অভিমানে নাকি প্রেম দৃঢ় হয়। এসব স্বভাব মেয়েদের সংসারে দু:খ ছাড়া সুখ দিতে পারেনা। এবার দেখা যাক ওদের কি হয়। শান্ত নিপাকে অসম্ভব ভালবাসে তাই তার দাবির বিষয়টা ইতিমধ্যেই ভাবতে শুরু করে। তবে এ দাবি মানতে যে কতটা অসুবিধায় পরতে হবে তাকে সেটা ভাববেনা। এটা কেমন কথা যে, নিপার সুবিধাই দেখবে আর শান্তর বিষয়টা বিবেচনা করবেনা একি হয়?। নিপার মনটা ভাল নেই তাই রেখাকে ফোন করে নিজের পরিস্থিতির কথা শেয়ার করল সে। রেখা তাকে মানুষিক সাপোর্ট দিয়ে বলল এমন হয়, সে যদি তোকে সত্যিই ভালবাসে দেখবি সে অবশ্যই মেয়েদের পড়ানো ছেড়ে দেবে। এ নিয়ে ভাবিসনে সব ঠিক হয়ে যাবে। রেখা নিপার সব ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে তার নিজের কথা বলল। বাবা মা ও ভাই কাজলকে নিয়ে সিঙ্গাপুর আছে। সিটিজেনশিপ পেয়েছে তারা। বাবা প্রাইভেট জব করে, আর ভাই বিজনেস করে। এই হল রেখা আর নিপার মাঝে কথোপকথোন। নিপার কৌতুহল জাগলো যে, রেখার ভাই কাজল বিয়ে করেছে কিনা? আবার ফোন করে জিজ্ঞাসা করল। রেখা বলল এখনো করেনি তবে করবে কোন ভাল পাত্রী থাকলে খোঁজ দিতে পারিস। নিপা কখনো অভাব দেখেনি তো তাই সব সময় ধনীর ঘরে বিয়ে করার স্বপ্ন ছিল তার। ভালবাসার টানে সে কার সাথে বিয়ে করছে সে নিজেও জানেনা। শান্তর পারিবারিক অবস্থা কেমন, শহরে বাড়ি আছে কি নাই, এ নিয়ে নিপা যেন নতুন হিসেব কষতে শুরু করে। কিন্তু হিসেব তো মেলেনা। কারণ ভালবাসা একদিকে অন্য দিকে সম্পদ কিভাবে মিলবে? কিছুতেই মেলাতে না পেরে শেষ মেষ অর্থ সম্পদ আর সমাজের অবস্থানকে প্রাধান্য দিল সে। ভালবাসার পাশাপশি সুখ সাচ্ছন্দের প্রতিও তো নজর রাখতে হবে। এ কেমন ভাবনা তার? শান্ত যখন সত্যিই নিপার প্রেমে যখন হাবুডুবু খাচ্ছে, ঠিক এমন মহুর্তে কাজল হয়ে উঠল শান্ত আর নিপার মাঝ খানে অদৃশ্য পাচীর। নিপার সমস্যার কথা কাজলও শুনতে পায়। কাজল মাঝে মাঝে নিপার সাথে কথা বলতে চায়। কাজলের সাথে কথা বলে নিপাও কিছুটা তৃপ্তি পায়। সিঙ্গাপুরের বিসনেজ ম্যান, তার সাথে কথা বলা তো ভাগ্যের ব্যাপার। এভাবেই নিপা নিজেকে কাজলের প্রতি দুর্বল করে ফেলে। কাজলও ঠিক তাকে কাছে পেতে চায়। প্রেম যেন এখন হস্ত বদল করছে। এটাও কি হয়?। একদিকে নিপার শান্তকে ভুল বুঝা, অন্যদিকে কাজল নিপাকে কাছে পেতে চাওয়া, নিপা এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। কাজল সিঙ্গাপুরে থাকে পারিবারিক ভাবে তারা ধনী । পরিবার সহ সেটেল সিঙ্গাপুর। কাজলের ছোট বোন রেখা আবার নিপার খুব ঘনিষ্ট বন্ধু। কাজলকে নিয়ে ভাবা যায়। এমন উদ্ভট চিন্তাও মাথায় আসে নিপার। শান্তর সাথে কোন ফায়সালা হলনা তার। শান্ত যতই ভাল হোক না কেন অপরাধ তার কোন অর্থ প্রতিপত্তি নাই। তাই বলে কি সে ভালবাসা পেতে পারেনা? না! কথায় আছে অর্থ যখানে নাই ভালবাসা সেখানে দুর্লভ। এই কথাটাই কি সত্য হয়ে যাবে, নাকি ভালবাসার ক্ষেত্রে কথাটি ভুল প্রমানীত হবে তা বোঝা সময়ের ব্যাপার মাত্র। সব মিলে নিপা তার অস্থির মনকে কোন ভাবেই স্থির করতে পারেনা। অর্থের লালসা তাকে ভালবাসা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে। তাই মনে মনে স্থির করেও ফেলে যে, সে কাজলের কাছে যাবে। যার ফলে এখন থেকে সে কাজলের সাথে প্রেমালাপ শুরু করে। কাজল নিপার সাথে যৌবনের তারনা সংক্রান্ত আলাপও করে। নিপার এখন যে বয়স তাতে ভালই লাগে তার। ধীরে ধীরে এতদুর এগিয়ে গেল সে, শান্ত জানেনা বুঝতেও পারেনা। নিপার আবদার শান্ত মেনে নিয়েছে, সে আর কোন মেয়েকে পড়াবেনা। কিন্তু নিপা তো এখন অন্য দেশের যাত্রী। কাজলের জালে ধরা দিতে সময়ের ব্যাপার অপেক্ষায়। শর্ত বেঁধে দিল শান্তকে শর্ত মানার পরেও শান্ত কি নিপাকে পাবেনা? এ কি করে সম্ভব, মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে সে অন্যের হয়ে যাবে? কেমন ভালবাসা ছিল যে, এক কথাতেই শেষ হয়ে যাবে? কি হল বুঝতেও পারছেনা শান্ত। সেদিনের ঝগড়ায় নিপা এতটা বেঁকে যেতে পারে, শান্ত ভাবতেই পারছেনা। শান্ত নিপাকে ডাকছে কিন্তু সে আসছেনা। শান্ত যতই বোঝানোর চেষ্টা করে নিপা ততই না বোঝার ভান করে এরিয়ে যেতে চায়। কথা না বলা কাছে না আসার কারণ খুঁজে পায়না শান্ত। নিশ্চয়ই কোন কিছু লুকাচ্ছে সে। শান্তর মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। আমাকে ছাড়া সে অন্য কাউকে বিয়েই করবেনা। বাড়ীর সবাইকে জানিয়ে দিল কিন্তু কি এমন হলো যে আমাকে সে সহ্যই করতে পারছেনা? শান্ত মনে মনে ভাবে হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। আবার সন্দেহ ও করে। কি করবে সে ভেবে দিশে হারা পাগলের মত অবস্থা। পিতা মাতা ও সামাজিক কর্মকান্ড দেশ নিয়ে গভেশনা জনদুর্ভোগ নিরসনে তার ভূমিকা ফেলে ভালবাসার পেছনে হাঁটল এতটা বছর এখন তার এই পরিস্থিতি তাকে ভালবাসার প্রতি বিরুপ করে তুলল। বন্ধুরা কিছুই বুঝতে পারছেনা শান্ত ও নিপার আভ্যান্তরিন দুরত্ব কতটা বেড়েছে। নিপা কখনো কখনো স্বাভাবিক আচরন করে আবার পরক্ষনেই অস্বাভাবিক আচরন করে। যা শান্ত কোন ভাবেই হিসাব মেলাতে পারছে না। ঠিকমত আস্থা রাখতে পারছেনা তার প্রতি। নিপাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই সে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়। এভাবে বার বার চেষ্টা করেও তার মুখ থেকে সঠিক কথাটা বের করতে পারেনা সে। কথা বলতে বলতে হঠাৎ নিপার মোবাইলে একটা রিং বাজল নিপা অস্থির চিত্তে দুরে সরে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করল, কি বলল তা বোঝা গেলনা। তবে এটা বোঝা গেল যে, রাত ১২ টা। এটা একটা সময় এবং পরে কথা হয়ত হবে রাত বারটায় এটাই মনে হল। শান্ত কিছুটা আন্দাজ করেই ধরে নিল যে নিশ্চয়ই নিপার জীবনে অন্য কারো আনা গোনার সুর রাত ১২ টা। নিপা একি পাগলামী করছে? সত্যিই কি কাজলের সাথে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়? এটা কি শুধুই প্রেম? নাকি লোভী মানুষের লালসা? নাকি ছেলে মানুষের পাগলামী? আসলে ওটা কি তা বোঝা যাবে নিপার স্পষ্ট কথার মাধ্যমে। তবে সেটাই বা কি করে বলি, শান্তকেও বলেছিল তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা। কিন্তু এখন তা উল্টে যাবার উপক্রম। শান্ত কে ফোন করেছিল, নিপাকে জিজ্ঞাসা করতেই অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করে নিপার হেসে উড়িয়ে দেবার ছল যেন শান্তকে অশান্ত করে তুলল। নিপার সাথে কথা না বলে বাসায় ফিরে গেল। তবে বাধ্য হয়েই শান্ত জীবনের প্রয়োজনে নিপার গোপন কথাগুলো জানতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করল। গোপনে নিপার মোবাইলে একটি নতুন সিম দিয়ে নিপার সিমটা শান্তর মোবাইলে স্থাপন করলো। রাত বারটায় কি হবে এই খবর জানার জন্য। ঠিক রাত বারটা বেজে গেছে রিং বাজছে শান্তর মোবাইলে। শান্ত ফোনটা রিসিভ করে চুপ করে আছে। আর ওদিক থেকে কথা গুলো আসছে, “হ্যালো, নিপা আমি কাজল, শুনতে পাচ্ছ? নিপা কথা বল। যাহ্ নেটওয়ার্কের সমস্যা। কথাই শোনা যাচ্ছেনা। আচ্ছা সকালে কথা হবে। শুধু এই টুকু শুনে রাখ তোমার ভিসা রেডি করেছি। রাখি ভাল থেকো” শান্তর বুঝতে আর বাঁকি থাকেনা যে, নিপা ইতি মধ্যেই কাজল নামের এক যুবকের সাথে প্রেমালাপ করে এবং অনেকটা পথ পেরিয়েও গেছে তারা। নইলে তো আর ভিসা রেডি হয়নি। এখন কি করবে শান্তই থাকবে না কি অশান্ত হয়ে উঠবে তা বাঝাই ভার। একদিকে পড়াশোনা অন্যদিকে প্রেমের শেষ দেখার চ্যালেঞ্জ। আবার ওদিকে বৃদ্ধ বাবা মার কথাও ভাবে প্রায়ই। আশা ছিল প্রফেসর হয়ে