ভুলি নি তো- সবই আছে, স্মৃতিপটে আঁকা।
পুতুল বিয়ের দিনগুলো সব, ছিলো আদর মাখা।
আমার বাড়ির ছেলে পুতুল, তোমার বাড়ির মেয়ে।
বিয়ে দিয়ে তুমি আমি, দাওয়াত খেতাম গিয়ে।


বৈশাখ মাসের হালখাতাটা, ছিলো আরেক ঈদ।
বাজি ধরে মিষ্টি খাওয়ায়, হতো আমার জিত।
দাওয়াত পেতো জামাই ঝি'রা, সে যে খুশির দিন।
লেনদেনটা হয়ে যেতো, যার যা আছে ঋণ।


জ্যৈষ্ঠ নামী মধু মাসটা, আম কাঁঠালের সময়।
আম দুধ খেতে টাকা পয়সা, আগে থেকেই জমায়।


আষাঢ় মাসে নদী ছুটে, ডুবলে চাষের জমি।
গ্রামের সবাই বেকার হওয়ায়, আড্ডা জমতো দামী।
ঘরে বসেই জাল বুননের, পরে যেতো ধুম।
ক'দিন পরই শুরু হবে, মাছ ধরার মৌসুম।
গ্রামের সকল ছেলে বুড়ো, তখন আমরা জেলে!
কত ভাবে কত মাছই, ধরতাম খালে বিলে!


শ্রাবণ মাসে অঝর ধারায়, বৃষ্টি নামার কালে।
মহিলারা কাঁথা সেলায়, ফুলের নকশা তুলে।
সেলাই চলতো সারাদিনই, কাঁথার রাজ্য জুড়ে।
হাসি তামশা হতো অনেক, গল্প কথার সুরে।


ভাদ্র মাসের ১৩ তারিখে, তালের পিঠা খাওয়া।
কৃষিকাজে কোনটা কখন, সঠিক তাল'টা পাওয়া!
তালের পিঠায় তাল'টা শিখায়, আজব খবর শুনো!
তাল না খেলে বেতাল হবে, কৃষক ভাইরা জেনো!


আশ্বিণ মাসে গাস্সি খাওয়া, সেটা মজার মাস!
মাসের শেষ দিন জমতো রাতে, আনন্দ উল্লাস।
হলুদ বাটা সরষে বাটা, সাথে অনেক ফল।
কুলায় রেখে বাইরে দিতাম, পেতে শৈত্য জল।
সাথে থাকতো ড্যাবের লতা, আরও ধানের থোর।
জোগাড় করতে সেই রাতে সব, হয়ে যেতাম চোর!


কার্তিক মাসের প্রথম তারিখ, সকাল ভোরে উঠে।
ছেলেমেয়ে সবাই মিলে, নাইতে যেতাম ঘাঁটে।
বাটা হলুদ সরষে দিয়ে, সাঁতরে গোসল সেরে।
ড্যাবের লতায় চুল পিটাতো, মেয়েরা চুল ছেড়ে।
লতার মতো লম্বা হবে, নিজের মাথার চুল।
সেই আশাতে চুল পিটাতে, করতো না কেউ ভুল!
এর পরেতে রান্নাবান্না, সবাই মিলে খানা।
চড়ুইভাতির আনন্দটা, সে তো সবার জানা!


অগ্রহায়ণে নতুন ধানের, নবান্ন উৎসব।
নতুন ধানের পিঠা খেতে, চলতো কলরব।
নতুন ধানের নতুন ভাতে, নতুন সে এক ঘ্রাণ।
খেয়ে যেনো পেতাম ফিরে, আমরা নতুন প্রাণ।


পৌষ মাসের ১৫ তারিখ, পুশুরাটাও হতো!
সেটা ছিলো পৌষমেলা, মজা ছিলো কত!
ষাড়ের লড়াই মোরগ লড়াই, এই মেলারই খেলা।
পৌষ মেলার আয়োজনে, করতো না কেউ হেলা।


মাঘের শীতে বাঘে কান্দে, মাঘ মাসটা এলে।
তাপটা নিতাম উঠোন মাঝে, খড়ের আগুন জ্বেলে।


ফাল্গুন মাসে মশাল নিয়ে, ভুলা দৌড়ায় ক্ষেতে।
এই কান্ডটা করা হতো, বৃষ্টি বাদল পেতে।
ছেলে বুড়ো সবাই মিলে, ভুলা দৌড়ের পরে।
খানাদানার পর্ব ছিলো, পিকনিকের আকারে।


চৈত্র মাসের চরম খরায়, বৃষ্টি নামার গান।
মজা করে গাইতাম সবে, হইতো অনেক 'ফান'!
বাড়ি বাড়ি উঠান মাঝে, কলের পানি ঢেলে।
নাচানাচি করতে গিয়ে, কাঁদায় টানতো ফেলে!
কয়েক জনে নিতো আবার, চাল ডাল টাকা তুলে।
আসল ছিলো চড়ুইভাতি, এসব কিছুর মূলে।
চৈত্র মাসেই পাচই খেতাম, অমৃত সে স্বাদ।
অঙ্কুরিত ধানের থেকে, তৈরি পাচই ভাত।
ধুয়া গানের তালে চলতো, মাগন কামলার কাজ।
জীবন বড় মধুর ছিলো, হারিয়ে গেছে আজ!
মানসপটে ভেসে বেড়ায়, সেসব মধুর স্মৃতি।
অস্ফুট স্বরে বলে উঠি, হারানো সব গীতি।
®
[স্বরবৃত্তঃ ৪+৪+৪+১/২]
২১/১০/২০১৭
দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি।