বাংলাদেশ
বয়স মাত্র ৪৮ বছর, পাঁচ মাস।
বাংলাদেশ
মাত্র পাঁচটি অক্ষরে লিখা।
তবে তার পিছনে,
লুকিয়ে আছে কোটি কোটি অক্ষরে সাজানো গল্প,
লুকিয়ে আছে লক্ষাধিক শব্দ।
আরো লুকিয়ে আছে , শত শহীদের রক্ত।


আরো আছে!
হাজারো মানুষের চিৎকার,
আছে শত নারীর হাহাকার,
আছে আগুনে পুঁড়ে যাওয়া, হাজারো কুঁড়েঘর।
গর্ভধারিণী মায়ের গর্ভের,
ভিতর শহীদ হয়েছে শতাধিক শিশু,
শহীদ হয়েছে মুক্তি সংগ্রামী পথশিশু।


১৯৪৭,
ইংরেজ শাসনের হাত থেকে পেলে রক্ষা
পাকিস্তান রাষ্ট্র নিলো দীক্ষা।
ঘনিয়ে এলো আরো এক
ভারী কালো মেঘ
পাকিস্তান তাও আবার ভেদাভেদ,
পূর্ব-পশ্চিম নামে পরিচিত
ও আমার পাকিস্তান রাষ্ট্র।


শোষণ-নির্যাতন ছিল না কমতি কিছুতে,
গোলা ভরা ধান
নদীনালা খালবিলে মাছ সাজে।
অর্থসব করেছে আত্মসাৎ
পশ্চিম পাকিস্তান সরকার সর্বনাশ।
পূর্ব বাংলার মানুষ চেয়েছিল শিক্ষা
সম্মান নিয়ে বাঁচবে তারা,
স্বপ্ন সবই পায়ে করলো পিষ্ট
পশ্চিম পাকিস্তান রাষ্ট্র।
কতো মা কেঁদেছে হাত পা ছুঁড়ে
ছেলে হারা হয়ে।
বাংলা আমার মায়ের ভাষা
বাংলা আমার মধুর ভাষা।
কেড়ে নিতে চেয়েছিল সেই বাংলাকে
উর্দুর রাক্ষস পাক রাজারা।


১৯৫২,
রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত
আরো নাম না জানা ১৭ যুবক,
প্রাণ দিল ঠেলে
ভাষার মান রক্ষার্থে
রক্তে লাল রাজপথ,
তবে এখানেই কি শেষ শপথ ?
আরো ভোর এলো
এল অত্যাচারীর অত্যাচার
ধ্বংসপ্রায় পূর্ব বাংলা
মুক্তি চায়, মুক্তি চায়।
পেলাম এক বজ্রকণ্ঠী
সকলের বন্ধু বাংলার বন্ধু
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বহু ঘৃণা ও জ্বালা বুকে নিয়ে
মুষ্টি করেছে শক্ত,
দিয়েছে আশার আলো
একদিন উঠবে সূর্য আমাদেরই।
হাজারো আঘাত করেছে সহ্য
আমাদের নেতা মুক্তি সংগ্রামী
খেয়েছে জেলে ভাত
কেটেছে অর্ধবছর বন্দীশালায়
তবুও দেখিয়েছে মুক্তির আলো
ক্ষণে ক্ষণে গেল বহু বছর
পঁচন ধরেছে চামড়ায়।


১৯৬৬,
বঙ্গবন্ধু মুক্তিসংগ্রামে
লাহোরের উত্থাপন করে
ছয় দফা দাবি
উদ্দেশ্য ছিল যার
বাঙালির স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা।
তবে পাক সরকার মানতে চাইছিল না
দাবি আমাদের ছয় খানা।
যুক্তরাষ্ট্রীয় ও সংসদীয়
পদ্ধতির সরকার গঠন,
অভ্যন্তরীণ কোনো ক্ষেত্রে
হস্তক্ষেপ থাকবে না তার।
সমগ্র পাকিস্তানের জন্য
থাকবে দুটি পৃথক মুদ্রা।
থাকবে আলাদা হিসাব খাতা
বৈদেশিক বাণিজ্য মেলার।
থাকবে আরো স্বল্প আবদার
কর নির্ধারণের
স্বাধীনতা থাকা দরকার।
আরো দরকার ছিল
দেশে আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন করা।
ক্ষিপ্ত হয় পাকিস্তানি সরকার
গ্রেফতার করে বঙ্গবন্ধুকে
ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্রময় আগরতলা মামলায়।
এতে বাঙালি আরো
হয়ে উঠে আন্দোলনমুখর,
বাঙালির স্বাধীনতার মুক্তিসংগ্রামে
ছয় দফা নিয়ে আসে নতুন মোড়,
যার ফলশ্রুতি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান।
একে একে গেল ঊনসত্তর
গেল সত্তরের নির্বাচন,
জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ
ক্ষমতা হস্তান্তরে বিভ্রান্ত।


চলে এলো ১৯৭১,
ঐতিহাসিক সেই নয় মাস।
পঁচিশে মার্চের রাত্রে
ঘনিয়ে আসে কালো মেঘ
ঘুমের মধ্যে গেলো প্রাণ শত বাঙালির।
ছাত্র-শিক্ষক শ্রমজীবী রেহাই পেল না কেউ,
রক্তে রঞ্জিত বাংলার রাজপথ
কাল রাত্রী নামে পরিচিত।
তারই পূর্বে এসেছিল সাতই মার্চ
বজ্রকন্ঠে দিল ঘোষণা
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার,
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
নিরস্ত্র বাঙালি ছিল তাদের
লাঠি-দাঁ-কোঁদাল-কাস্তে
সব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরলো
মুক্তি সংগ্রামে।
দীর্ঘ নয় মাস,
হাজারো আত্মত্যাগের বিনিময়ে
হাজারো নারীর কলঙ্কের বিনিময়ে,
হাজারো মায়ের বুক খালি করে
আকাশে শুধু লাশের গন্ধের বিনিময়ে,
পেয়েছি মুক্তি আমরা অবশেষে
ডিসেম্বর মাসে।