বাবা মায়ের সামনে গিয়ে দাড়াবে। শান্তর এ আশা কি পূরন হবে? এতটা সময় পার হয়ে গেল বাবা মা এতটা ধৈর্য্য ধারন করতে পারবে কি না, সেটাও তো ভাববার বিষয়। সব মিলে শান্তর জীবনটা ক্রমশ অশান্ত হয়ে যাচ্ছে। কি করবে সে বুঝে উঠতে পারছেনা। আবার এটাও ভাবে ভার্সিটির সব চেয়ে নামীদামী ছাত্র এখন মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার, সামনেই পরীক্ষা। পরীক্ষা খারাপ হলে সবার কাছে দাম কমে যাবে পাশাপাশী ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে। সব চেয়ে ভাল হবে আপন কাজে মন দেওয়া। নইলে নিজের অস্তিত্তের প্রশ্ন। না! এটা মেনে নেওয়া যায়না। শান্ত নিমিষেই মনটাকে শক্ত করে নিল। কারণ এত সময় বইয়ের পেছনে দিলেও অনেক কাজে আসত। পরীক্ষার পর এসব নিয়ে ভাবা যাবে। নিপা যদি আবার স্বাভাবিক ভাবে আমাকে ফিরে পেতে চায় আমিও বিবেচনা করবো। শুধু প্রেমই জীবন নয়, পিতা মাতা সামাজিকতা বন্ধু বান্ধব ইত্যাদি নিয়েই মানুষের জীবন। তবে কেন আমি জীবনের এক অংশ পেতে বাঁকি ৩ অংশ হারাবো? এই প্রশ্নই তার জীবনের সব ভ্রম দুর করে দেয়। পড়া শোনায় মননিবেস করে এবং প্রস্ততি নিতে থাকে বার্ষিক পরীক্ষার জন্য। সব সময় এখন তার একটাই ভাবনা যে, আমি যদি একটা জিনিসের শেষ দেখতে গিয়ে আরো অনেক কিছু শুরুই করতে না পারি, তাহলে আমার এ জীবন অপূর্ণই থেকে যাবে। সুতরাং এক জিনিসের শেষ দেখার চেয়ে দশ জিনিস শুরু করাও ভাল। তাই সামন্য প্রেমের শেষ দেখার মাঝে কোন স্বার্থকতা আছে বলে সে মনে করে না। যদিও প্রেমকে সামান্য বলে প্রেমের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে, তবু সে মনে করে দশ জনের ভালবাসার কাছে একজনের প্রেম আসলেই সামান্য। এখানে দশ জনের ভালবাসা বলতে আবার দশ জনের সাথে প্রেমকে বোঝায়নি, বুঝিয়েছে দেশ তথা সমাজের ভালবাসার কথা। তাই নিজের প্রেমকে তুচ্ছ মনে করেছে। একজন প্রেমিকের যে সকল গুন থাকা দরকার সেসব গুন রয়েছে শান্তর মাঝে। সমস্যা হলো প্রেমিকা বুঝে প্রেমিকের প্রেম পরিমাপ করা যায়। এখানে নিপার অবস্থা এমন যে, সে কোনটা রেখে কোনটা ধরবে বুঝে উঠতে পারছেনা। এমতাবস্থায় শান্তর সিদ্ধান্ত কি সমিচিন নয়? অজানার উদ্দেশ্যে সমুদ্র পথ পাড়ি দেওয়ার মত বোকামো তো সে করতে পারেনা। তবু বার বার তাকে নিয়ে ভাবতে থাকে। পরীক্ষার আগের রাত, হঠাৎ মনে পরে নিপার কথা। বেদনায় মনটা হয়ে যা ভার, বরফ যেন ঘিরে ফেলেছে হৃদপিন্ডকে। বাকহীন দানব যেন সামনে এসে পথ আগলে দাড়িয়েছে। শান্ত যেন নির্বাক নিথর যেন মৃত। শত হলেও তো ভালবাসার মানুষ। যতই দুরে যেতে চাক না কেন তা কি হয়? মাঝখানে বেশ ক’দিন নিপার সাথে দেখা হয়না শান্তর। দেখা করতে মন যেন লোহার প্রাচীরও ভেদ করে যেতে প্রস্তুত। কলেজে গেলেই তো দেখা হবে নিপার সাথে। তবু যেন রাতটি কাটেনা তার, ভাবে কখন হবে ভোর। দেখা হলে কি বলবে নিপাকে স্থির করতে পারছেনা। ভালবাসার গভিরতা এতই বেশি যে, শত যন্ত্রনা নিমিষেই ভুলে যায় শুধু মাত্র ভালবাসার টানে। মানুষের ভালবাসা কত যে গভীর হতে পারে শান্তকে না দেখলে অজানাই থেকে যেত। ভালবাসতে তেমন কিছুর প্রয়োজন হয়না। লাগে শুধু মন। তাই ভালবাসা তো সবার জীবনেই মামুলী ব্যপার। পরীক্ষার জন্য শান্ত কলেজে এসছে। নিপাও এসছে সেদিন। পুকুর পারে নারকেল গাছের নিচে দাড়িয়ে আছে নিপা। পরীক্ষা শুরু হতে আরো ২০ মিনিট বাঁকি। শান্ত মনের নিজের অবাধ্য হয়ে মনের টানে নিপার কাছে গিয়ে দাড়ায়। নিপাই আগে ডেকে কথা বলতে চাইল। শান্ত কথা না বড়িয়ে বলল নিপার সীম দিয়ে বলল এটা তোমার সীম এবং তোমার মোবাইলে আমার সীম। তোমারটা নিয়ে আমারটা দাও। নিপা অবাক হয়ে গেল। এবং এর জন্যই তো ক’দিন কাজল তাকে ফোন করছেনা মনে মনে ভাবে। যখন শান্ত কাজলের বিষয়টি জেনেই ফেলেছে তখন আর লুকিয়ে লাভ কি? শান্তকে জানিয়ে দিল যে, তার সাথে আর কোন সম্পর্ক নাই। সে কাজলের কাছেই যাবে। শান্তকে প্রয়োজন নাই। এমন কথা শুনে শান্ত এবার তাকে পরিস্কার করে বলে দিল “তোমাকে আজ থেকে মুক্তি দিলাম যদি ফিরে আস, ভাবব তুমি আমার ছিলে, আর যদি না আস তবে ভাবব, তুমি কোন দিনই আমার ছিলেনা আর থাকবেও না”। শান্ত বলতে চেয়েছিল নিপা যে দাবি করেছে তাতে সে রাজি। কিন্তু তা না বলে, বলতে হল তার সম্পুর্ণ বিপরীতটা। নিপা বলল যাও তোমার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নাই। শান্ত শুধু বলল যা বলেছি ওটাই আমার শেষ কথা। পরীক্ষার ঘন্টা বাজতেই শান্ত চলে গেল হল রুমে। নিপার সাথে কথা এভাবেই অসমাপ্ত রয়ে গেল। স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখা পড়া চালিয়েছে শান্ত অনেকেরই অজানা। প্রতি মাসে বেশ কিছু টাকাও উপার্জন করত সে। এভাবেই তার জমে যায় বেশ কিছু টাকা। ভাবে এবার পরীক্ষা শেষ হলে একবার গ্রামে যাবে। নিপার সাথে কোন যোগাযোগ নাই তার। নিপা তার বান্ধবীর ভাই কাজলকে বেশি বেশি ভাবতে থাকে। পরীক্ষা শেষে কাউকে কিছু না বলেই গ্রামে যাওয়ার ইচ্ছা হল তার। কয়েক দিনের মধ্যেই পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। এখন আপাতত কোন কাজ নেই তার। তাই আগামী শুক্রবার গ্রামে যাবে বলে স্থির করল। এর মাঝে কেন যেন অন্য চিন্তা মাথায় ঢুকলো বুঝে আসেনা। পরীক্ষা শেষ ফলাফল পেতে মাত্র দু’মাস বাঁকি। ফল বের হবার পরই গ্রামে যাবে। যাতে মা বাবাকে কিছুটা সান্তনা হলেও দিতে পারে। এমন প্রত্যাশায় রেজাল্টের অপেক্ষা মাত্র দ’মাস। তারপর মা বাবা উভয়কেই খুশি করতে পারব। তার আগে বরং কিছু টাকা বাবা মায়ের জন্য বাড়ী পাঠিয়ে দেই। তাই বিশ হাজার টাকা পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিল। বাবা মা উভয়েই চিন্তায় চিন্তায় খুব কাহিল হয়ে পরেছে। কেন এমন নিখোঁজ হয়ে গেল সে। কেউ কিছু জানেনা। এভাবে আর কত দিন তার আশায় থাকবে তারা? ভাবতেই কান্না পায় দুজনার। হঠাৎ পিয়ন বাড়ীতে এসে শান্তর বাবার নাম ধরে ডাকছে। শান্তর বাবা পিয়নকে দেখেই বুঝতে পেরেছে নিশ্চয়ই তার ছেলের খবর আছে। অধিক আগ্রহের সাথে কি, কি হয়েছে ডাকছেন কেন? আমার ছেলে কি কোন খবর পাঠিয়েছে? আপনার ছেলে কি শান্ত? জি হ্যা, পিয়ন তার হাতে তুলে দেয় অনেক গুলো টাকা ও একটা চিঠি। শান্ত পাঠিয়েছে জেনে খুশিতে হতবাক বাবার মুখে কোন কথা নাই। ছেলের বেঁচে থাকা একটা সংবাদ তারপর বহুদিন পর অনেক গুলো টাকা হাতে পাওয়া যে কত টা আনন্দের ছিল বাবা ছাড়া অন্য কেউ অনুভব করতে পারবেনা। তাই তো পরপর দুটি সুখের সংবাদ শুনা মাত্র জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে বাবা। মা এসে ডাকে কথা বলেনা। কি হয়েছে শান্তর বাবা কথা বলেনা কেন? তোমরা সব দেখনা আমার শান্ত বেঁচে আছে এ খবর শুনেও সে কথা বলেনা কেন?। শান্তর বাবা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ডাক্তার ডাকতে হবে। বাবা আর কথা বলে না, কাউকেই চিনতে পারছেনা, মাথায় পানি দেওয়া, গরম দুধ খাওয়ানো, হাত পা মালিশসহ কত কি-ই না করলো, কিছুতেই কিছু হলো না। ডাক্তার আনতেই হবে। গ্রামের হাতুরে ডাক্তার মানিককে খবর দিল, মানিক এসেই বুঝে ফেলল যে, এ কোন সাধারণ সমস্যা নয়। মানিক ডাক্তার না হলেও সবাই তাকে ডাক্তার হিসেবে মানে। কারণ ৩ বছর সে ডাক্তারের দোকানে কর্মচারী ছিল। কম বেশি অভিজ্ঞতা আছে। তাই গ্রামের সবাই অসুখ বিসুখ হলে মানিকের কাছে যায়। মানিক ও সবাইকে কম বেশি ভাল মন্দ চিকিৎসা দেয়। শান্তর চিঠি পড়ার জন্য শান্তর বন্ধু রাফিককে ডাকলো। রফিক এসে শান্তর কথা শুনে তো ভীষণ খুশি এবং চিঠিটা পড়তে লাগল।

চিঠি:
শ্রোদ্ধেয় মা ও বাবা
আমার সালাম নিও তোমরা কেমন আছ জানিনা। আশা করি ভাল আছ। আমি তোমাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। ছোট একটা চাকরির পাশা পাশি পড়া লেখার সৌভাগ্য ও হয়েছে ক’দিন আগে এম.এ পরীক্ষা দিয়েছি। খুব ভাল পরীক্ষা হয়েছে। দু’মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ হবে। ভাবছিলাম ফল পেয়েই আসবো তা আর হল না। অনেক দিন তোমাদের কোন খোঁজ খবর নেইনি বলে নিশ্চয়ই আমার উপরে রেগে আছ। মা তোমরা আমার উপরে রাগ করোনা। কারণ নানা ঝামেলায় ছিলাম ইচ্ছা থাকলেও তেমন যোগাযোগ করার সুযোগ ছিলনা। নিজে খেয়ে পড়ে চলার জন্য কিছুদিন কেটেছে, আর বাঁকিটা কেটেছে বেঁচে থাকার সংগ্রামে। ক’দিন কেটেছে নতুন কর্মকে শ্রোদ্ধার সাথে পালন করে নিজের অবস্থান তৈরি করতে। আর বাঁকি ক’দিন কেটেছে। অজানার এক গল্পের শেষ দেখতে। এখনো হয়নি সে গল্পের শেষ দেখা। ক’দিন পরেই তোমাদের কাছে ফিরবো আমার জন্য কোন চিন্তা করোনা। না বলে ক’টি বছর তোমাদের আড়ালে থাকার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার জমানো টাকা পাঠালাম তোমরা খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করো। আমি যেন আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারি সে জন্য দোয়া করো।

