ভালোবাসা কঠিন তরল বায়বীয় পদার্থ? আদৌ পদার্থ কি ? তা উপলব্ধির প্রয়োজন আসেনি কখনো । একাকীত্বের খোলসে জবুথুবু হয়ে চলে গেছে অন্তসার দুইদশ পাঁচটি টগবগে বসন্ত ! ডেকে উঠেনি একটি বার ও কু- উ- উ সুরে ভালবাসার কলকন্ঠ ? ভালো লাগার, ভালোবাসার মিষ্টি আবেশে ! তাইতো না জানিয়েই অগোচরে অভিমানে কালের পেটে বিলিন হলো পচিঁশটি স্বর্ণ যৌবন! নিঃসঙ্গতা এখন বড্ড ঝামেলা করে, চলার পথ রুদ্ধ করে। ‘একা- একাই যে কী ভয়াবহ! ওর নাম শুনলেই চোখ ও শরীরে ঘাম ধরে ! ভয় দেখায় - একাকী চলা যাবে না! তোমাকে দেখার পর থেকেই আমার সব কিছুতে এমন জগাখিচুড়ি !


বন্ধুদের উল্লাস মুখর আনন্দ আড্ডা, সাহিত্যের নাঁড়ি ধরে টানা হেঁচড়া - সব তুচ্ছ- উপক্ষা করে আজো আমি ছুটে যাই ‘বাস স্ট্যান্ডে’, সেই বাস স্ট্যান্ডে’- যেখানে তোমাকে দেখেছিলাম,দেখেছিলাম অকুল পাথার জলরাশিতে একটি জীবন প্রদীপ ! প্রথম বার । তারপর ---- প্রজাপতির শত রংয়ের বসনে জড়ানো তুমি- ‘বনলতা’ কি (ট্রয়নগরীর) ‘হেলেন’ কত উপমা এসেছে মনে , কোনটাই খাটেনি ! তোমার যোগ্যতার মানদন্ডে । তোমার যোগ্য তুলনা যেন তোমাতে !


তুমি আস ত্রিচক্র যানে । তারপর ব্যতিব্যস্ত হয়ে হারিয়ে যাও দূরন্ত, রাইডার কখনও বা সিটি সার্ভিস শতাব্দীর গর্ভে । নিষ্ঠুর যান যেন তোমাকে পেয়ে জান ফিরে পায় । অমনি হাওয়ার তালে ছুটে-----


আমার মনের ক্যানভাসে থাকে তোমার শৈল্পিক উপস্থিতি । সেখান থেকে তোমাকে কেউ নিতে পারে না , তুমি সেখান থেকে কোথাও যেতে পারো না, হারাতে পারো না ! ভালোবাসার সুরমা হয়ে লেপটে থাকো আমার দু ’চোখে। সেই আবেশে কখন যে নয়টা গড়িয়ে ঘড়ির কাঁটা ডায়াফ্রেমের বক্রাকার সিঁড়ি ঢিঙ্গে, হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিকাল পাঁচটায় আসে ।
শতাব্দীর বদ হজমী পেট থেকে বের হয়ে আসো তুমি । গ্রীষ্মের নেতিয়ে পড়া তপ্ত গোলাপের মত । অপেক্ষাকৃত ধীর লয়ে ত্রিচক্র যানে চড়ো আবার । আমি দৈনন্দিনের মত নির্বাক ! অগাধ তৃষ্ণ নিয়ে চেয়ে থাকি তোমার গমন দিকে ।যেন কিছুই বলার নেই আমার ! অথচ হাজারো কথার গুঁড়ি বৃষ্টি চোখ মুখে ! ডেফোডিল ফুলের স্থায়িত্ব নিয়ে তোমার স্বশরীর উপস্থিতি আমার সামনে এভাবে শেষ হয় ! চোখের আড়াল হলেই হৃদয়ের ক্যানভাসে তোমাকে ধারণ করে বাড়ি ফেরা হয় ........।


এভাবে প্রত্যহ তোমাকে চেয়ে চেয়ে, বুকে লালন করে দিনাতিপাত আমার । বেকারত্বের দুঃসহ জীবনকে আর অভিশাপ মনে হয় না এখন । যেখানে একটি কর্মের সন্ধানে হন্য হয়ে ছুটাছুটি, শত জোড়া জুতার তলানি ক্ষয় করতাম । দৈনিক পত্রিকার পোষ্টমর্টেম করতাম- একটি কর্মের বিজ্ঞাপন - বিজ্ঞপ্তীর জন্যে । আজ সেই অস্থির মনের শত প্রার্থনা- পত্রিকায় কোন চাকুরির খবর না আসে যেন । কোন কর্ম চাই না আজ ! আমার যে কর্মসংস্থান হয়েছে ! যেখানে ইন্টারভিউ নামক কোন প্রহসনের ও প্রয়োজন পড়েনি মোটেই !


তোমাকে রোজ সকাল- বিকাল দু ’বেলা দেখাই এখন আমার জীবনের বড় কর্ম । এর চেয়ে বড় কর্মের প্রয়োজন, সেটান মনের মাঝে আসবে সে সময় কই? আমার যে অহরাত্রির তপস্যা কেবল তুমি- তোমার মঙ্গল চিন্তা ।


অথচ তুমি জানলে ও না -এক প্রেম কাতর যুবকের ভালোবাসা মাখা দু ’ টি হাত কত ছলে তোমাকে হাতছানি দিয়ে যায়, কত কথা বলতে ব্যাকুল দু’ টি ছল ছল চোখ ঈশারায় ! কত চাওয়া হাহাকার করে একটি বুকে, কত ফুল ফুটে রোজ একটি হৃদয় কাননে- তোমাকে পুষ্পমাল্যে বরণ করবে বলে, কত চিঠি লেখা হয় বিনিদ্র রজনী- আকাশ বাতাস, গ্রহ- তারাকে স্বাক্ষী করে - তোমাকে পড়াবে বলে । কত কবিতা করে একটি প্রেমিক কবি মন- তুমি শুনবে বলে । রোজ কত হাজার আয়োজন থাকে যুবকটির- কেবল তোমাকে ঘিরে । কর্ণফুলীর কত জল গড়ায় যুবকের প্রেম তপস্যা দেখে দেখে---। কত হিসেবি দিন যাপন তার কেবল তোমাকে ভিত্তি করে । ক়়েলান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার তুলতুলে নরম হাতে হাত রেখে, জীবনের বাকি দিনগুলো সীমিত আয়ের ঐশ্বর্যে কাটিয়ে দেয়ার প্রত্যাশায়- নিত্য কত ভাব ও ঢঙ্গে হৃদয়ে কল্পনার তুলীতে তোমার প্রতীমা গড়ে- তুমি কখনো জাননি সে সব- জানার প্রয়োজনটি ও বোধ করোনি কখনো ।সে জন্য তোমাকে দোষী কই ? এই বিশ্বাস নিয়েই তো বেঁচে আছি- একদিন জানবে,কাছে ডাকবে,মিষ্টি করে কোন বসন্তে কুহু সুরে ডেকে বলবে- ‘এ্যাই তুমি-ই তো, চলো ।’ আমি সে ডাকের প্রতিক্ষায় থাকবো । হয়তো- আজীবন !


পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।