ইতি
তোমার ছেলে
শান্ত

ডা: মানিক বলল শান্তর বাবার অবস্থা তেমন ভাল নয় তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। তাছাড়া বিপদ হতে পারে। সাথে সাথে সবাই মিলে ভ্যান গাড়ীতে করে থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিল। ডাক্তার দেখে বলল যে, রোগিকে ভর্তি করে রাখতে হবে। শান্তর বাবাকে ভর্তি করা হল। বড় ডাক্তার এসে দেখে চিকিৎসা করল। আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরল। ডাক্তার বলল হার্ড স্টক করেছিল। বেশি সুখ বা বেশি কষ্টের ফলে এমন হতে পারে। অর্থাৎ কোন ঘটনা সে শুনা মাত্রই সহ্য করতে পারেনি। কারণ বয়স অনেকটা বেশি তো এ সময় এই সমস্যা গুলো হয়। তবে রোগির শরীর যথেষ্ট দুর্বল ঠিকঠাক মত খাওয়া দাওয়া না করলে যে কোন সময় মারা যেতে পারে। তাই এর প্রতি একটু নজর রাখতে হবে। কষ্ট পায় এমন কোন কথা বলা যাবেনা এবং রাগ করে এমন কথাও বলা যাবেনা। আশা করি ঠিক হয়ে যাবে। তবে এখনো সে ঝুকি মুক্ত নয়। শান্তর বাবা সুস্থ হয়ে বার বার শান্তকে দেখতে চায়। কিন্তু শান্তকে কে খবর দেবে? ধীরে ধীরে দু মাস পার হয়ে গেল। শান্তর পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় হয়ে আসছে। শান্ত আর নিপার মান অভিমানের পালা এখনো শেষ হয়নি। আগামী বুহ:প্রতিবার পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। কলেজে আড্ডা দিতে গেলে বন্ধু বান্ধব সবাই ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। আবার সেই নিপাকে ভাবিয়ে তোলে। কিছুই করার নেই অভিমানের ফলে তো একাকি কেউ কষ্ট পেতে পারেনা। আগামী কাল ফল প্রকাশ হবে এমন সময় নিপা পাশে না থাকলে কেমন দেখায়। কিন্তু নিপার কোন সংবাদ আনতে পারলনা। তার বান্ধবী শিলার কাছে শুনতে পেল যে, সে নাকি সিঙ্গাপুর চলে যাবে। তখন শান্ত বুঝে ফেলল কাজল নতুন প্রেমিকের কাছে যাবে। এও কি সহ্য করা যায়? আর কত ধৈর্য্য ধরবে সে, ধৈর্য্যওে সীমা আরো পূর্বেই অতিক্রম করেছে সে। মনকে আবার বুঝিয়ে সুঝিয়ে থামিয়ে রাখলো। শুধু মাত্র তার ভবিষ্যতের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেবার জন্যে। শান্ত প্রেমের ব্যর্থতায় নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়নি। সাধারণত যেটা হয় ব্যর্থ হলেই হয় অস্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হবে না হয় আত্মহত্যা করতে হবে। কিন্তু এটাই সেই পূর্ণতার অভাব যার ফলে মানুষ নিজের চলার পথ নিজেই রুদ্ধ করে দেয়। শান্তর ভাষায়: “মানুষের জীবনে যত বড় ব্যর্থতাই থাকুক না কেন, তা অবশ্যই তার সফলতার চেয়ে কম। ব্যর্থতা জীবনের অংশ, একে বাদ দিয়ে সফলতা খুঁজে বেরানো বৈরাগ্য জীবনের কর্ম”। ব্যর্থতাকে স্বাভাবিক ব্যপার ভেবেই ধৈর্য্য ধরে শান্ত। তাই এত গভীর প্রেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে। না কি নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে এই কারণে যে, নিপার চেয়েও বেশি ভালবাসে প্রতিটি মানুষের কর্মকে। কর্মকে ভালবাসার সাথে প্রেমিকের তুলনা হয় শান্তই প্রথম শিখালো। নিপা যে কাজ করেছে তা নিতান্তই গর্হিত। সুতরাং নিপাকে ভালবাসলেও তার কাজটাকে ভালবাসতে পারছেনা সে। তেমনি ভাবে শান্ত বড় হবে মানুষের সেবা করবে দেশের সেবা করবে, এটাই তার স্বপ্ন। ভালবাসার ঠুনকো অজুহাতে তো সেখান থেকে ফিরে আসা যায় না ? নিপাকে ভালবাসলে শুধু নিপাই ভালবাসবে, আর দেশ ও জনতার কল্যাণে পাশে থাকলে সারা জাতী ভালবাসবে। “ভালবাসার দাবিতে নিজেকে নি:শ্বেস করে দেওয়া সহজ। কিন্তু ভালবাসার জন্য নিজেকে টিকিয়ে রাখা দুরহ”। আজ বৃহ:প্রতিবার আর কিছুক্ষণ পরেই ফল প্রকাশ হবে। ঠিক সকাল ১০ টার সময় নোটিশ বোর্ডে রেজাল্ট শিট ঝুলিয়ে দিল। অধ্যক্ষ মহোদয় শান্তকে ডেকে পাঠালো। শান্ত ভয়ে ভয়ে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকলো। শান্তকে দেখেই জড়িয়ে ধরল এবং শান্তর ১ম শ্রেনীতে ১ম হয়েছে এই খবরটা দিল। আমরা তোমার জন্য গর্বিত। তুমি আমাদের কলেজকে সম্মানীত করেছো। যাও এবার তোমার প্রীয়জনদের কাছে খবরটা পৌছে দাও। প্রথম খবরটা পাঠালো আক্কাজ আলীর কাছে যে তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। তার পর সকল বন্ধু বান্ধব আত্বীয় সজনদের কাছে খবর দিল যে, সে মাস্টার্স পরীক্ষায় ১ম শ্রেনীতে ১ম হয়েছে। খুশিতে মন ভরে গেছে শান্তর। যেন আর কিছু চাওয়ার নেই তার। সে তার নিজ জীবনের শেষ দেখতে চেয়েছিল। শেষ দেখা তো শেষ হবার পথে। নিপার জীবনের শেষ দেখতেও যে ইচ্ছে ছিল তার। সে সৌভাগ্য কি তার হবে ? শান্ত এখন অনেক বড় পুরস্কার অর্জন করতে চলেছে। অধ্যক্ষ সাহেব শান্তকে কি যেন লিখে পাঠিয়েছে। নিশ্চয়ই শান্তর কোন সুখবর। সত্যিই তাই, সরকার শান্তকে তার মেধার পুরস্কার সরুপ শিক্ষক পদে আসিন করতে চায়। তাই অধ্যক্ষ সাহেব শান্তকে লিখেছে “তোমার ভাল রেজাল্টের জন্য সরকার আমাদের কলেজকে পুরুস্কৃত করেছে। সেই সাথে তোমার জন্য একটা সুখবরও রয়েছে যে, সরকার তোমাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছে। আগামী কাল এসে নিয়োগ পত্রটি নিয়ে যেও। আর হ্যা, আগামী মাস থেকে তুমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করবে”। শান্ত বিষয়টি ভালভাবে বুঝতে পারছেনা আসলে ঘটনাটা কি? যা হোক পর দিন সকালে শান্ত কলেজে ঢুকতেই অধ্যক্ষ মহোদয় শান্তর হাতে একটা নিয়োগ পত্র তুলে দেয় এবং শুভেচ্ছা জানায়।

এত বড় একটা অর্জন ক’জন মানুষের ভাগ্যে জোটে? বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই যেন শান্তকে নতুন করে দেখছে, এতটাই আগ্রহ উদ্দিপনা নিয়ে সবাই তাকে ঘিরে ভির করল যেন বিদেশ থেকে কোন প্রেসিডেন্ট এসেছে। তা কি হবারই কথা নয়? অনেক অসম্ভাবনাকে সম্ভবনায় রুপ দিয়েছে শান্ত, যার দরুন সবাই শান্তর সাথে বন্ধু হিসেবে শেষ দেখা করতেই এমন ভির। ক’দিন পরই তো শান্ত এ কলেজের শিক্ষক। শান্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানালো সকল শিক্ষকদেরকে সালাম করে আশির্বাদ নিল। এদিকে শান্তর বাবার অবস্থা খুব ভাল নয়, মাও অসুস্থ হয়ে পরছে। তাই এবার অবশ্যই শান্তকে বাড়ী যেতে হবে। ক’দিনের জন্য শান্ত বাড়ী যাবে। আগামী মাসে তো শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে, তখন তো ব্যস্ততাও বেড়ে যাবে। সুতরাং এটাই উপযুক্ত সময় বাড়ী যাওয়ার। সকাল হতেই শান্ত বাড়ী যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল, এরই মাঝে আবার নিপাকে মনে পড়ে গেল। নিপার সাথে তার সাময়িক বিচ্ছেদের ঘটনা বার বার পিড়া দিতে থাকে। এদিকে নিপাও বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পরেছে। কারণ শান্তকে সরাসরি কিছু বলতেও পারছে না, আবার কাজলের কাছেও যেতে সাহস পাচ্ছেনা। অন্যদিকে আবার লোভকে সংবরন করতে পারছেনা। কি করবে নিপা? শান্তকে ডেকে কথা বলবে? নাকি সাফ জানিয়ে দেবে সে যেন নিপাকে ভুলে যায়। নাকি কাজলকে বারন করবে বার বার ফোন করতে? দুজন দুদিকে ভাবছে। শান্ত এসব ভাববার পাশাপাশি নিজের ভাবনার আড়ালে বাবা মাকে না রাখার বিষয়টা বেশি ভাবছে। তাই তো নারীর টানে, বাবা মার সাথে দেখা করে তাদের সুখ দু:খের কথা জানতে চায় শান্ত। তাই আর দেড়ি নয় সময় প্রায় শেষ। ২ টার পরে গাড়ী পাওয়া যাবেনা। আজ মিস হলে আবার একদিন পিছিয়ে যাবে। এখনই সে গাড়ীতে উঠবে। সকাল ১০.৩০ মি: প্রায় ৭ ঘন্টার দুরত্ব। বাড়ী পৌছতে বিকাল হয়ে যাবে। তরি ঘরি করে তৈরি হল সে। অনেক রকম ফল, মিষ্টি, দুধ, ডিম, শাড়ী, লুঙ্গি আরো রং বে রঙের পোষাক কিনল তার বাবা মায়ের জন্য এবং টিকিট করে গাড়ীতে উঠে বসল শান্ত। আগের শান্ত আর বর্তমানের শান্তর মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। তার বাবা মা হয়ত প্রথমবারে নাও চিনতে পারে। বাবা মার জন্য দুটি চশমাও কিনেছিল শান্ত। কিন্তু ভুলবসত বাসায় রয়ে গেল। তার বাবা মা আসলে শান্তকে দেখতে পারবে কি না সেটাই এখন প্রশ্ন। দৃষ্টি শক্তি কমে গেলে চশমা দিলেই সমাধান। কিন্তু সে চশমাটাও আবার বাসায় রয়ে গেল। এটা কি তার কোন ভুল ? নাকি নিয়তি? সত্যিই নিয়তি। এভাবে বাবা মায়ের চশমা ফেলে এল শান্ত। গাড়ী চলছে আপন বেগে। কোথাও যেন বাঁধা নেই। চলছেই চলছে। অনেক সময় পেড়িয়েছে। প্রায় নামবার সময় হয়েছে। এর পরের স্টেশনেই নামবে সে। বাড়ী আর মাত্র কয়েক মিনিট বাঁকি। বার বার কষ্ট দিতে থাকে তার ফেলে আসা চশমা। বাস থেকে নেমে ভ্যান গাড়ীতে গিয়ে বাসায় নামতেই তার বাবা মা খবর পেল যে শান্ত এসছে। শুনা মাত্রই বিছানা ছেড়ে লাঠিতে ভর করে এগিয়ে আসতে থাকে উঠানের দিকে শান্তর বাবা। যদিও সে হাটতে পারেনা এবং ডাক্তার বারন করেছে। অতি আনন্দে যা ঘটে দৌড়ে আসতে গিয়ে বলে শা-ন্ত এ-সে-ছি-স না-কি-রে? হ্যা বাবা আমি শান্ত কেন আমাকে দেখতে পাচ্ছনা? না দেখতে পারছিনা কাছে আয় তো বাবা। শান্ত তো কাছেই দাড়িয়ে রয়েছে অথচ তার বাবা দেখতে পারছেনা। বাবা আমি তোমার সামনে দাড়ানো। তোমার চোখে কি সমস্যা হয়েছে বাবা। তোমার জন্য আমি চশমা কিনেছিলাম কিন্তু ভুলে ফেলে এসেছি। নিজের ছেলে সামনে আছে তবু দেখতে পারছেনা এই কষ্টেই বুক ফেটে যাচ্ছে তার। শান্তর খুশির কথা শুনার সাথে সাথেই তার বাবা তার চোখের সামনেই চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। শান্ত দৌড়ে গিয়ে বাবা বলে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু বাবা তো আর কথা বলেনা। এতদিন পর ছেলে এলো মুখো মুখি দাড়ালাম তবু তাকে দেখতে পেলনা। এই কষ্ট আমি আপনি সইতে পারলেও শান্তর বাবা কিন্তু সইতে পারেনি। মা ভেতর থেকে আসতে আসতেই ঘটনাটি ঘটে গেল? মা শুধু জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছেরে শান্ত ? তোর বাবাকে ধরে আছিস কেন? শান্ত বাবার অবস্থা দেখে নিরব যেন কোন অনুভূতি শক্তিই নেই তার। মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে আরো যেন মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে সে। মা, বাবার অবস্থা দেখে তারও মুখে কথা নেই। বয়স হয়েছে তো। এতটা কষ্ট কি বহন করার মত শক্তি তাদের আছে। এতদিন পর ছেলে বাড়ী ফিরেছে তাও আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হয়ে, সেই ছেলেকে দেখতে না পারা কি কম কষ্টের? বাবা শেষ দেখাটাও দেখতে না পেরে নিজেকেই শেষ দেখা দিল। এত কিছুর পর ছেলেকে কাছে পাওয়া যে কতটা আনন্দের শান্তর মা-ই শুধু বলতে পারবে। কিন্তু এসুখের মাঝে নিজের স্বামীকে হারানোর বেদনাটাও কত ভয়ঙ্কর সেটাও অন্য মানুষ উপলব্ধি করতে পারবেনা যা পেরেছে শান্তর মা। তাই শান্তর মাও চলে গেলেন সেই ঘুমন্ত পল্লিতে, যেখানে দু:খ নেই, চিন্তা নেই, প্রত্যাশা নেই, আশা নেই, ভালবাসাও নেই। যা পৃথিবী থেকে খুব দুরে নয় পাশে থেকেও বহুদুর। যেন সীমানা পেরিয়ে। বাড়িতে যেন কষ্টের রোল পরে গেল। পরিবেশ যেন ভারী হয়ে উঠছে। গাছ পালা যেন শোক প্রকাশে আওয়াজ করতে চায়। বাবা মাকে দেখতে এসেই কি তার বাবা মাকে তারাতারি হারাতে হল? নাকি দেড়িতে আসার কারণে এমন দৃশ্য দেখতে হল তাকে? প্রশ্নটা রইল আপনাদের কাছে। যদি দেড়িতে আসা অপরাধ হয় তাহলে নিস্বন্দেহে শান্তকে আমরা খুুনি বলতে পারি। না! এত তারাতারি খুনি নাই বললাম শত হলেও বাবা মা তো তারই। কিন্তু শান্তর পাজর ভাঙ্গা নিশ্বাসের শব্দ কি কেউ শুনতে পাচ্ছেন? আমি তো ঠিক শুনতে পাচ্ছি। ঘুর্ণি ঝড় বয়ে চলেছে তার হৃদয়ে। একটা পাথরও এমন কষ্ট নি:শব্দে সহ্য করতে পারেনা। শান্ত তো একটা শিক্ষিত সমাজ সেবক ও সমাজের বিবেক। অশ্রু তো কোন বাঁধা মানেনা। বুক ভেসে যায় মাটিতে গড়াগড়ি খায়। চিৎকারে কম্পন সৃষ্টি হয়। করুন আর্তনাথে আসমান যেন ভেঙ্গে পরার উপক্রম। একি ভাবা যায়? বাবা মার জন্য কত কিছুই না কিনেছে সে। কে ব্যবহার করবে সেগুলো? কাকে দেবে সে। কাকে মা বলে ডাকবে, কাকে বাবা বলে ডাকবে? নি:স্ব রিক্ত, নি:সঙ্গ জীবনে বেঁচে থাকার প্রতি আগ্রহ কমে যায় শান্তর। নিজেকে অপরাধী ভেবে কান্নায় ভেঙ্গে পরে সে। বার বার একই কথা বলে, আমি কি এসেছিলাম তোমাদের শেষ দেখা দেখতে?

ক্লান্তি প্রহরে রৌদ্র দুপুরে
বিদায় বেলা শেষ দেখা,
বিধাতার কলমে আমার কপালে
এটাই ছিল কি লেখা?
সঙ্গি হারানোর বেদনায় কাতর
শত জ্বালা বহে বুকে,
হৃদয় হয়েছে পাথর আজি
তোমা হারানোর শোকে।
তোমাদের জন্য হয়েছি ধন্য
দেখলেনা চেয়ে মোরে,
কত বড় আজ হয়েছি মাগো
বলব গিয়ে কারে?
কত লোক মোরে সম্মানের সাথে
ডাকছে শোন ঐ
সব কিছু আজ পেয়েছি পাশে
মাগো তোমরা কই?

নরম হৃদয়ে বার বার কড়াঘাত করলে হৃদয় হয়ে যায় পাথর। বাবা মাকে এক সাথে হারানোর বেদনা কতটা নির্মম হয় শান্তকে না দেখলে আমরা কোনদিন হয়ত কল্পনায়ও আনতে পারতাম না। বুকে পাথর চাপা দিয়ে প্রতিবেশিদের সাথে বাবা মায়ের জানাজা শেষ করে মাটির ঘরে রেখে আসল শান্ত। বাবা মাকে রেখে এসে শান্ত বেসামাল আরো অশান্ত হয়ে উঠল। বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিল। কোন ভাবেই তাকে বোঝানো যাচ্ছিল না। কি করে যাবে একই সাথে মা বাবার এমন দৃশ্য কটি মানুষ দেখেছে? তার পর বেশ কিছু ঘটনার সাথে সাথে এমন ঘটনা শান্তকে যেন বিদগ্ধ করে ছাড়ছে। মনকে কিছুতে বোঝাতে পারছেনা যে, সে এর আগে কেন আসেনি। এত বড় অপরাধের বোঝা বইতে পারছেনা। খাওয়া দাওয়া ছেড়েছে। কিছু খায়না, কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলতে পারছেনা শান্ত। অনেক কষ্টে তাকে সান্তনা দেওয়া গেল। তবু বার বার নিজেকে চরম অপরাধী সাভ্যস্থ করে শাস্তির দাবি জানায়। যেন সে মানুষিক রোগিতে পরিনত হয়েছে। কি করবে সে? কি করা উচিত আপনিই বলুন। শান্তকে দোষ দিলেও বাস্তবতাকে পরাজিত করানো সম্ভব নয়। নিয়তির দৃষ্টি ফেরানো যায়না। তবু মানুষ বাঁচে, খায়, হাসে, খেলে, এভাবেই তো জীবন চলে। কখনো দেখা হলে জেনে নিব তার নিজের মুখ থেকে বর্তমানের অনভুতির কথা। মসজিদে কেঁদে দুদিন পার করেছে, বাবা মার প্রতি ছেলের দোয়া ও ইচ্ছা আল্লাহ সবার আগে কবুল করে থাকেন। শান্তর বাবা মা জান্নাত বাসি হোক আমরা এই কামনা করি। পাশাপাশি শান্ত তার নিজ জীবনে সুখি হোক এটাও কামনা করি। শান্তর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বারাবরে একটা চিঠি এসছে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে। শান্তকে ১০ দিনের জন্য একটা প্রশিক্ষনে দেশের বাইরে যেতে হবে। কর্তৃপক্ষ শান্তকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করে। নতুন চাকুরী শুরতেই অবহেলা করলে কেমন দেখায়? তাছাড়া শান্ত এমনিতেই কোন কাজে অবহেলা নিজেও করেনা অন্যের অবহেলাও পছন্দ করেনা। সুতরাং কষ্ট যতই হোক না কেন শান্তকে ১০ দিনের জন্য সিঙ্গাপুরে যেতেই হবে। তাই ফোন পাওয়ার সাথে সাথে টিকিট করে ঢাকাতে চলে এলো শান্ত। কিন্তু তার মানুষিক অবস্থা দেখে এটা প্রতিয়মান যে, তার জীবনে বড় কোন দুঘটনা ঘটেছে। সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অধ্যক্ষের সাথে দেখা করে বিষয়টি নিশ্চিত হলো এবং সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হল। নিপা শান্তর শিক্ষক হওয়ার খবরটা আগেই শুনেছে। কিন্তু অতবেশি গুরুত্ব দেয়নি। শান্তর জীবনে এমন এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল তবু জানতে পারল না নিপা। এটা যে কত বড় দুর্ভাগ্য তার জন্য শুধু মাত্র সে নিজেই জানে। আস্তে আস্তে দিন বাড়ছে। নিপার সাথে শান্তর দুরত্বও বাড়ছে। তবে নিপা হেয়ালির ছলে যতটুকু বলেছে এর জন্য এত কিছু হওয়াটা সমিচিন নয় বলে মনে করেন অনেকেই । সব সমস্যা সমাধান হত যদি নিপা শান্তকে সব খুলে বলতো। কিন্তু নিপা অনেক জিদী, অতিরিক্ত জিদ মানুষকে কি ভাবে তিলে তিলে ধ্বংস করে ফেলে নিপাকে না দেখলে বোঝাই যেতনা। নিজের জিদকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে শান্তর মত একটা ভাল ছেলেকে হারাতে বসেছে নিপা। তাকে হারিয়ে কোথায় কার কাছে গিয়ে পরবে কে জানে? তবে নিপার এটা ভাবা উচিত যে, সে মেয়ে মানুষ এবং সে শান্তকেই ভালবাসে ও বিয়েও করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেকি এটা মনে করবে? দেখা যাক শান্ত সিঙ্গাপুরে যায় নাকি নিপা? কাজলের সাথে কথাও দিয়েছে আগামী সপ্তাহে সে সিঙ্গাপুর আসছে। কাজল নিপাকে বলে যে, সেখানে গেলে তাকে প্রাচুর্য্যরে মাঝে খুব মানাবে। দেশে তো থাকে তারা যারা আনকালচার্ল। যত দ্রুত পার চলে আস। আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি। অল্প দিনেই তোমাকে আমি যে কতটা ভালবেসে ফেলেছি তা কাছে না পেলে বোঝানোই যাবেনা। নিপা তো কাজলের কথায় মুগ্ধ হয়ে দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কথায় আছে “দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথা,শুনলে বলে যথা তথা” কাজলের কথা যতই শুনেছে ততই মজেছে। কিন্তু সর্বনাশের বাঁকি রাখেনি কিছুই। এবার যাবার পালা। আর মাত্র তিনদিন দিন বাঁকি। নিপা সিঙ্গাপুর যাওয়ার সব বন্দোবস্ত শেষ করেছে। ২ দিন পর ফ্লাইট। নিপা সিঙ্গাপুর যাবে! লোভে মানুষের এতটা অধ:পতন হয় নিপাকে না দেখলে বিশ্বাসই হতনা। আগামী কাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক আসবে নতুন প্রফেসর শান্তর সাক্ষাতকার নিতে। তাকে ভাল ফলাফলের জন্য সরকার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করল, সরকারী খরচে সিঙ্গাপুর যাবে এমন ভাগ্যবান হওয়ার পর তার অনুভুতিটা কি তা জানার জন্য সাংবাদিক আসবে। পরদিন সাংবদিক এসে তার সাক্ষাতকার নিল। শান্তকে সরকারকে ধন্যবাদ জানালো ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল সরকারের প্রতি। তার আশা প্রত্যাশার কথা ও সম্ভাবনার কথাও সাংবাদিকদের জানালো। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন যাপন সম্পর্কে অনেক গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য তুলে ধরলো মিডিয়ার সামনে। সমাজের বেহাল অবস্থা ও সরকারী কিছু কর্মকান্ডের সমালোচনা করে কিছু কথা বলেন। দেশ ও সমাজের পরিবর্তন আনতে হলে মনভাবের পরিবর্তন আনতে হবে। ইতিবাচক মনোভাবের ফলে দেশের কল্যান সাধন করা সম্ভব। কোন একটা ব্যাক্তি বা একটা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ দিলেই চলবেনা। বরং হাজারো প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে কোন ভাল কর্মকর্তাই নেই। এসবের প্রতিও দৃষ্টি দিতে হবে। সববিষয়ের উপর কঠন মুলক মতামত পেশ করায় এবং সরকার বিরোধী সত্য কথা সাহসিকতার সাথে উপস্থাপন করার কারনে শান্তকে সাংবাদিকরা প্রফেসর নজরুল ইসলাম নামে ভুষিত করেছে। তার নাম এখন নজরুল ইসলাম (শান্ত)। এতটা সুখের খবর কিছুটা হলেও দু:খকে ভুলে দিতে পারে। কাল সকাল দশটায় ফ্লাইট। রাতে ঘুম হয়না তার। সারা রাত নানা ধরনের চিন্তা ভাবনা করে সিঙ্গাপুরের জন্য নিজেকে মানুষিক ভাবে প্রস্তুত করল। জিপ গাড়ীতে করে ঠিক সকাল নয়টা ত্রিশ মিনিটে এয়াপোর্টে পৌছে দিল শান্তকে। নিপাও রাতভর কল্পনা জল্পনা করে এয়ার পোর্টের দিকে রওনা হল। কারণ তার ফøাইটও একই সময়ে সম্ভবত একই প্লেনে। এয়ার পোর্টে পৌছে রেস্ট রুমে বসে নিপা পেপার পড়ছে। প্রথম পাতাতেই দেখে শান্তর ছবি। কিন্তু হেড লাইন হলো প্রফেসর নজরুল ইসলাম শান্ত দশ দিনের ছফরে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। নজরুল নাম দেখে নিপা বিস্মিত হয়েছে। কারণ শান্তর ছবি দেখে তো সে চিনে ফেলেছে। কিন্তু নাম তো অন্য লোকের। এই নামের পাশে শান্তর ছবি কেন? কিন্তু একটু পড়তেই বুঝে গেল যে, তার ভালবাসার মানুষটিই এখন নজরুল ইসলাম শান্ত। বড় মুশকিল হয়ে গেল। আমি শান্তকে পরিহার করলাম কিন্তু সে এখন বড় মাপের পদক পাওয়া প্রফেসর। আমার এই ফ্লাইটেই যদি শান্তরও ফ্লাইট হয়। শান্ত যদি দেখে ফেলে আমি সিঙ্গাপুর যাচ্ছি। আমি কি ফিরে যাব? পত্রিকা পড়ে এসব ভাবতে থাকে নিপা। আবার ভাবে যদি কিছু জিজ্ঞাসা করে কি জবাব দেবে। এ নিয়ে নিপার সারা শরীর যেন ঘেমে ভিজে যাচ্ছে। অস্থির অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা যে, সে যাবে কিনা। তার পরও কথা একটাই সিঙ্গাপুর প্রবাসী বন্ধু কাজল। এদিকে আরেকটা ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নিপার। ভাবনাটা হলো শান্ত এখন অনেক বড় মাপের মানুষ। তার কছে গেলে যদি ভুল বোঝে? আবার ভাবে কাজলের কাছে গেলে যদি ক’দিন পর ফেরত পাঠায়? কি করবে সে? উভয় সংকটে নিপা। এমন মানুষ কখনো বেশি কিছু করতে পারেনা। শুরুতেই ভস্মিভূত হয়ে যায়। জিদ করে থাকলে কিছু সময় মনে হয় ভালই করছি কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো। তাই নিপার অবস্থা এখন লেজে গবরে। পা যেন তার উঠছেনা। শান্ত প্লেনে গিয়ে নিজ আসনে বসে আছে। পাশে একটা সিট খালি কোন লোক নেই। আসছে না কেন কেউ বলতে পারেনা। অনেক ডাকা ডাকি করা হল কিন্তু সে আসল না। আসলে ডাকা ডাকি কখন হয়েছে নিপা বুঝতেই পারেনি। নিপা পেপার হাতে বসেই আছে। সিদ্ধান্ত কিছুই নিতে পারছেনা সে। মহা সংকটে অবস্থান করছে। শান্তর অনুরোধে প্লেনের টাইম আরও ৩০ মিনিট বর্ধিত করল কর্তৃপক্ষ। চিন্তায় কখন যে আধাঘন্টা সময় পার করে দিয়েছে বুঝতেই পারেনি। শান্তর বাম পাশের সিটটি খালি আর এই খালি সিটটিই হচ্ছে নিপার জন্য। শেষ মেষ নিপা যাবে এবং এই প্লেনেই। কিছুক্ষণ পরই আস্তে আস্তে প্রবেশ করল নিপা। ডানে বামে না তাকিয়ে তার সিটে গিয়ে বসে পরল। পাশের সিটে বসা শান্ত কিন্তু তার দিকে তাকিয়েও দেখল না যে, তার পাশের সিটে কে বসেছে। বসতেই শান্ত যতদুর পারে জব্দ করে দিল। কখনো যেন এমন কাজ না করে। বলল আমরা এতগুলো লোক আপনার জন্য অপেক্ষা করছি কান্ড জ্ঞান নাই নাকি? গলার আওয়াজ যেন চিনে ফেলল নিপা। চুপ করে থাকে সে। দুজন দুদিক থেকে দুভাবে টিকিট করেছে কিন্তু পাশাপাশি দুজন। ভাবাই যায়না। এটাও কি নিয়তির খেলা? শান্তর পাশে বসে সিঙ্গাপুর যাবে কিন্তু যাবে সে নতুন প্রেমিকের কাছে। অজান্তেই শান্তর আগের প্রেমিকের পাশে বসে আছে সে। শান্ত চিনতে পারেনি কিন্ত নিপা বুঝতে পেরেছে। তাই নিপা মাথা নিচু করে বসে আছে। কিন্তু হঠাৎ শান্তর ওয়াশ রুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলে উঠতেই চোখে পড়ে। নিপার চেহারা। শান্ত আর কোন কথা না বলে শুধু বলল ও তুমি? দুর্ভাগ্য বসত আমার সাথে দেখা হয়ে গেল। ভালই হল কাজল নামের সেই সম্ভ্রান্ত ভদ্র লোকের কাছে যাওয়ার সময় তোমাকে দেখতে পেলাম। ভাল থেকো। আর দেখে এসো তোমার নতুন প্রেমিক কাজল কেমন ছেলে। কি করে সেখানে তাও দেখতে পাবে। অনেক ভয়ে ভয়ে উঠেছিল যেন, শান্তর সাথে দেখা না হয়ে যায়। কথায় বলে যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত্রি হয়। যার ভয়ে লুকিয়ে প্লেনে উঠেছে অথচ তার পাশেই বসে আছে। শান্ত নিজেও বুঝতে পারেনি যে, নিপা তার পাশে বসে আছে। ছবিসহ পত্রিকায় স্বাক্ষাতকার ছাপা হয়েছে শান্ত জানেই না। তাই পত্রিকা খুলে ছবি দেখে বিস্মিত হল। মনে মনে প্রাউড ফিল করতেছিল। কিন্তু পাশে নিপাকে দেখে আবার একটু অসস্তি অনুভবও করছিল। কারণ সে এভাবে নিপাকে দেখতে চায়নি। পাশাপাশি যেত নিপাও খুব লজ্জা পাচ্ছিল। যা কেউ কাউকে বলতে পারছিলনা। পেটের ভেতর থেকে যেন সব বেরিয়ে আসতে চায় নিপার। নিজেকে লুকাবার কোন পথ নেই আর। বাধ্য হয়েই কথা বলতে হবে তার সাথে। কিন্তু কি বলবে সে? শান্ত যদি কথা না বলে? আবার কথা বললে যদি সব জানতে চায়? কি জবাব দেবে? নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখে দন্ডায়মান নিপা। শান্ত নিপার অসস্থিকর অবস্থা দেখে পুনরায় বলল কয়েকদিন পুর্বেই জেনেছিলাম তুমি সিঙ্গাপুর যাচ্ছ। কিন্তু আমার সাথেই যাবে বা এভাবে দেখা হবে ভাবতে পারিনি। আমি আন্তরিক ভাবে দু:খিত যে, তোমার যাত্রা পথে আমার মুখোমুখি হতে হল তোমায়। লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে নিপা। চল্লিশ মিনিটের রাস্তা যেন চল্লিশ বছরের হয়ে দাড়িয়েছে তার। এখন কি করবে সে শান্তর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে, নাকি চুপ থেকে সময় হলে নেমে যাবে? নাকি স্বাভাবিক ভাবে কথা চালিয়ে যাবে। কোনটাই সাহসে কুলায় না তার। তাছাড়া কোনটিই করার নাই তার। কারণ সে অবস্থা এখন আর নাই। চুরান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে সে। শান্তকে দেখে যাই বলুক তা কোনদিন গ্রহণ যোগ্য হবেনা এটাই স্বাভাবিক। বেশি কিছু বলতে গেলে বেশি পরিমাণ অপমানিত হবে সে। নিপার ফটফটে ফর্সা চেহারা যেন কালো বর্ণ ধারন করেছে। যাত্রা পথে এমন পরিস্থিতি হবে শান্ত ও নিপা কেউ ই ভাবতে পারেনি। নিপা এখন যদি ফিরে আসে তাহলে শান্ত যদি মনে করে যে, তার কৃতিত্বের জন্য নিপা আবার আসতে চায়। তাই সে এদিকে ফিরতে লজ্জা বোধ করছে। অন্য দিকে কাজল এর কাছে গেলেও যে, সে নিরাপদ থাকবে সেটাও নিশ্চিত নয়। তাহলে নিপা যা করছে এবং করতে চলেছে সবই ভুল? এর কি কোন প্রতিকার নেই? অনেক ভেবে একটা বুদ্ধি বের করল নিপা। শান্তকে যে ভালবাসে এবং ভালবাসবে তার একটা পরীক্ষা দিয়ে দেবে। কিন্তু এখন তো সে সময় নয়। কোন ভাবেই শান্তকে আর বোঝানো সম্ভব নয়। সে নিপার আশা ছেড়ে দিয়েছে। তাছাড়া শান্তর এখন অনেক কাজ। এসব ভেবে সময় নষ্ট করার মত কোন সময়ই নেই তার। এমন স্বভাব কাদের, যারা স্বার্থপর বা চরিত্রহীনা। এমনটা ভাবতেও শান্ত দ্বিধা করছেনা। কতটা কষ্ট পেলে নিজের ভালবাসার মানুষকে চরিত্রহীনা বলা যায়? শান্ত নিজের কর্ম ব্যস্ততায় সময় কাটিয়ে দেয়। একাকি থাকলেই এসব ভাবনা তাড়া করে তাকে। তাই শান্ত চায় একা থাকতে এবং নিজেকে সারাক্ষণ কর্তব্য কাজে ব্যস্ত রাখতে। আর মাত্র কয়েক মনিটের মধ্যে প্লেনটি সিঙ্গাপুর বন্দরে ল্যান্ড করবে। কোথায় কার কাছে যাবে জিজ্ঞাসা করল শান্ত। নিপা ঘুরতে যাচ্ছে বলে থেমে গেল। কিন্তু কার সাথে তা বললনা। কেউ কারো দিকে দৃষ্টি দিতে পারছেনা। কেউ এটা মেনে নিতেও পারছেনা। কিভাবে মানবে দু’জন তো দু’রকম ভাবে ভেবেছিল যার ফলে বর্তমান অবস্থার সৃষ্টি। সততার দাপট চিরস্থায়ী যা বাংলা প্রবাদে আছে। তাই শান্ত এখনো শক্ত কিছু কথা বলতে পারল। কিন্তু সে কিছুই বলতে পারেনি। প্লেনটি সিঙ্গাপুর বিমান বন্দরে ল্যান্ড করল। শান্তকে রিসিভ করার জন্য সে দেশের অনেক বড় কয়েকজন অফিসার একটি জিপ গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছে। শান্ত নামল সাথে নিপাও নামল। নিপা নামার পরে দেখতে পেল শান্তকে কারা রিসিভ করতে অপেক্ষা করছে। নেমে একটু হাটতে হবে গাড়ীতে ওঠার জন্য। নিপাকে নেওয়ার জন্য একটু দুরেই দাড়িয়ে আছে কাজল আর সাথে তিনটি মেয়ে। মেয়ে তিনটি আধুনীক সভ্যতাকে ছেড়ে যায় এমন পোশাক পরেছে। নিপা দুর থেকেই দেখে নিশ্চিত হল যে, মেয়ে তিনটি তার সব সময় পাশে থাকার মত। সন্দেহ যা ছিল এক বিন্দুও কম হয়নি। তবু নিপা কাজলের কাছে অগ্রসর হল। কাজল নিপাকে দেখেই বুকে জড়িয়ে নিতে চাইল। কিন্তু নিপা তার হাত থেকে ছুটে দৌড়ে পালাতে লাগল তাও আবার শান্তর পাশ দিয়েই। শান্ত দেখে পেছন পেছন কিছুদুর গেল কিন্তু খুঁজে পেলনা। শান্ত আর অতটা গুরুত্ব দিলনা আর গুরুত্ব দিয়েও তো লাভ নাই কারন সে তো নিপার পেছনে পেছনে যেতে পারবেনা। এতটা সময় তো শান্তর হাতে নাই। শান্ত কিছুটা বুঝতে পারল যে, সে যেমনটা চেয়েছিল কাজল তেমন নয়। তাই নিপা দৌড়ে পালাচ্ছে। নিপা কাজলের হাত থেকে ছুটে পালাল এই ভেবে যে, কাজল নিশ্চয়ই কোন ভাল মানুষ বা ভাল ব্যবসায়ী নয়। তার সাথে থাকা তিনটি মেয়েই যেন আছে তার মনরঞ্জনের জন্য। কি ভুল করল সে? এবার কি করবে? পালিয়ে যাওয়া ছাড়া তো কিছুই করার নেই তার। কাছাকাছি যদিও শান্ত ছিল তবু কোন মুখে শান্তর সামনে গিয়ে দাড়াবে? নিজের বিবেক নিজেকেই দংষন করছে। তাই সে শান্তর কাছে যাবেনা। আবেগ মন থেকে সরে গেলে বাস্তবতা বুঝা যায়। আবেগের বসে নিপা যে, চরম ভুল করেছে নিজে নিজেই তা বুঝতে পারছে। এখন কি উপায়? কাজল হয়ত তাকে দিয়ে পতিতালয়ের কাজ চালাতে চেয়েছিল। যা নিপা এখনো বুঝতে পারেনাই। নিপা আর দেশে ফিরবেনা এবং শান্তকেও তার মুখ দেখাবেনা। তাই শান্তর সামনে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল সে। এদিকে শান্তর গাড়ী অপেক্ষা করছে তার জন্যে। তাই আর বেশি সময় নষ্ট না করে চলে গেল। শান্তকে তারা সে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ন স্থানসমূহ দেখিয়ে নিল। এবং ভাল ভাল হোটেল দেখালো। শান্তর ট্রেনিং ১০ দিন। কিন্তু তার ৫ দিনই সরকারী সপ্তর গুলো পরিদর্শন করা। বাঁকি ৫ দিন শিক্ষকতার উপর প্রশিক্ষণ। এখানে শিক্ষাখাতকে কিভাবে উন্নত করা যায়। কোন কোন বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হয় এবং শিক্ষার মান কি ভাবে উন্নয়ন করা যায় এনিয়ে ছিল কর্মশালা। কর্মশালা শেষের দিকে বাড়ী ফেরার পালা। সম্পদের লোভে নিপা দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে চেয়েছিল। কিন্তু সে আশাতেও গুড়ে বালি। নিপাকে শান্ত প্লেনের ভেতর থেকে একটা কথা বলেছিল যে, এটা যেন তোমার সাথে আমার শেষ দেখা না হয়। কাজল রইল নিপার প্রতিক্ষায় আর নিপা চলল অজানা গন্তব্যে। যার ঠিকানা আর কারো জানা নাই। নিপা যেখানেই যায় মানুষ তার সুযোগ নিতে চায়। কোথাও গিয়ে যেন তার ঠাঁই নাই। এভাবে নয়টি দিন রাস্তায় রাস্তায় কাটিয়ে দিল নিপা। আর বাঁচার আশা নাই তার। যার জন্য বাঁচবে তাকে তো সে আগেই দুরে ঠেলে দিয়েছে। নিপা জানতো যে, দশ দিন পর শান্ত দেশে ফিরবে। আমার তো দেখার কেউ নাই যদি কেউ থাকে সে হল শান্ত। শান্ত যদি তার মৃত দেহ দেখে ক্ষমা করতে পারে তবু যেন তার শান্তি। ক্ষমার অযোগ্য ভুলই নিপা করেছে। কিন্তু শান্তকে তো সে ভাল ভাবেই চিনত যে, সে কাছে গিয়ে হাসি মুখে কথা বললেই সব মাফ হয়ে যেত। তবু কি সে এটা ঠিক করল? শান্তর নামে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিল। এই আশায় যে, পারলে যেন শান্ত তাকে ক্ষমা করে দেয়। জীবিত থেকে তো আর তার সামনে যাওয়ার মুখ নাই। তাই যেন সে নিজেকে শেষ করে শান্তর সামনে উপস্থাপন করে দেখাল যে, সে যে ভুল করেছিল তার প্রাশ্চিত্ত করেছে। এটাও ছিল হয়ত তার আরেকটা ভুল সিদ্ধান্ত। দশ দিনের ট্রেনিং শেষ করে যখন শান্ত দেশে ফিরছিল, হঠাৎ বাস স্টেশনের দিকে অনেক মানুষের ভির। শান্ত দেখতে এগিয়ে যেতেই অনেকে বলল ওখানে একটা বাংলাদেশী মেয়ের লাশ নিয়ে সবাই ভির করছে। কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখতেই শান্তর বুকের মাঝে যেন বজ্রপাত হয়ে গেল। দেখল নিপার লাশ। শান্তর বুকের পাজর যেন খুলে যাচ্ছে। একি দেখছে সে। একজন মানুষ কতটা কষ্ট সইতে পারে। যদিও নিপা তাকে ভুল বুঝে সরে গিয়েছিল কিন্তু ভালবাসা কাউকেই ঠকাতে পারেনা। তেমনি পারেনি শান্তকে। নিপার এমন ঘটনায় মর্মহত সে। মনে হচ্ছিল যেন আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পরেছে তার। এমনটা না করলেই হতনা। কেন এতটা কষ্ট দিতে সে এখানে এসেছিল। বারবার তাকে বুঝিয়েছিলাম যে, অধিক কিছু আশা করাই ভুল। কিন্তু কোনদিন তা মাননি। এখন তোমার সব আশার অবসান হল। মাঝখানে আমাকে কষ্ট দিয়ে গেলে। এটাই যেন শান্তর মনের প্রথম কষ্ট যে, তাকে সহজে বোঝানো হয়েছে কিন্তু সে বিষয়গুলি অনেক জটিল করে ফেলত। এখন শান্ত ফিরে ঠিকভাবে চলতে পারবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। নিপা জানতো যে, আজই শান্ত দেশে ফিরবে। তাই কিছুক্ষণ পূর্বে গাড়ীর তলে মাথা দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। যা স্থানীয় প্রত্যাক্ষ দর্শিরা জানায়। এভাবেই সবাইকে ছেড়ে চলে গেল সে এবং শেষ দেখার জন্য শান্তর পথ আগলে রইল। যাতে শেষ দেখাটাও ভুল না হয় শান্তর। কাউকেই আর দেখতে দিলনা তার এ অপরাধী মুখ। চলে গেল শেষ দেখা দিয়ে আর ফিরে না আসার দেশে।


নির্বাক শান্ত কষ্টের তিব্রতায় কথা গুলি মনে মনে বলে।

লোভী জনে সদা পাওয়ার চেয়ে-
হারায় বেশি ধন,
মানিকে মানিক চেনে রতনে রতন।
বুঝলেনা তুমি কত ভাল আমি
খুঁজেই চলছিলে মরিচিকা তুমি।
সব খুঁজা খুঁজির অবসান করে
ফিরলেনা তুমি আর,
লোভে পাপ আর পাপেই মরন
বুঝিয়েছি শতবার।
শেষ দেখাটাও এমন হবে
বুঝতে পারিনি আমি।
অভিমান করে কেন চলে গেলে
আমায় ছেড়ে হে তুমি।
এই বার যদি আবার তুমি
আসতে পারতে ফিরে
কত কথা আর কত যে গল্প
শুনতে তোমায় ঘিরে।
শেষ কথা হলো যেই চলে গেল
ক্ষতিটা হলো তার।
থাকল যারা পারবে তারা
নতুন কিছু করতে আবিস্কার।
জানলে এ কথা মানতে হেথা
মরতে হতনা বুকে নিয়ে ব্যথা,
তোমার সাথে আজও হতনা
এই ভাবে শেষ দেখা।


উৎসর্গঃ
মো: আরিফুজ্জামান সেলিম
বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
আর্টিসান হোমস্ লি:

আর্টিসান
এবং
আমার শ্রদ্ধেয় বাবা মায়ের নামে।

তরুন এই লেখকের লেখুনীতে সমাজের আসল চিত্রটাকে এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যেন, প্রতিটি ঘটনাই জীবন্ত এবং নিত্য দিনের সঙ্গি। ভালবাসার নামে যে কার্যাদী পরিচালনা হয় তারও একটা জলন্ত উদাহরণ দিয়েছেন। মানুষের মমত্ব বোধ দিনদিন যেভাবে হ্রাস পাচ্ছে তার এবং কৃতজ্ঞতা বোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মানুষের জীবনে কি কি ভুল সচরাচর হয়ে থাকে তার বাস্তব চিত্র ও একটি স্বার্থপর প্রেমিকার শেষ পরিনতি সফল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। লেখক যা বোঝাতে চেয়েছে আসল মর্মার্থ যদি বুঝি তাহলে কিন্তু আমাদের সমাজের বিশৃংখলার অবসান ঘটানো খুবই সহজ। অন্যায় প্রবনতাও কমানো সম্ভব। তাছাড়া বর্তমানের যুবক যুবতীরা যে ভাবে প্রেমের খেলায় মেতে উঠেছে তাদেরকেও “শেষ দেখার” নিপার মত না হওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন। ভালবাসার কড়াল গ্রাসে বিলিন হয়ে যাচ্ছে কত প্রাণ সেটাও প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। সর্বপরি লেখকের লেখার মাঝে দেশ, সমাজ ও জাতীকে বিভ্রান্তকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করার কিছু কলা কৌশল অন্তর্ভক্ত করেছেন। সুযোগ পেলে লেখক তার হৃদয়ের সব কথাই প্রকাশ করে দেবেন পাঠকদের মাঝে। ছোট্ট পরিসরে লেখক উপন্যাসটি রচনা করেছেন পাঠকদের অবশ্যই ভাল লাগবে বলে আমি মনে করি। আমার দৃষ্টিতে বর্তমান যুগের এটাই প্রথম একটি ব্যতিক্রমী পরিবেশনা।

ভূমিকা

তরুন এই লেখকের লেখুনীতে সমাজের আসল চিত্রটাকে এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যেন, প্রতিটি ঘটনাই জীবন্ত এবং নিত্য দিনের সঙ্গি। ভালবাসার নামে যে কার্যাদী পরিচালনা হয় তারও একটা জলন্ত উদাহরণ দিয়েছেন। মানুষের মমত্ব বোধ দিনদিন যেভাবে হ্রাস পাচ্ছে তার এবং কৃতজ্ঞতা বোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মানুষের জীবনে কি কি ভুল সচরাচর হয়ে থাকে তার বাস্তব চিত্র ও একটি স্বার্থপর প্রেমিকার শেষ পরিনতি সফল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। লেখক যা বোঝাতে চেয়েছে আসল মর্মার্থ যদি বুঝি তাহলে কিন্তু আমাদের সমাজের বিশৃংখলার অবসান ঘটানো খুবই সহজ। অন্যায় প্রবনতাও কমানো সম্ভব। তাছাড়া বর্তমানের যুবক যুবতীরা যে ভাবে প্রেমের খেলায় মেতে উঠেছে তাদেরকেও “শেষ দেখার” নিপার মত না হওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন। ভালবাসার কড়াল গ্রাসে বিলিন হয়ে যাচ্ছে কত প্রাণ সেটাও প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। সর্বপরি লেখকের লেখার মাঝে দেশ, সমাজ ও জাতীকে বিভ্রান্তকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করার কিছু কলা কৌশল অন্তর্ভক্ত করেছেন। সুযোগ পেলে লেখক তার হৃদয়ের সব কথাই প্রকাশ করে দেবেন পাঠকদের মাঝে। ছোট্ট পরিসরে লেখক উপন্যাসটি রচনা করেছেন পাঠকদের অবশ্যই ভাল লাগবে বলে আমি মনে করি। আমার দৃষ্টিতে বর্তমান যুগের এটাই প্রথম একটি ব্যতিক্রমী পরিবেশনা।

উৎসর্গ

মো: আরিফুজ্জামান সেলিম
বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
আর্টিসান হোমস্ লি:

আর্টিসান
এবং
আমার শ্রদ্ধেয় বাবা মায়ের নামে।